সবাই মিলে করোনা মোকাবিলা করতে হবে
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সারা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। এ মহামারির জন্য কেউ মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তাই এখন আর কারো একা চলার সুযোগ নেই। সবাইকে এক হয়ে করোনাকে মোকাবিলা করতে হবে। গতকাল রোববার রাতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কেন্দ্র’র (সিবিআইআর) আয়োজনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে অংশ নেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, ভারতের সাবেক এনএসজি কমান্ড্যান্ট দীপাঞ্জন চক্রবর্তী, ফ্রান্স প্রবাসী সাংবাদিক ও অভিবাসন পরামর্শক ফারুক নওয়াজ খান ও কলকাতার শিল্প সংগঠক ও সমাজকর্মী তাপস মল্লিক।
সিবিআইআর এর পরিচালক ও ইন্ডিয়া টুডের সাংবাদিক শাহিদুল হাসান খোকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক বলেন, ‘আমরা কেউ এখনো করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারিনি। এখনো এর কোনো প্রতিষেধক নেই। তাই সবাইকে সমন্বিতভাবে এর মোকাবিলা করতে হবে। এখন আর একা চলার নীতি নেই। সবাই মিলে কাজ করতে হবে।’
রুহুল হক বলেন, ‘করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বকে তোলপাড় করে দিচ্ছে। আমাদের দেশে প্রচুর স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের প্রথম অবস্থায় পিপিই নিয়ে একটু সমস্যা ছিল, যা পরবর্তী সময়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু বুঝতে পারছি না, পিপিই পরার পরও কেন এত স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছে। এখন আমাদের সামনে পথ একটাই, তা হলো সবাই মিলে করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করতে হবে।’
সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘করোনার ফলে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক একটা সংকট দেখা দেবে। আমরা কিছুটা সৌভাগ্যবান বাংলাদেশে, কিছুটা ফসল ভালোভাবে তুলতে পেরেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকেই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কাজ করছেন। তিনি প্রথম থেকেই কৃষির পেছনে ছিলেন এবং ফসলগুলো যেন ঘরে তোলা যায়, সে চেষ্টা করেছেন। যারা অসহায় মানুষ ছিল, তাদের হাতে সরকারের টাকা পৌঁছেছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। অসহায় মানুষকে খাদ্য দিয়েছেন, সব সময় এ অসহায় মানুষের কথা মনে রেখে প্রথম থেকেই লাখ লাখ টাকা প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছেন।’
রুহুল হক আরো বলেন, ‘আমরা জীবন ও জীবিকা দুটোকে চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমাদের এখানে লকডাউন পুরোপুরি চালু নয়। কিছু কিছু জায়গায় চালু আছে। আমাদের জীবন ও জীবিকার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দুটোর সংমিশ্রণ করতে হবে। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। তাই আমার মনে হয়, সবাই মিলে করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা করোনা পরীক্ষার পজিটিভ-নেগেটিভ ভুয়া রিপোর্টের বিষয়ে বলেন, ‘সরকারিভাবে করোনা মোকাবিলার যে চেষ্টা করা হচ্ছে, তা সফল হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, বাংলাদেশ সেই সৌভাগ্যবান দেশ, যারা করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়ার যথেষ্ট সময় পেয়েছে। কিন্তু যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। আমি বলছি না, যে সময় বাংলাদেশ সরকার পেয়েছে, সে সময়টা যথাযথ কাজে লাগালে কোনো মৃত্যু ঘটত না, কেউ আক্রান্ত হতো না। সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারলে, অবশ্যই আজকের যে অবস্থা, সেটি হয়তো হতো না।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সারা বিশ্বের মাঝে একমাত্র বাংলাদেশেই করোনার মতো ভয়াবহ মহামারিকে তার ভাগ্য ফেরানোর মওকা হিসেবে অসুখটাকে ব্যবহার করেছে। করোনার মতো বীভৎস একটি অসুখ নিয়ে ব্যবসা হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে, জালিয়াতি হয়েছে, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। এর ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। আমাদের তারা অ্যালাও করছে না, একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও অ্যালাও করছে না। ইতালি তো ১২৫ জন বাংলাদেশিকে বিমান থেকেই নামতে দেয়নি। এর সুদূরপ্রসারী ফল আমাদের দেশকে ভোগ করতে হবে।’
বিএনপির এই সাংসদ বলেন, ‘করোনার পজিটিভ-নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে যা হয়েছে, (বিশেষ করে দুটি প্রতিষ্ঠান জিকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতাল), তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গোচরেই হয়েছে। জিকেজির চেয়ারম্যান হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চাকরিও করেন, আবার তিনি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কী করে থাকেন? একজন সরকারি চাকরিজীবী কী করে একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান হন? আর রিজেন্ট হাসপাতালের তো ২০১৪ সালেই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ। এরপরও যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিব উপস্থিত থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে করোনা চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে, তখন সেটা বাংলাদেশের সরকারের জন্য শুভবার্তা বয়ে আনে না। এটা সহজেই বলে দেয়, সরকারের ওপর মহলের ইঙ্গিত না থাকলে এ ধরনের জালিয়াতির ব্যবসা চালানো যায় না।’
ভারতের সাবেক এনএসজি ডেপুটি কমান্ড্যান্ট দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল, তা নিতে না পারা বা সময়মতো যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল, সেগুলো নিতে দেরি করার আমি অবশ্যই সমালোচনা করব। ভারতেও কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করছে রাজ্য সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। বিরোধীদের এই চাপটা থাকা ভালো। কারণ, তাহলে যারা রুলিং পার্টি বা শাসক দল, তারা ভুল করতে ভয় পাবে। ইচ্ছাকৃত ভুল করার আগে তারা চিন্তা করবে। কিন্তু বর্তমান যে সময় আমরা পার করছি, এতে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
দীপাঞ্জন চক্রবর্তী আরো বলেন, ‘করোনার পরিস্থিতি বলতে গেলে, তা মোটেও ভালো বলা যাবে না। এটা এমন একটি ভাইরাস, যাতে ধনীরা যেমন আক্রান্ত হচ্ছে, ঠিক তেমনি ঝুপড়ি ঘরে থাকা লোকরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এটিই মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। বলতে পারেন সাম্যবাদী ভাইরাস। তবে এখন সবার উচিত হবে, এ ভাইরাসকে একসঙ্গে মোকাবিলা করা।’