দক্ষ সুনাগরিক গড়ে তুলতে মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই
দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকার সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দেশসেরা সাফল্য আর অনন্য কৃতিত্ব অর্জনের বর্ণনা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা এনটিভি অনলাইনকে জানান, সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, প্রত্যেকের মধ্যে সেরাটা দেওয়া ও তা আদায় করে নেওয়ার মতো মানসিকতা গড়ে তোলা, সর্বোপরি অভিভাবকদের প্রবল প্রত্যাশাই সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। রাজধানীর প্রান্তসীমায় অবস্থানের পরেও মেধাতালিকায় শীর্ষস্থান অর্জনের মতো বিরল কৃতিত্বের জন্য শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন ও অধ্যাবসায় এবং শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টাকে তুলে ধরেন ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা।
দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, আগামী প্রজন্মকে দক্ষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে কোয়ালিটি শিক্ষা বা গুণগতমানের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে শিক্ষার্থীদের। বাস্তবতার আলোকে সময়োপযোগী শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। সিলেবাসের পাশাপাশি কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিসের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা ১৯৮৬ সালে মাতুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে এসএসসি, ১৯৮৮ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৯০ সালে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে বিএসসি ও ১৯৯২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে বি.এড এবং ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এড ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৯ সালে তিনি স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক থেকে সেকেন্ডারি এডুকেশন সিস্টেম ইন বাংলাদেশ অভিসন্দর্ভের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৯৩ সালে তৎকালীন সামসুল হক খান জুনিয়র হাইস্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লার কর্মজীবন শুরু হয়। কর্মদক্ষতা ও গতিশীল নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন গৌরবোজ্জ্বল সাফল্য লাভ করে। ১৯৯৩ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা খুললে ২০০৩ সাল থেকে প্রিন্সিপাল পদে দায়িত্ব নেন। এখন পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এনটিভি অনলাইনের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন এনটিভি অনলাইনের বিশেষ প্রতিনিধি মো. জাকের হোসেন। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো:
এনটিভি অনলাইন : বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ। এতে পড়ালেখায় যেসব ঘাটতি হয়েছে, তা কীভাবে পূরণ হবে বলে আপনি মনে করেন?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : আমি প্রথমে এনটিভির দর্শকসহ সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। করোনা মহামারির সময়ে আমরা চেষ্টা করেছি, শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে লেখাপড়ার মধ্যে ধরে রাখার। বিশেষ করে, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে যখন স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় পরদিন ১৮ মার্চ থেকে ইংলিশ ভার্সন শাখা থেকে ক্লাস শুরু করি। বাংলা মাধ্যমে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস শুরু করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মাধ্যমে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা পরবর্তীতে দেখেছি, অনলাইনে ছেলে-মেয়েদের একঘেয়েমি চলে আসছে। এই একঘেয়েমি দূর করে মনোযোগ বাড়াতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি স্কাউটিং, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, আর্ট অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, সায়েন্স ক্লাবসহ সবগুলো ক্লাবের সঙ্গে অনলাইনে জুমের মাধ্যমে যুক্ত করে পড়াশুনা চালিয়ে নিয়েছি। এ ছাড়া আমাদের ছাত্রীদের জন্য কলেজ শাখা রয়েছে। সেই কলেজ শাখায়ও আমরা ক্লাস চালু রেখে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার মধ্যে রেখেছিলাম। ভিন্ন ধারায় আনন্দ দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ ধরে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আপনারা জানেন, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ নামে আমার একটি কলেজ রয়েছে। সেখানেও আমরা জুম আইডির মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস চালু রেখেছি।
আমরা সর্বতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি, গত কয়েক মাসে সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ক্লাস নিয়েছি। এমনকি ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষাও আমরা অনলাইনে নিয়েছি। প্রায় ৯৭% ছাত্র-ছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেরও কেউ এ জন্য প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু আমরা অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নিয়ে বাসায় থাকার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করেছি। আসলে হঠাৎ করে এ করোনা পরিরিস্থিতির জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দারের মতো অবস্থা ছিল আমাদের। তবু আমরা কাজ চালিয়ে নিয়েছি।
