ঢাকাকে ইন্টেলিজেন্ট সিটি গড়ার ঘোষণা দিয়ে তাবিথের ইশতেহার
ঢাকাকে ইন্টেলিজেন্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরে ইমানুয়্যেলস ব্যাংকুয়েট হলে ১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
ইশতেহার ঘোষণাকালে তাবিথ আউয়াল মেয়র নির্বাচিত হলে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি দূষণমুক্ত পরিচ্ছন্ন ঢাকা, মশক নিয়ন্ত্রণ, যানজট ব্যবস্থাপনা, গণপরিবহন, সড়ক নিরাপত্তা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, নারী শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ঢাকা, নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ পানি, নিরাপদ খাদ্য, পাবলিক টয়লেট, ক্ষুদ্র ব্যবসা, ইন্টেলিজেন্ট সিটি, অপরাধ দমন, বিনোদন, আবাসন ও নগর প্রশাসন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন।
ঢাকার যানজট, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করতে ৯০ বা ৬০ দিন নয়; প্রথম দিন থেকেই ঢাকাবাসীর সেবা নিশ্চিত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকাবাসীর সেবায় জড়িত মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিত করে সেবার ব্যবস্থা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমরা বারবার দেখেছি, ভোটবিহীন মেয়ররা জনগণের জন্য কাজ করেন না। ৫৪টি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা যখন দেখবে, ৩০ লাখ ভোটারের ম্যান্ডেট নিয়ে প্রতিনিধি তার সামনে দাঁড়িয়েছে, তখন সংস্থাগুলোর সবাই তা মানতে বাধ্য হয়।’
ঢাকাবাসীর বিরাট অংশ তাদের আয়ের প্রায় অর্ধেক বা তার বেশি বাড়িভাড়ায় ব্যয় করতে বাধ্য হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ব্যয় বাড়লেও সে তুলনায় আয় বাড়ছে না। তাই সে জন্য আমরা মধ্যবিত্তদের এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য চিন্তা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যেটি সবার জন্য গ্রহণযোগ্য এবং মঙ্গলজনক। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেক এলাকায় ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করা হবে। নিয়মের বাইরে গিয়ে বাড়ির মালিকরা বাড়তি ভাড়া নিতে পারবেন না।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের উদাহরণ টেনে বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘নির্দলীয় লোকজনের কাছে কাজ দেওয়া হবে। সরকারদলীয় ঠিকাদারকে কোনো কাজ দেওয়া হবে না। সিলেটের মেয়র আরিফুল ইসলাম ঝুলন্ত তারবিহীন নগরী গড়ে তুলে ইতোমধ্যে সবার নজর কেড়েছেন। ইচ্ছে থাকলে সবই সম্ভব।’
এক সাংবাদিক তাবিথ আউয়ালের কাছে জানতে চান, ‘যেখানে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গেই সরকার পেরে ওঠেনি, সেখানে আপনি সরকারের একটি ক্ষুদ্র ইউনিটের মেয়র নির্বাচিত হয়ে কীভাবে কাজ করতে পারবেন বলে মনে করেন?’ জবাবে তাবিথ বলেন, ‘জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করলে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারব। আমরা এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দিইনি, যা একজন মেয়রের ক্ষমতার বাইরে। যতটুকু করার সুযোগ রয়েছে তার মধ্যেই আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
ঢাকা শহরের ডেঙ্গু ও জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আগস্ট মাস থেকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমরা সচেতনতায় কাজ করেছি। নির্বাচিত হলে আমরা প্রথমে লার্ভা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এটা প্রথম দিন থেকে শুরু করব। দূষণের বিষয়ে হাইকোর্ট নয়টি নির্দেশনা ইতোমধ্যে দিয়েছে। তাই সেসব নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ আমরা নিব।’
ক্ষমতায় এলে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়ে বিএনপির এ প্রার্থী বলেন, ‘আমরা এখনও দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল হিসেবে আছি। তাই দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত হয়ে নগরবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করব। আর এ জন্য যেটি প্রয়োজন সেটির জন্য যা যা করণীয়, আমরা করব।’
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও তাবিথ আউয়ালের বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টু, গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ।