অপরাধী যেই হোক আইনের আওতায় আনা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে। আজ সোমবার রাজধানীর ধানমণ্ডির নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে, সে যেই হোক। সে জনপ্রতিনিধি হোক বা যেই হোক। আইনের মুখোমুখি হতেই হবে।’
গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর ধানমণ্ডির কলাবাগান সিগন্যালের পাশে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদের ওপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা যে বিবরণ পেয়েছি তার একটি জিডি হয়। পরে মামলা হয়েছে, আমরা গাড়িটি জব্দ করেছি। এবং ড্রাইভারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে নৌবাহিনীর কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনার পর ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের চকবাজার এলাকার বাসায় অভিযান চালাচ্ছেন র্যাব সদস্যরা। অভিযানে আছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমসহ র্যাবের বিপুল নারী ও পুরুষ সদস্য।
আজ সোমবার দুপুর থেকে হাজি সেলিমের বাসা ঘিরে রাখেন র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। পরে তাঁরা বাসায় প্রবেশ করেন। বাসা থেকে হাজি সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমকে আটক করা হয়। ইরফান সেলিম গতকাল রাতে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদের ওপর হামলা মামলার প্রধান আসামি। ওই মামলার আসামি হাজি সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ আজ দুপুরে চকবাজারে ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অভিযান চালাচ্ছি। অভিযান এখনো চলছে। মোহাম্মদ ইরফান সেলিমকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। অভিযান শেষে আমরা আপনাদের বিস্তারিত জানাতে পারব।’
এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ নীলক্ষেত থেকে বই কিনে তাঁর স্ত্রীসহ মোটরসাইকেলে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছিলেন। একটি জিপ যার মধ্যে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো ছিল। ওই গাড়িটি পেছন থেকে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে পরিচয় দেন লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ। তিনি ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি জানতে চান। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা লোকজনের সঙ্গে কথাকাটাকাটির এবং হাতাহাতি হয়। পরে উনি আহত হন। এ নিয়ে রাতে জিডি করার পর সকালে তিনি ধানমণ্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন। এটা মূলত মারধরের ঘটনা। মামলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। মামলার এজাহারনামীয় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে ঘটনার স্থান পরিদর্শন করেছি। আমরা এখানে সতর্কতার সঙ্গে সব টেকনোলজি ব্যবহার করে নথি সংগ্রহ করেছি। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামি মিজানকে দ্রুত আদালতে পাঠানো হবে। এ ছাড়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হাজি সেলিমের ছেলে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি যত বড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন, তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ এজাহারে হত্যার হুমকির কথা রয়েছে বলে জানান ডিসি সাজ্জাদ।
এর আগে ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী এনটিভি অনলাইনকে জানান, গতকাল রাতের ঘটনায় আজ সোমবার সকালে একটি মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ১৬। এ মামলার বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ওয়াসিফ আহমেদকে রক্তাক্ত দেখা যায়। ভিডিওতে তাঁকে মারধর করে তাঁর দাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে দাবি করলেও জিডিতে এ কথা উল্লেখ করা হয়নি।