টিএসসিতে সৈকতকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল ছিন্নমূল মানুষ
করোনাভাইরাসের কারণে সংকটে পড়া ছিন্নমূল মানুষকে দুই বেলা খাবার তুলে দেওয়ার পর এবার বন্যার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত। সুনামগঞ্জে একটি স্কুলে অবস্থান করে ওই এলাকার বন্যার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
বন্যার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আজ মঙ্গলবার ২০ সদস্যের একটি দল নিয়ে সৈকত সুনামগঞ্জ যাচ্ছেন।
গত ২৩ মার্চ থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে এ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন সৈকত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও বড় ভাইদের সহযোগিতায় সেই কার্যক্রম চালিয়েছেন। ১২০ দিন ধরে টিএসসিতে অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের জন্য রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে সৈকত ও তার দল। আজ মঙ্গলবার এর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটেছে।
তানভীর হাসান সৈকত এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘প্রথম ১০০ দিন আমরা দুই বেলা খাবার বিতরণ করেছি। শেষ ২০ দিন একবেলা খাবার বিতরণ করেছি। ৭০-৮০তম দিন থেকেই আমরা খাদ্যসেবা গ্রহণকারীদের কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোগী হতে পরামর্শ দিয়েছি। খাদ্য বিতরণ চালু থাকলে একসময় বেকাররা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে কর্মবিমুখ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। আমরা তাই চেষ্টা করেছি, ধাপে ধাপে তাদের কর্মমুখী করার জন্য। এভাবে দুই ধাপে আমাদের রান্না করা খাদ্য বিতরণ শেষ হলো।’
আজ বিদায় বেলায় টিএসি এলাকায় শুরু হয় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। শেষ বেলার খাবারের সঙ্গে সবাইকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় অনেকে সৈকতকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে সৈকত বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যায় প্লাবিত। বন্যা দুর্গতদের কষ্ট যেন করোনা মহামারিতে আরো প্রকট হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থীরা জনগণের করের টাকায় পড়ালেখা করে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই আমরা ঠিক করেছি আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম বন্যা দুর্গতদের কেন্দ্র করে হতে হবে। এ সময় তারাই সবচেয়ে বেশি অসহায়।’
‘প্রাথমিকভাবে সুনামগঞ্জের বন্যা দুর্গতদের সহায়তা করতে আমরা সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হব। সেখানে দুর্গতদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে চেষ্টা করব দেশের অন্যান্য প্রান্তিক অঞ্চলের বন্যা দুর্গতের সহায়তা করার।’
সেজন্য প্রান্তিক অঞ্চলে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহায়তাও কামনা করেছেন সৈকত। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের একার পক্ষে এই কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজটি করতে চাই।’
যারা সহযোগিতা করতে চান, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরকে 01684023411 বিকাশ নম্বরে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনাকালে কার্যক্রম প্রসঙ্গে সৈকত বলেন, মহামারি প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে গত ২৩ মার্চ শহরের অসহায়, ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষকে দুই বেলা খাবার জোগান দেওয়ার ১২১ দিনের দীর্ঘ লড়াই আজ ২১ জুলাই শেষ হলো। খাদ্য সহায়তা ছাড়াও বিগত ঈদে অন্তত এক হাজার নারী-পুরুষ-শিশুকে নতুন কাপড় দেওয়া হয়েছে।