‘ইত্যাদি’তে প্রচারিত ‘গরিবের ডাক্তার’ মার্কিন দম্পতির ভিডিও ভাইরাল
ডা: এড্রিক বেকার। একজন মার্কিন নাগরিক। জীবনের বিলাসিতাকে দুপায়ে ঠেলে বাংলাদেশে আসেন সাধারণ মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গ করতে। তিনি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কালিয়াকৈর গ্রামের দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসার জন্য তৈরি করেন হাসপাতাল। আর সেখানেই দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে দিয়ে গেছেন চিকিৎসা সেবা।
অজপাড়াগাঁয়ে নিজ হাতে গড়া হাসপাতালেই বেকার ২০১৫ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সে সময় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার কথা বললেও তিনি রাজি হননি। মৃত্যুর পর তাঁর ঘরের বারান্দায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে মানুষের সেবায় নিবেদিত ডা. এড্রিককে এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। এদেশের মানুষ হয়েই তিনি ঘুমিয়ে আছেন তাঁর মাটির ঘরের বারান্দায়।
এক সময় বিটিভিতে দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে ডা: বেকারের চিকিৎসা সেবা ও হাসপাতাল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছিল। সেখানে তিনি নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, এই দেশের কোনো মানবতবাদী চিকিৎসক যেন গ্রামে এসে তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের হাল ধরেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, বেকারের সেই আকুতি এদেশের একজন চিকিৎসকও শুনতে পাননি। এরপরও তাঁর দেখানো পথেই চলছিল সেই হাসপাতাল।
ডা: এড্রিক বেকারের সেই ইচ্ছার কথা একসময় পৌঁছে যায় আমেরিকার চিকিৎসক দম্পতি জেসন -মারিন্ডির কাছে। তাঁরা ২০১৮ সালে পুরো পরিবার নিয়ে আমেরিকা ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে আসেন মধুপুরে। জেসন হয়ে উঠেন নতুন ‘ডাক্তার ভাই’ আর মারিন্ডি হয়ে উঠেন ‘ডাক্তার বিবি’। তাঁরা এসে দরিদ্র মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেন। না, তাঁরা দুজনই শুধু আসেননি। তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। ভর্তি করে দিয়েছেন গ্রামেরই স্কুলে। তারা খুব সাবলীলভাবে খেলায় মেতে উঠে গ্রামের শিশুদের সঙ্গে।
আর তাদের এই আত্মত্যাগের বাস্তব গল্প আবার উঠে আসে ইত্যাদিতে। এবার ডা. এড্রিকের জায়গায় জেসন-মারিন্ডি দম্পতির ‘গরিবের ডাক্তার’ হয়ে উঠার কাহিনি উঠে আসে ইত্যাদির প্রতিবেদনে। গতকাল শুক্রবার তাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের পর তা ভাইরাল হয়ে যায়।
এই সময়ে এসে আমরা শহুরে মানুষরা লুঙ্গিকে নেহায়েতই গরিব চাষাদের পোশাক বলে গণ্য করি। কিন্তু উন্নত বিশ্বের আধুনিক মানুষ ডা. জেসন গ্রামের রাস্তায় লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়ান, সহজেই মিশে যান গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের সঙ্গে।
গ্রামে থাকার কারণে তাঁরা তাদের খাদ্যাভাসও পাল্টে নিয়েছেন। এখন তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশি ফলমূল ও সবজি জাতীয় খাবার। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে মিশতে মিশতে শিখে ফেলেছেন বাংলা ভাষা। এখন তাঁরা সুন্দরভাবে বাংলায় কথা বলতে পারেন। শুধু তাঁরা নয়, সন্তানদেরও বাংলা ভাষা শেখাচ্ছেন।
গতকাল প্রচারিত ইত্যাদির মঞ্চে উপস্থিত করা হয় ডা. জেসনকে। সেখানে তিনি এদেশের চিকিৎসকদের গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের সেবায় কাজ করার আহ্বান জানান। তাঁর ভাষায়- মানব সেবাই চিকিৎসকের ধর্ম।
এদিকে প্রতিবেদনটি ভাইরাল হওয়ার পর জেসন-মারিন্ডি দম্পত্তির প্রশংসা করছেন সবাই। এদেশের লাখ লাখ চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু মানবতার সেবায় জীবনের কিঞ্চিৎ সময়টুকু ব্যয় করার মতো মানসিকতা তাদের কারো নেই। সেখানে ভিনদেশি এই চিকিৎসক দম্পতির ত্যাগের গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে।
অনেকে মন্তব্য করেছেন, মার্কিন দম্পতি ডা. জেসন এবং মারিন্ডি সত্যি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন মানবসেবার জন্য শুধু সুন্দর মানসিকতা থাকলেই হয়।