‘সাংবাদিক সেজে বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করতেন হুজির শাখাপ্রধান’
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) অপারেশন শাখার প্রধানসহ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজমের ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলাম আজ শুক্রবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক পরিচয়ে অপারেশন শাখার প্রধান মাইনুল ইসলাম সংগঠনের দাওয়াতি কাজ, অর্থ সংগ্রহ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করে আসছিলেন।’
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—মাইনুল ইসলাম ওরফে মাহিন ওরফে মিঠু ওরফে হাসান, শেখ সোহান সাদ ওরফে বারা আব্দুল্লাহ ও মুরাদ হোসেন কবির। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি চাপাতি, দুটি ছোরা, ১০টি ডেটোনেটর, ১৭০টি বিয়ারিং লোহার বল, পাঁচ লিটার এসিড, তিনটি আইডি কার্ড ও একটি জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর সক্রিয় সদস্য। তাঁরা মাইনুল ইসলামের নেতৃত্বে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী পুনর্গঠন, পূর্ণাঙ্গ শুরা কমিটি প্রস্তুতকরণ, সংগঠনের অর্থ দাতা এবং সদস্যদের কাছ থেকে অর্থের যোগান নিশ্চিতকরণ, ব্যাপক হারে সংগঠনের সদস্য যোগাড় করা, অস্ত্র সংগ্রহ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ, কারাগারে আটক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের জামিনের ব্যবস্থাকরণ এবং বান্দরবান-নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় জমি লিজ নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
ডিএমপি আরও জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় তাঁদের সংগঠনের বিস্তার ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পরিচয়ে তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা কারাগারে আটক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাক্তার জাফর ও ২০০০ সালের কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মেহেদী হাসান ওরফে আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে গাজী খানের নির্দেশে সাংগঠনিক কাজ করছিলেন।
ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার মাইনুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ সংগঠন হুজির প্রধান অপারেশন সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি সাংবাদিকের বেশ ধারণ করে সংগঠনের দাওয়াতি কাজ, অর্থ সংগ্রহ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করে আসছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল ঢাকা শহরে বড় ধরনের নাশকতা করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা। তিনি ২০১৫ সালে হুজির শীর্ষ নেতা কারাবন্দি মুফতি মঈনউদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।’
অতিরিক্ত উপকমিশনার আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া সোহান সাদ সুনামগঞ্জের বিবিয়ানা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকায় মিরপুর বাংলা কলেজে পড়ার পাশাপাশি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। ২০১৬ সালে একুশে বই মেলায় নাশকতার ঘটনায় গ্রেপ্তার হন। এ ছাড়া তিনি ২০১৭ সালে বিস্ফোরক মামলায় এবং ২০১৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন। জামিনে বের হয়ে তিনি মাইনুলের নেতৃত্বে হুজির সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া মুরাদ হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর সক্রিয় সদস্য। তিনি ব্যবসার আড়ালে হুজি সংগঠনের দাওয়াতি ও বায়তুল মালের দেখভালের দায়িত্ব পালন করতেন। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।’