এনটিভি অনলাইন : করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আপনাদের নতুন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে যদি বলেন?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : আসলে এটা একেবারেই নতুন একটি পদক্ষেপ। মাঝেমধ্যে অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষা নিতে গিয়ে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দরকার ছিল। ওই সময় সেটি আমরা সরবরাহ পাইনি। তার ওপর লকডাউন থাকার কারণে একটি ভিন্ন ধারার ভিন্ন চিত্র আমাদের সামনে চলে আসে। কেননা ওই সময় মার্কেট বন্ধ থাকায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্রয় করারও সুযোগ ছিল না। তবু আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের সন্তানদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য।
এনটিভি অনলাইন : করোনার কারণে শুধু বাংলাদেশই নয়, গোটা বিশ্ব ব্যবস্থাই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে ওঠেছে। এটাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : প্রযুক্তি অবশ্যই আমাদের জানতে হবে। কিন্তু আমরা প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত নই। আবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ফিরে আসার পর আমাদের সন্তানদের প্রযুক্তি থেকে বাদ রাখা কঠিন হয়ে যাবে। তাই প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে হবে।
এনটিভি অনলাইন : অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সেবা ও স্মার্টফোন অতীব জরুরি হয়ে দেখা দেয়। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এর যোগান দেওয়া অনেক অভিভাবকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে বিকল্প কী পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : এ ক্ষেত্রে আমাদের ইলেকট্রনিকসহ যেসব মাধ্যম রয়েছে সেসব মাধ্যমকে ব্যবহার করতে পারি। যেমন: সংসদ টিভি। যেটির মাধ্যমে সারা দেশের গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষও উপকৃত হয়েছে। তাই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ যেভাবে উপকৃত হচ্ছে, সেভাবে টিভির মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠান ও ছাত্র-ছাত্রীরা উপকৃত হবে।
এনটিভি অনলাইন : করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে আপনার মতামত?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : আমরা যেটি দেখলাম হাটবাজার, শপিংমল, গণপরিবহণ, রাস্তাঘাট সমস্ত কিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি মাস্ক ব্যবহার, নিয়মিত হাত ধোয়া কার্যক্রমসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় ফেব্রুয়ারিতে কলেজ শাখা এবং পরবর্তীতে স্কুলপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যেতে পারে। আমাদের সন্তান-অভিভাবকরা প্রতিনিয়ত ফোন দিয়ে উন্মুখ হয়ে আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য। তাই আমি কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করব, পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় খুলে দিলে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সবাই উপকৃত হবে।
এনটিভি অনলাইন : অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বিকল্পভাবে মূল্যায়ন করে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ পদ্ধতি বা ব্যবস্থা কতটুকু শিক্ষাবান্ধব?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : দেশের বিরাজমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা যদি দেখি, বিগত শত বছরেও দেশে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। এ কারণে আমাদের সরকার কঠিন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা পিছিয়ে রেখে চেষ্টা করেছে কিছু করা যায় কিনা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সম্ভব হলো বিধায় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ফলাফল হলো। তবু আমাদের চেষ্টা করতে হবে উচ্চ শিক্ষায় ভালো করার জন্য।
এনটিভি অনলাইন : গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, শ্রেণিতে আর রোল নম্বর পদ্ধতি থাকছে না। এ বিষয়ে আপনাদের মতামত কী?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : সরকারের এ সিদ্বান্ত আসলে খারাপ না। আমাদের অনেক অভিভাবক রয়েছেন, যারা সন্তানদের এক বা দুই নম্বরে রাখতে চান। এ ক্ষেত্রে অনেক অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। এবং শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হয়। সরকারি নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে রোল নম্বরের পরিবর্তে আইডি ব্যবহার করা হবে। তবে প্রতিযোগিতাও রাখা দরকার। প্রতিযোগিতা না থাকলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকবে না বলে আমি মনে করি। আইডি নম্বরের পাশাপাশি প্রতিযোগিতা রাখার জন্য সরকারের প্রতি বিনীত দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এনটিভি অনলাইন: সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি বছর অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আপনাদের মতামত কী হবে?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : গত আট-নয় মাস যাবত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিষ্ঠানের ক্লাস চালিয়ে নেওয়ার। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যেতে পারেনি। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, বছরের শুরুতে উন্নয়ন ফি, মিলাদসহ অন্যান্য যে ফি আদায় করা হয়, সেটি যেন না আদায় করা হয়। আমরাও এ নির্দেশনা মেনে অন্যান্য ফি আদায় করছি না।
