‘কঠিন ও আক্রমণাত্মক ভাষায় কৈফিয়ত তলবে অপমানিত বোধ করছি’
কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমি ২২ বছর ধরে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছি। দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে একজন যুগ্ম মহাসচিব এমন কঠিন ও আক্রমণাত্মক ভাষায় কৈফিয়ত তলব করায় অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি।
মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বরাবর আমি বিএনপিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছি। জেল থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার। আমি সেটিও করেছি। কিন্তু তারাই আমার বিরুদ্ধে বলেন আমি সংস্কারপন্থি, আমি ভাঙার পক্ষে। এর চাইতে দুঃখজনক-লজ্জাজনক কিছু হতে পারে না।
আজ শনিবার রাজধানীতে নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আত্মপক্ষ সমর্থন করে সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন মেজর হাফিজ। এ সময় তিনি ২০২১ সালের মধ্যে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করাসহ চারটি সুপারিশ করেন।
দলীয় মানববন্ধনে অংশ না নেওয়া, বরিশালে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়া, বিএনপির সর্বোচ্চ স্তরের নেতাদের নিয়ে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়াসহ ১১টি অভিযোগ এনে সম্প্রতি মেজর হাফিজকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএনপি। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দেওয়া ওই শোকজ চিঠির বিষয়েও কথা বলেন মেজর (অব) হাফিজ। তিনি বলেন, ‘আমার নামের ভুলসহ নানা ভুল নিয়ে আক্রমণাত্মক ভাষায় যে চিঠি রুহুল কবির রিজভী আমাকে দিয়েছেন আমি তাতে হতবাক। শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করেছেন তিনি।’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করছি না। আমি যে ব্যাখ্যা দিয়েছি, সেটি কিভাবে তারা নেয় তা দেখতে চাই। যদিও ভেবেছিলাম পদত্যাগ করব, আমার সাবেক কলিগ, বন্ধুরা বলেছিলেন পদত্যাগ করতে। কিন্তু আমার যাঁরা নেতাকর্মী, তাঁরা আমাকে অনুরোধ করেছেন যাতে পদত্যাগ না করি। তাঁদের অনুরোধের কারণেই কেবল আমি পদত্যাগ করলাম না।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কারণ দর্শানোর জবাবে দেওয়া চিঠির অনুলিপি জমা দেন।
শোকজের জবাবে যা বললেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ
লিখিত জবাবে মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একজন খেতাবপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিজয়ের মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে অসৌজন্যমূলক ভাষায় কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়ে আমি হতবাক হয়েছি। আমি বিগত ২৯ বছর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপিতে আমার যোগদানের তারিখ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার তারিখ, আমার নামের বানানসহ অনেক ভুলই রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে দৃশ্যমান। বিএনপিতে যোগদানের আগেই আমি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থীরূপে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপিতে যোগদান করেছিলাম।’
লিখিত জবাবে মেজর হাফিজ আরো বলেন, ‘আমি বিগত ২২ বছর ধরে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছি। দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে একজন যুগ্ম মহাসচিব (আদিষ্ট না হয়েও) এমন কঠিন ও আক্রমণাত্মক ভাষায় কৈফিয়ত তলব করায় অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি। এখানে প্রটোকল ও সৌজন্যের ব্যত্যয় ঘটেছে। ব্যক্তি রুহুল কবির রিজভী একজন ভদ্র, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী নেতা, তাঁর সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে, তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি আশা করিনি।’
নিজের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে মেজর হাফিজ বলেন, ‘আমাকে কখনো বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক পদের অফার অসুস্থতার জন্য গ্রহণ করতে পারিনি। আমার বর্তমান বয়স ৭৬ বছর দুই মাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা স্থায়ী কমিটিতে আমার চাইতে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা চারের অধিক হবে না বলেই আমার ধারণা।’
‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদানের আগেই পুলিশ আমাকে ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করে, এ কারণেই বরিশালে যেতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল বর্তমান সরকার। বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ দায়ের করার কথা আমার জানা নেই। এ মামলা ছাড়াও এক ডজন মামলায় আমি ১০ বছর ধরে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।’
জবাবের শেষ দিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘আমার বিনীত অনুরোধ, আমার বক্তব্য স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করা হোক। বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে যদি দোষী সাব্যস্ত করা হয় আমি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত আছি। আমি দলীয় নেতৃত্বের প্রতি সর্বদাই শ্রদ্ধা পোষণ করি।’