ছাত্রদলের দুই বছরের কমিটি চলছে পাঁচ বছর ধরে

Looks like you've blocked notifications!
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মিছিল করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছবি : ফোকাস বাংলা

প্রায় পাঁচ বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত নতুন কমিটি হয়নি বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের। সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুসারে দুই বছর পর পর কমিটি করার কথা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না।

সর্বশেষ ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয় ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর। সভাপতি হিসেবে রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আকরামুল হাসানকে নির্বাচিত করা হয়।

ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজীব আহসান ১৯৯৩ সালে এসএসসি পাস করেছেন আর সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাস করেন। রাজীব-আকরাম কমিটির সময় ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন পর এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়, যাতে ৭৩৬ জনকে পদ দেওয়া হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে তখন ছাত্রনেতাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে সবাইকে পদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি সংগঠনটির। দুই বছর মেয়াদের এই কমিটি এখনো বহাল রয়েছে। পরবর্তী সময়ে কমিটিতে শীর্ষ পদে আসতে পদপ্রত্যাশীরা অপেক্ষার প্রহর গুনলেও কার্যত নতুন কমিটি গঠনে কোনো উদ্যোগ নেই।

এদিকে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসান-আকরামুল হাসান কমিটির পর পদবঞ্চিত ছাত্রদলের অনেক নেতা বিদ্রোহ করেন। সে সময় তাঁরা বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেন। যদিও পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিদ্রোহীদের পদায়ন করা হয়েছে।

ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রে দুই বছর পরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করার কথা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, নিয়মিত ছাত্রদের বাদ দিয়ে বয়স্কদের দিয়ে বারবার কমিটি করায় ক্ষোভ রয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাঁরা বলছেন, ছাত্রদল হচ্ছে ছাত্রদের সংগঠন। কিন্তু সেখানে যখন নিয়মিত ছাত্ররা নেতৃত্ব বঞ্চিত হয়, তখন যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠবে কী করে? আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ও নতুন নেতৃত্বের জন্য ছাত্রদলের নেতৃত্ব নিয়মিত ছাত্রদের হাতে তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া গঠনতন্ত্র মেনে দুই বছর পরপর কমিটি গঠন করতে হবে। তাহলে আর নেতৃত্বের জট তৈরি হবে না। আবার কেউ নেতৃত্ব বঞ্চিতও হবে না।

ছাত্রদলের কমিটির বিষয়ে জানতে বর্তমান কমিটির সহসভাপতি নাজমুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসলে শুধু ছাত্রদল নয়। যেকোনো ছাত্রসংগঠনের সেন্ট্রাল (কেন্দ্রীয়) কমিটি নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে হয় না। সেটা ছাত্রদল হোক, ছাত্রলীগ বা ছাত্র ইউনিয়নসহ যেকোনো ছাত্রসংগঠনই হোক না কেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র, অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিতদের দিয়ে কমিটি করা হয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটিগুলো নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে করা উচিত। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাই ছাত্ররাজনীতি করবে।’

নাজমুল আরো বলেন, ‘ছাত্রদলের কমিটি দীর্ঘদিন না হওয়ার পেছনে অন্যতম আরেকটি কারণ আছে। সেটি হলো, আমরা ১০ বছরের বেশি সময় বিরোধী দলে আছি। এ সময় সরকারের নানা দমন-নিপীড়নের কারণে ইচ্ছে থাকলেও কমিটি করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে বিএনপির হাইকমান্ড খুবই আন্তরিক ছাত্রদলের কমিটির বিষয়ে। আশা করছি, খুব দ্রুত ছাত্রদলের নতুন কমিটি হবে।’

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোক্তার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক বৈরী পরিস্থিতির কারণে ছাত্রদলের কমিটি গঠনে কিছুটা ধীর লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে এটাও সত্য, কমিটি গঠনে দীর্ঘ সময় পার হলে বা এক কমিটি দীর্ঘদিন থাকলে নেতৃত্বের ঘাটতি তৈরি হয়। নতুনরা নেতৃত্বে আসার সুযোগ পায় না। আমি নিজেও গঠনতন্ত্র মেনে নির্ধারিত সময়ে কমিটি গঠনের পক্ষে। তাহলে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা আরো সক্রিয় হতে পারবে রাজনীতিতে। একই সঙ্গে আগামী দিনের নতুন নেতৃত্বও বিকশিত হবে।’

নিয়মিত ছাত্রদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে মোক্তার হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংসদে মূলত অভিজ্ঞদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় কমিটিগুলোতে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না। তবে নিয়মিত ছাত্ররা নেতৃত্বে না এলে জট তৈরি হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

ছাত্রদলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম রানা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম আন্তরিক আছে। দ্রুতই নতুন কমিটি করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শাখাগুলোতে নিয়মিত ছাত্রদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা আছে।’

দীর্ঘ সময় কমিটি না হওয়ায় কর্মীরা হতাশ কি না জানতে চাইলে শামসুল বলেন, ‘যারা রাজনীতি করে, সবাই চায় নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে। কিন্তু যখন একটা কমিটি দীর্ঘদিন বহাল থাকে তখন নেতাকর্মীরা কিছুটা হতাশ হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের এক নেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সিনিয়রদের দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি হয়, ভালো কথা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কমিটিগুলো যখন বয়স্কদের দিয়ে হয়, তখন নেতৃত্বের জট তৈরি হয়। তাই দলের হাইকমান্ডের কাছে আমাদের দাবি, নিয়মিত কমিটি গঠন করা হোক। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ইউনিটগুলোতে নিয়মিত ছাত্রদের নেতৃত্ব দেওয়া হোক। তাহলে আগামী দিনের নতুন নতুন নেতা তৈরি হবে।’