জনগণকে নিজ দেশেই পরাধীন করে রেখেছে সরকার : রিজভী
সরকার বাংলাদেশের জনগণকে নিজ দেশেই পরাধীন করে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘ঔপনিবেশিক আমলে জনগণের যতটুকু অধিকার ছিল, সেটাও আওয়ামী লীগ কেড়ে নিয়েছে। দেশের জনগণের এখন কোনো অধিকার ও মর্যাদা অবশিষ্ট নেই, নেই ভোটাধিকার।’ রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ সোমবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী।
এ সময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথিত স্লোগানের আড়ালে গত এক দশকে বাংলাদেশ হারিয়েছে তার সব অর্জন আর মর্যাদা। গুম-খুন, অপহরণের ফলে উদ্ভূত ভয়ে জনগণকে পরিণত করা হয়েছে একটি আত্মমর্যাদাহীন জাতিতে। আপনারা লক্ষ করেছেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি রোববার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি বলেছেন, ‘ভারতের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ বাংলাদেশ ছেড়ে দেবে।’ ভারতীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও কাণ্ডজ্ঞানহীন, যা বাংলাদেশের জনগণের জন্য লজ্জার ও অপমানজনক।”
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘গত এক দশকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মাথা এতটাই নত করেছে যে এখন আর বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে, বাংলাদেশের জনগণের সম্মান ও মর্যাদার পক্ষে যা হয়েছে, তা মর্যাদাহানিকর। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির কারণে আজ বাংলাদেশের জনগণ হেয় হচ্ছে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, “গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কে ভোট দিল, কে দিল না, তা বিবেচনা করে না আওয়ামী লীগ।’ এ বক্তব্যের মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই স্বীকার করে নিলেন, তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কিংবা সরকার গঠনের জন্য দেশের জনগণ কিংবা জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় নিশিরাত আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জনগণের প্রতি, জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি এমন অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য একমাত্র সরকারপ্রধান এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগের পক্ষেই সম্ভব। কারণ, সুষ্ঠু ভোট তাদের জন্য আতঙ্ক, তাদের মসনদ উল্টে যাওয়ার ভয়ে তারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। এ কারণেই আমরা বলি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের জনগণ ক্ষমতাহীন হয়ে যায়। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণ দেশে অনিরাপদ আর বিদেশে আত্মমর্যাদাহীন হয়ে যায়।”
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণ বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছে, তাদের ভোটাধিকার হরণের জন্য জনম্যান্ডেটহীন সরকার খোদ নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের পুতুল করে রেখেছে। একবার বিনা ভোটে এমপি ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন, আবার নিশিরাতে ভোট ডাকাতি করে সরকার গঠনের পর জনগণের সামনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতালোভী কদাকার চরিত্র স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার ভোটাধিকার হরণের নতুন যন্ত্র ইভিএম নিয়ে মাঠে নেমেছেন সিইসি নূরুল হুদা।’
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘বিতর্কিত এবং ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার কারণে সারাবিশ্বে নিষিদ্ধ ইভিএম বাংলাদেশে আমদানি করতে রাষ্ট্রের খরচ হয়েছে শত শত কোটি টাকা। এবারের ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবারও প্রমাণ হয়েছে, ইভিএম হলো মহা ভোটচুরির শান্তিপূর্ণভাবে-নিরাপদে-ঝামেলামুক্ত যন্ত্র। অথচ এই ভোটচুরির মেশিনের পক্ষে সাফাই গেয়েই চলছেন সিইসি। কারণ, তাদের ভোটের দরকার নেই, তাদের দরকার ইভিএমের নামে মানুষের ভোটাধিকারের সঙ্গে রঙ্গ-তামাশা করা আর ইভিএম কেনার নামে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “একটি সভ্য দেশ হলে নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল, নির্বাচন কমিশনের প্রতি, নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। সেটি না করে সিইসি এখন রাজনৈতিক নেতাদের মতো বক্তৃতা দিচ্ছেন। গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই সরকারের সিইসি নূরুল হুদা বলেছেন, ‘সিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটারের কাছে না গিয়ে রাস্তায় শোডাউন করেছে। আর সে কারণেই ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।’ আমরা বলতে চাই, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের শান্তিপূর্ণ শোডাউন ভোটের প্রচার কার্যক্রমেরই অংশ। ভোটাররা শোডাউনে অংশ নেন, কিন্তু ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যান না, এটার দায় নির্বাচন কমিশনের বেশি।”
রিজভী আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শোডাউন হচ্ছে সন্ত্রাসী শোডাউন। তারা বিরোধীপক্ষকে ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় দেখানোর জন্য সশস্ত্র শোডাউন দেয়। কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের শোডাউনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষার জানান দেয়। আবার জনগণ যখন দেখে, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে ভোটাধিকার হরণের অভিভাবক হিসেবে কাজ করেছে সিইসি নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন, জনগণ যখন দেখে, ইভিএমের জনক খোদ সিইসির আঙুলেই সমস্যা, জনগণ যখন দেখে, কেন্দ্র দখল করে আগেই বুথের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষমতাসীন দলের লোক কর্তৃক ইভিএমের মাধ্যমেই একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেয়, তখন আর জনগণ ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরাপদ মনে করে না। এই সরকারের আমলে জাতীয় কিংবা স্থানীয় সব নির্বাচনেই ভোটাররা দেখছে, ভোটকেন্দ্রে যাওয়াটা তাদের পক্ষে বিপজ্জনক। কারণ, অনেক ভোটকেন্দ্রের ভোটাররা রক্তাক্ত হয়ে বাসায় ফিরেছেন। তাঁরা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিক বা না দিক, নির্বাচন কমিশন ও ইভিএম এ দুটিই ব্যবহৃত হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করার জন্য।’
রিজভী বলেন, ‘খারাপ মানুষ যেন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে না পারে, এ জন্য নির্বাচন কমিশনের উচিত সময়োপযোগী আইন ও বিধি তৈরি করা, এবং নির্বাচনের এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা, যেন জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। সিইসি সেটি না করে সারাবিশ্বে নিষিদ্ধ ইভিএম নিয়ে দেশে হেডমাস্টার সেজেছেন। সিইসির ক্ষমতা পেয়েই নিজের অখ্যাত ভাগ্নেকে যিনি এমপি বানানোর লোভ সামলাতে পারেন না, তার মুখে আর ভোট নিয়ে কোনো কথা মানায় না। ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটাররা ইভিএম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেও সিইসি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপির এই যন্ত্র ব্যবহার করার আবারও ঘোষণা দিয়েছে। তার মানে, ঢাকার মতো একই কায়দায় চট্টগ্রামে ভোট ডাকাতির সুযোগ তৈরির জন্য এটা করা হচ্ছে। সিইসির এই সিদ্ধান্তকে আমরা ধিক্কার জানাই।’