‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে শেষ হলো প্রথম অংশের ইজতেমা

Looks like you've blocked notifications!
আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ছবি : ফোকাস বাংলা

মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি, দেশের কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আজ শনিবার শেষ হলো তাবলিগ জামাত আয়োজিত ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমার মাওলানা জোবায়ের অনুসারীদের পর্ব।

আগামীকাল রোববার শুরু হবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের দুইদিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা এবং আগামী সোমবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

শনিবারের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এ আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত  প্রার্থনা করা হয়। মুসুল্লিরা জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে পানাহ্ ভিক্ষা করছিলেন। এ সময় আমিন, আল্লাহুম্মাহ আমিন ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখ লাখ মুসল্লি আকুতি জানান। মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম হযরত মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের। তিনি আরবি ও বাংলা ভাষায় মোনাজাত পরিচালনা করেন। এরআগে হেদায়েতি বয়ান করা হয়।

সকালে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখ লাখ মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে। জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। কান্নায় বুক ভাসান তাঁরা। ২৪ মিনিট ব্যাপী মোনাজাতে মাওলানা জোবায়ের প্রথম ১৩ মিনিট পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ১১ মিনিট দোয়া করেন বাংলা ভাষায়। মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরও লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। অনেকে বিমানবন্দর গোল চত্বর কিংবা উত্তরা থেকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। এদিন রাজধানী ঢাকা ছিল প্রায় ফাঁকা। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সবকিছু ছিল বন্ধ।

আগামীকাল রোববার বাদ ফজর থেকে মাওলানা সাদ অনুসারীরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করবেন। আগামী সোমবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা। এর আগে শনিবার মধ্যরাতের মধ্যে মাওলানা জোবায়ের অনুসারীদের ইজতেমা ময়দান ত্যাগ করবেন।

শনিবার মোনাজাত শেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’ এজন্য তিনি ইজতেমায় নিয়োজিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এমনি ভাবে দ্বিতীয় পর্বও সফল ভাবে সম্পন্ন করতে সরকারি-বেসরকারি সব সেবা সংস্থা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ব ইজতেমার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সহযোগিতায় থাকার আহ্বান জানান তিনি।   

আখেরি মোনাজাত পরিচালনা

ইজতেমার মাওলানা জোবায়ের অনুসারীদের আখেরি মোনাজাতের আগে শনিবার সকাল থেকে হেদায়েতী বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খোরশেদ। তাঁর বক্তব্য বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। হেদায়েতী বয়ান শেষে বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জোবায়ের প্রথম পক্ষের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন।

এদিকে এজতেমার আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে শনিবার সকালে চার দিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি পায়ে হেঁটেই টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা স্থলে পৌঁছেন। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। শনিবার ভোর থেকেই ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য পুরানো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়াও পাশ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস- দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায়  মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ। সবাই অপেক্ষায় আছেন কখন শুরু হবে সেই কাঙ্খিত আখেরি মোনাজাত। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

হেফাজত ইসলামীর আমির আল্লামা আহমদ শফী আখেরি মোনাজাত শেষে শনিবার দুপুরে ইজতেমা ময়দান ত্যাগ করেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুক্রবার দুপুরে আল্লামা আহমদ শফী এজতেমায় যোগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে হেলিকপ্টারে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে যান। শনিবার মোনাজাত শেষে তিনি বেলা সোয়া দুইটার দিকে হেলিকপ্টার যোগে ফের চট্টগ্রামে ফিরে যান।

আখেরি মোনাজাতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, হেফাজত ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানসহ বিাভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

এছাড়া এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ কমপক্ষে ৫২টি দেশের তাবলিগ জামাতের ছয় শতাধিক বিদেশি মেহমান এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে যাওয়া মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করে। আগে যাওয়ার জন্য মুসল্লিরা তাড়াহুড়া করতে শুরু করে। এতে টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী- কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাষ্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়ক গুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ জনজট ও যানজট। রাত ১২টার মধ্যে ইজতেমা ময়দান ত্যাগ করতে হবে সে জন্য ময়ানের ভিতরে অবস্থানকারী মুসল্লিরাও বের হয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা

ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের দিন ময়দানের আশপাশের এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালত হয়। এতে দুটি খাবার হোটেল ও দুটি গাড়ির চালককে সংশ্লিষ্ট আইনে চারজনকে ২৫ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া টঙ্গী স্টেশন এলাকায় ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে দুইজনকে একমাস করে কারাদন্ড এবং অপর একজনকে ৫০০টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।