১৮ বছর পর মাকে ফিরে পেলেন সন্তানরা
গতকাল পর্যন্ত যাকে পাগলি নামে ডাকা হতো আজ তিনি ময়ফুল বিবি। দীর্ঘ ১৮ বছর পর কন্যা ও নাতি-নাতনির সংসারে ফিরে গেছেন তিনি। সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানানোর মতো ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া রেল স্টেশন এলাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. এমদাদুল হক এমদাদ গত ১৪ মে ‘পূর্বধলা হেল্পলাইন’ ফেসবুক গ্রুপে ময়ফুল বিবিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি যোগাযোগের জন্য নিজের মোবাইল নম্বরটি দেন।
অবিশ্বাস্যভাবে একদিনের মধ্যেই তাঁর মোবাইলে যোগাযোগ করে ময়ফুল বিবির মেয়ে ও নাতি-নাতনীরা।
ময়ফুল বিবির বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা গ্রামে। স্বামীর নাম কাশেম ব্যাপারী। তিনি অনেক আগেই মারা গেছেন। তাদের ছয় মেয়ে।
পূর্বধলা হেল্পলাইন ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাঁর মায়ের সন্ধান পেয়ে গতকাল রোববার একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ফেনী থেকে ছুটে আসেন তিন বোন। দীর্ঘদিন পর তাদের মাকে ফিরে পেয়ে তারা আবেগ আপ্লুত।
তাকে নিতে আসা মেয়ে হোসনেআরা বেগম জানান, ২০০২ সালে তাঁর মা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় কিছু দিন তাঁকে নজরে রাখতে পারলেও এক পর্যায়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান তিনি। তারপর থেকে তারা বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুজি করেছেন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। কিন্তু না পেয়ে ধরে নিয়েছিলেন এতদিনে হয়তো মা আর বেঁচে নেই।
আরেক মেয়ে বিবি মরিয়ম জানান, তাঁর বিশ্বাসই করতে পারছেন না দীর্ঘদিন পরে মাকে ফিরে পেয়েছেন।
২০০৩ সালের দিকে জারিয়া বাজারে আশ্রয় নেন ময়ফুল বিবি (৭০)। বসবাস করতে শুরু করেন এখানেই। নাম না জানায় সবাই তাকে পাগলি নামেই ডাকা শুরু করে।
উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের নাটেরকোণা গ্রামের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. এমদাদুল হক এমদাদ জানান, ২০০৩ সালের দিকে একদিন ওই নারীকে জারিয়া বাজারে দেখা যায়। এরপর থেকে এখানেই বসবাস করতে থাকেন। কখনও ডাকবাংলোর বারান্দায়, কখনও বাজারে দোকানের বারান্দায়, আবার কখনও রেল স্টেশনের প্লাটফরমে দেখা যেত তাঁকে। এক সময় ছেঁড়া কাপড়, পলিথিন আর চট দিয়ে নিজেই তৈরি করে নেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। তার স্বভাব ও ব্যবহারে স্থানীয় মানুষ তাঁকে আপন করে নেন। তারাই খাবার-দাবার দিতেন। কখনও কখনও তিনি চেয়েও নিতেন। নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে কখনও তিনি বলতেন না। অবশেষে স্থানীয়রা অনেক চেষ্টা করে তাঁর কাছ থেকে নাম-ঠিকানা জানতে পারেন। পরে তার স্বজনদের খোঁজে গত ১৪ মে এমদাদুল হক ‘পূর্বধলা হেল্পলাইন’ নামের ফেসবুক গ্রুপে ময়ফুল বিবির থেকে পাওয়া সব তথ্য দিয়ে একটি পোস্ট দেই। এতে খোঁজ মেলে ময়ফুলের স্বজনদের। গতকাল সকালে তাঁর স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতা মো. এমদাদুল হক এমদাদ আরও জানান, এলাকার মানুষকে তিনি এতটাই আপন করে নিয়েছিলেন যে, প্রথমে তিনি যেতেই চাননি। তিনি বার বার বলছিলেন, বাড়ি আর এলাকার মানুষদের ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না। পরে কৌশলে তাঁকে রাজি করানো হয়। এ সময় তাঁর থাকার খুপড়ি জায়গায় খুঁজে বিভিন্ন অঙ্কের নোট ও কয়েনসহ অর্ধবস্তা টাকা পাওয়া যায়। যেগুলো তিনি মানুষের কাছ পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত করেছেন। পরে ওই টাকাসহ হাঁড়ি-পাতিল, কাপড়, সাজসজ্জার জিনিসপত্রসহ তাঁর মেয়েদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় আরও মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবলীগের নেতা ও নাটেরকোণা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন রোমেল, পূর্বধলা হেল্পলাইন প্রতিনিধি মো. অলি উল্লাহ তালুকদার ও বি কে এম জাহিদ হাসান প্রহর, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. তুহিন মিয়া, নূরুল আমিনসহ অনেকেই।