যেকোনো করোনার টিকা গ্রহণ করতে পারব না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
অতি কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করার সক্ষমতা নেই বলে যেকোনো করোনার টিকা (ভ্যাকসিন) বাংলাদেশ গ্রহণ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, খুব কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় না বলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনিকার করোনার টিকা বাংলাদেশের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার টিকা বাংলাদেশে এলে সবার আগে তা পাবেন চিকিৎসক-নার্সসহ সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা। পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকার অনুযায়ী অন্য নাগরিকরাও ভ্যাকসিনের আওতায় আসবেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘ওই ভ্যাকসিনই আমরা গ্রহণ করতে পারব যে ভ্যাকসিন আমরা এখানে টেমপারেচার কন্ট্রোল করে রাখতে পারব। আমাদের যে অ্যাস্ট্রোজেনিকা ভ্যাকসিন দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হবে, এই সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। কিন্তু কোনো ভ্যাকসিন আছে ৭০ থেকে ৮০ ডিগ্রি মাইনাস টেমপারেচারে রাখতে হবে। সেই সক্ষমতা আমাদের নাই। কাজেই ওই ভ্যাকসিন আমরা এখন নিতে পারব না।’
করোনাভাইরাসের টিকা এলে পর্যায়ক্রমে সবাই পাবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এবং সেই ব্যবস্থা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। যার যেখানে যখন প্রয়োজন হবে। ভ্যাকসিন যখন অ্যাভেইলেবল হবে, তখন আমরা এটা দিতে থাকব। বাংলাদেশ সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সেই ব্যবস্থা রেখেছে।’
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করছে, তার তিন কোটি ডোজ কিনতে ইতোমধ্যে চুক্তি করেছে সরকার।
এ ছাড়া গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস-গ্যাভি বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে, যা আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশের হাতে আসতে পারে বলে সরকার আশা করছে।
করোনাভাইরাসের কার্যকর টিকা পাওয়া গেলে তা যাতে সারা বিশ্বের মানুষ পায়, তা নিশ্চিত করতে কয়েক মাস ধরে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে ভ্যাকসিন এলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও পাবে। প্রথমে ৩ শতাংশ দেবে, পরে তাদের কাছেও (ডব্লিউএইচও) ভ্যাকসিন আসবে, তখন বাকি ১৭ শতাংশ বিভিন্ন দেশকে দিতে থাকবে। আমরাও সেখান থেকে পেতে থাকব।’
মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে বলেই কোভিড সংক্রমণ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ‘এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আছে’ মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটা ধরে রাখতে সবার সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, ‘এটা যেন আর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না। সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে, নিয়ম মানতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদসহ চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা।