উইপোকায় খাচ্ছে আদালতের ‘তদন্ত ডায়েরি’!

Looks like you've blocked notifications!
ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের প্রায় দুই হাজার তদন্ত ডায়েরি (কেস ডকেট) এভাবেই উইপোকায় খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। ছবি : এনটিভি

ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) আদালতের প্রায় দুই হাজার তদন্ত ডায়েরি (কেস ডকেট) উইপোকায় খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। আর এতে গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে এসে বিপাকে পড়েছেন। মামলার সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে না পারায় মামলায় ভয়ানক ও প্রকৃত অপরাধীরা খালাস পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আইনজীবীরা।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের একটি কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা প্রায় দুই হাজার কেস ডকেট নষ্ট অবস্থায় দেখা গেছে। নষ্ট হওয়া কাগজগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা, চুরি, মাদক, নাশকতা, পেট্রলবোমা হামলাসহ একাধিক মামলার সিডি (কেস ডকেট) রয়েছে।  

এ বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবির বাবুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, থানায় কোনো মামলা দায়ের হলে প্রথমে মামলা তদন্ত করে পুলিশ। আর সে মামলায়  পুলিশ তদন্তের সময় বিভিন্ন সাক্ষীর জবানবন্দি, সিজারলিস্ট (জব্দ তালিকা), অভিযোগপত্র, সাক্ষীর ১৬১ ধারার জবানবন্দি, সূচিপত্র, মানচিত্র, ঘটনার স্থানের বিবরণ, চিকিৎসকের সনদ, ডাক্তারের জবানবন্দি, ময়নাতদন্ত, সুরতাহাল ও মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করে সংরক্ষণ করেন। সেসব দলিল মামলার অভিযোগপত্র দায়ের করার সময় আদালতে পুলিশ দাখিল করেন। এর পরে মামলার সাক্ষ্য দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট পুলিশ, সাক্ষী, চিকিৎসকদের আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে হয়। কিন্তু ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে গুরুত্বপূর্ণ মামলার কেস ডকেট অব্যবস্থাপনায় বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আইনজীবী আরো জানান, নিয়ম অনুযায়ী কেস ডকেট তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে সব কাগজ দাখিল করে দেন। আর সেসব কেস ডকেট সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিকে বুঝিয়ে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) আদালতের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য সেগুলো সরকারি কৌঁসুলিদের (পিপি) না দিয়ে নিজেদের কাছে রেখে অব্যবস্থাপনায় সেগুলোর বিনষ্ট করেছেন।  

আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলায় সাক্ষ্যের অভাবে এমনিতেই আসামিরা খালাস পেয়ে যান। আবার অনেক মামলায় সাক্ষীরা নিয়মিত না আসায় মামলার কার্যক্রমে অনেক স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। এসব কেস ডকেট বিনষ্ট হওয়ায় প্রসিকিউশন পক্ষে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এ ছাড়া অনেক মামলার বয়স ১০ বছর পার হয়ে গেছে। সেসব মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ১০ বছর আগে তদন্ত করেছেন। এত দীর্ঘ সময়ে তদন্ত কর্মকর্তার কোনো তথ্য মনে থাকে না। আদালতের কেস ডকেট দেখে তার মামলার সাক্ষ্য দেন। কিন্তু কেস ডকেট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তারা ভালোমতো সাক্ষ্য দিতে পারবেন না। আর এতে আসামিরা মামলা থেকে খালাস পাবেন।

মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জানান, যেকোনো মামলার প্রাণ হলো কেস ডকেট। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সাক্ষীদের সাক্ষ্য জরুরি। কেননা, একজন বিচারক মামলার বিচার করার সময় সাক্ষীদের জবানবন্দি আর জেরা পর্যালোচনা করেন। কিন্তু মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এভাবে কেস ডকেট (সিডি) নষ্ট হওয়া খুবই হতাশাজনক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ অন্যদের সাক্ষী দিতে কেস ডকেটের প্রয়োজন। রাষ্ট্রপক্ষ কেস ডকেট ছাড়া মামলার সাক্ষীদের কোনো সহায়তা করতে পারবেন না। আর এতে প্রকৃত অপরাধীরা খালাস পেয়ে যাবেন।

আইনজীবী আরো বলেন, পুলিশের উচিত ছিল এসব কেস ডকেট আদালতের সরকারি কৌঁসুলিদের দিয়ে দেওয়া। কিন্তু নিজেদের কাছে এগুলো অবহেলা অবস্থায় রেখে রাষ্ট্রের ও বিচার বিভাগের অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে আদালতের কোর্ট পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, এমন ধরনের তথ্য আমার কাছে নেই। নষ্ট হলেও দু-একটি নষ্ট হতে পারে। আর কেস ডকেট রাখার দায়িত্ব হলো পিপিদের কাছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো ধরনের ভূমিকা নেই বলে জানান তিনি।