এনটিভি অনলাইন : শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রেখেছিল আপনার প্রতিষ্ঠান। ভালো ফলাফল করতে কিভাবে শিক্ষার্থীদের নার্সিং করেন?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : আমাদের এ প্রতিষ্ঠান সারা দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে বেশ কয়েকবার সুনাম কুড়িয়েছে। ফলাফল, শতভাগ পাস, শৃঙ্খলা, স্কাউটিং, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ সব ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে। এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আমরা শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে সব সময় একটি টিম ওয়ার্ক কাউন্সিলিং করে থাকি। এতে কোনো সমস্যা থাকলে সহজে নিরসন করা সম্ভব হয়। এভাবে পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসিসহ সব ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছি। শুধুই তাই নয়, সহশিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের স্কাউটিং টিম ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পরপর তিনবার সারা দেশের শ্রেষ্ঠ স্কাউটিং হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। আমাদের ডিবেট ক্লাব ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিটিভির জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব ন্যাশন্যাল ইংলিশ কার্নিভালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ ছাড়া সায়েন্স ক্লাবের সদস্যরা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বেশ সুনাম অর্জন করেছে। আর্ট অ্যান্ড কালচার ক্লাব ও আইসিটি ক্লাব রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা অলরাউন্ডার হিসেবে দেশপ্রেম ও নৈতিকতা নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।
এ প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী বুয়েট, মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিদেশে অধ্যয়নরত রয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা নাসাতেও চাকরি করেছে। এ কারণে এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এনটিভি অনলাইন : এ প্রতিষ্ঠানটিকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার গল্প যদি বলেন?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : এ প্রতিষ্ঠানটি ছিল একটি অজোপাড়ায় ধানক্ষেতের মধ্যে নির্মিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৯ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ১৯ শতাংশ জায়গা নিয়ে কিন্ডারগার্টেন হিসেবে শুরু করে। আমি ১৯৯৩ সালে এসে ১২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী পেয়েছিলাম। বর্তমানে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। ২০০৩ সালে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন এমপিওভুক্ত হয়, তখন আমরা পরিকল্পনা করি কীভাবে ভালো ফলাফল করা যায়। ২০০৬ সালে এসএসসিতে শতভাগ পাসের তালিকায় সপ্তম স্থান অর্জন করে। পরের বছর ষষ্ঠ স্থান, ২০১২ সালে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দ্বিতীয় স্থান এবং পরে ২০১৫ সালে সারা দেশে প্রথম স্থান গৌরব অর্জন করে। ধারাবাহিকভাবে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। আমরা শুধু রেজাল্ট নয়, আমরা চেষ্টা করি বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীর পড়া শেষ করার জন্য। বইয়ের যে জায়গা থেকে প্রশ্ন আসুক আমার ছাত্র-ছাত্রীরা উত্তর দিতে পারে। এ কারণে ভালো ফলাফলে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে।
এ ছাড়া ক্লাস শেষে দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা রাখা হয়। দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস শেষে বাইরে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে দৌঁড়াদৌঁড়ি না করে সেজন্য এ ব্যবস্থা। এ ছাড়া সাপ্তাহিক, মাসিক ও দ্বিমাসিক পরীক্ষা নিয়ে থাকি। এতে ছাত্রছাত্রীদের পুরো মনোযোগ থাকে পড়াশুনায়।
স্কুলের ইতিহাস বলতে গেলে, প্রথম দিকে আমরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতাম। স্কুলে প্রতিদিন উপস্থিতি এবং পড়ালেখার বিষয়ে যত্ন নেওয়া হতো। তখন এ এলাকায় সবই ছিল ধানক্ষেত। এ প্রতিষ্ঠানে বর্ষাকালে আসার সময় হাটুঁ পরিমাণ পানি থাকতো। একটি বেড়ার ঘর ও টিনের চালা দিয়ে শুরু হয়। মানুষজন এসে গরু-বাছুর চড়াত। অনেক কৃষক মাঠে কাজ করে এখানে স্কুলের ঘরে এসে ঘুমাত। এখন আমাদের পাঁচ-ছয়টি সুইচ্চ ভবনসহ সুবিশাল ক্যাম্পাস রয়েছে। মেয়েদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পৃথক ক্যাম্পাস খোলা রয়েছে। ইংলিশ ভার্সন রয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : শুধু ফলাফল নয় বরং আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে আপনার প্রতিষ্ঠানের অবদান?
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা : আমরা ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের আরো ভালো ফলাফল অর্জন এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করব, যেন ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই দেশে-বিদেশে নিজেদের প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারে।