অনলাইনে জুয়া পরিচালনাকারী দুই মাস্টার এজেন্ট গ্রেপ্তার

অনলাইনে জুয়া (বেটিং) পরিচালনাকারী বাংলাদেশের দুই মাস্টার এজেন্টসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গেয়েন্দা বিভাগের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিট সম্প্রতি রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেছে বলে জানানো হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ তিনজনকে রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মালায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১১ লাখ ৮০ টাকা, চারটি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন জিনিস জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু, রানা হামিদ ও মো. সুমন মিয়া। তাদের আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া তরিকুল ইসলাম বাবু, রানা হামিদ এবং সুমন মিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইন বেটিং সাইট থেকে আয় করা টাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি ও সম্পদ কিনেছেন। তারা মূলত মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অবৈধ অর্থের লেনদেন করে থাকেন। তারা দুটি বেটিং ওয়েবসাইটের বাংলাদেশের মাস্টার এজেন্ট। তারা সাইটগুলোর মাস্টার এজেন্ট হিসেবে দেশের বাইরে থাকা সুপার এজেন্টের কাছ থেকে প্রতিটি পিবিইউ (PBU-নিজস্ব ভার্চুয়াল কারেন্সি) ৬০ টাকার বিনিময়ে কিনে থাকেন। পরবর্তীতে লোকাল এজেন্টের কাছে প্রতিটি PBU ১০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে থাকেন।’
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় লোকাল এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। ওই লোকাল এজেন্টে বেটিংয়ে অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে নগদ অর্থের বিনিময়ে প্রতিটি পিবিইউ ১৫০ টাকা নিয়ে বিক্রি করে থাকে। এই কাজে অবৈধ অর্থের আদান-প্রদান মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা হয়। এভাবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অর্থ গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যায়। এরা ভুয়া ফেসবুক আইডি ও বিদেশি নম্বরের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে বেটিং সাইডগুলো পরিচালনা করে ও গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন।’
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে জানিয়ে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘অনলাইন জুয়া, এটা নেশার মতো। এখানে একবার ঢুকলে নিঃস্ব হওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। অংশগ্রহণকারীরা নিঃস্ব হয়ে যাওয়ায় পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে, আইনশৃঙ্খলার উপর প্রভাব পড়ছে।’
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে এ সাইটগুলোর ডোমেইন ব্যবহৃত হয়। বিটিআরসি অনেক সাইট বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে এগুলো পরিচালনা করছেন। আমাদের পুলিশের মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। সবাইকে সামাজিকভাবে আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে।’
অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘যারা এখনও এ অনলাইন জুয়ায় জড়িত আছেন, আপনারা যদি এ খেলা ছেড়ে অন্য পেশায় না আসেন, তাহলে আপনাদের সবার পরিণতি হবে খুব ভয়াবহ।’