জাবিতে বাড়ছে বর্জ্যের স্তূপ, দায়িত্ব নিয়ে টানাহেঁচড়া

Looks like you've blocked notifications!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যত্রতত্র এভাবেই ফেলে রাখা হচ্ছে বর্জ্য। ছবিটি জাবি ক্যাম্পাসের নতুন কলা ভবনের পাশের। ছবি : এনটিভি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায়  বাড়ছে বর্জ্যের স্তূপ। বর্জ্য অপসারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি একে অপরের দায়িত্ব বলে উভয়কে দোষারোপ করছে। এসব ময়লা থেকে যেমন ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ তেমনি জন্ম নিচ্ছে মশা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার দাবি, বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির। আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি বলছে, বিশ্ববিদ্যালেয় ভবনগুলোর বাইরের বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব তাদের নয়।

এই সমন্বয়হীনতার কারণে ক্যাম্পাসের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ময়লার স্তূপ। এতে নষ্ট হচ্ছে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য। সৃষ্টি হচ্ছে দুর্গন্ধ। ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ভবন ও আবাসিক এলাকায় ৩৫টি অস্থায়ী ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়। এতে খরচ হয় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, মুক্তমঞ্চের দক্ষিণ পাশ, শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তার পাশে, অমর একুশে ভাস্কর্য, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, কেন্দ্রীয় মসজিদের আশপাশ, মুরাদ চত্বর, টারজান পয়েন্টসহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় গড়ে উঠেছে ময়লার স্তূপ। এসব জায়গার মধ্যে শুধু ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও শহীদ মিনারের পাশের রাস্তাগুলোতে একটি করে ডাস্টবিন রয়েছে। যেটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক ছোট। ফলে ডাস্টবিনের পাশেই ফেলা হচ্ছে ময়লা।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় প্রায় অর্ধশত দোকান থাকলেও সেখানে নেই কোনো ডাস্টবিন। খাবারের উচ্ছিষ্ট যেখানে সেখানে ফেলার কারণে যেমন ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ তেমনি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

ময়লার স্তূপ থেকে নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ না করায় তা পরিণত হচ্ছে মশার প্রজননকেন্দ্রে। লেকের পাশে ময়লার স্তূপ গড়ে ওঠায় দূষিত হচ্ছে লেকের পানি। এ ছাড়া স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, দূষিত হচ্ছে বাতাস। ফলে নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডাস্টবিনগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয় না। ডাস্টবিনের পাশেই ময়লা ফেলে রাখে। এ ছাড়া দর্শনার্থীরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে বসে খাবার খায়। নিরাপত্তা শাখা এই বিষয়টি তত্ত্বাবধানের কথা থাকলেও দর্শনার্থীদের খাবারের উচ্ছিষ্ট যত্রতত্র ফেলে রাখতে দেখা যায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উদ্যানতত্ত্ববিদ নূরুল আমিন বলেন, ‘বর্তমানে ক্যাম্পাসে যে কয়টি ডাস্টবিন রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। আর এ ডাস্টবিনগুলো স্থায়ীও নয়। আমরা দীর্ঘদিন থেকে ২০টি স্থায়ী ডাস্টবিনের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করে আসছি। কিন্তু তেমন কোনো সাড়া পাইনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও তারা ভবনের অভ্যন্তরীণ ময়লা ছাড়া আর কোনো ময়লা অপসারণ করে না। আর বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব এস্টেট শাখার নয়। এ ছাড়া এই ময়লা অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। আর এ কাজে দুজন লোক ও একটি গাড়ির জন্য প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল ও কোয়ার্টারের বর্জ্য অপসারণ করা। এর বাইরের বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব এস্টেট শাখার। একাডেমিক ও আবাসিক ভবনের বাহিরের ময়লার স্তূপ গড়ে উঠলে এর দায়ভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির নয়। এর দায়ভার এস্টেট শাখাকে নিতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘স্থায়ী ডাস্টবিনের বিষয়ে কয়েকবার মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেটার আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। আমরা এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসকে বলেছি।’

বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব কার? জানতে চাইলে রহিমা কানিজ বলেন, ‘ভবনগুলোর বাহিরের ময়লা অপসারণের দায়িত্ব এস্টেট অফিসের। তবে তাদের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। আর এস্টেট শাখায় কোনো পদ খালি না থাকা নতুন নিয়োগও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত নতুন পদ তৈরি করে নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’