রাউধার হোস্টেলে মালদ্বীপের পুলিশ
রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ও আন্তর্জাতিক মডেল তারকা রাউধা আতিফের আত্মহত্যার ঘটনার সরেজমিন অনুসন্ধান শুরু করেছে মালদ্বীপের পুলিশ। দেশটির দুই পুলিশ কর্মকর্তা আজ মঙ্গলবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে যান এবং রাউধার সহপাঠীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
গত ২৯ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাউধা আতিফের (২০) মৃতদেহ রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করে নগরীর শাহ মখদুম থানার পুলিশ। রাউধা ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি গত বছর জানুয়ারিতে মালদ্বীপ থেকে রাজশাহীতে আসেন ডাক্তারি পড়তে।
মালদ্বীপ পুলিশের জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রিয়াজ ও জ্যেষ্ঠ পুলিশ পরিদর্শক আহম্মেদ আলী মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘটনাস্থল রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল ঘুরে দেখেন। এ সময় তাঁরা হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রী, রাউধার সহপাঠী এবং কলেজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালদ্বীপ পুলিশের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি ডিবি) আলামিন হোসেন বলেন, ‘রাউধা আতিফের মৃত্যুর বিষয়টির সরেজমিন খোঁজখবর নিতেই মালদ্বীপ পুলিশের দুই কর্মকর্তা রাজশাহীতে এসেছেন।’ তাদের তদন্তের প্রক্রিয়াটি কী হবে, সে সম্পর্কে আপাতত কিছু জানাতে চাননি তাঁরা।
রাউধার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রাশেদুল হক বলেন, ‘মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের নিজেদের মতো খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব। তবে মামলার মূল তদন্ত আমরাই করছি। আমরাই করব।’
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, রাউধার আত্মহত্যার বিষয়টি মানতে পারছে না তাঁর পরিবার। রাউধার বাবা মালদ্বীপ সরকারের কাছে ঘটনাটি তদন্তে সহযোগিতা চেয়েছেন। ফলে মালদ্বীপ সরকারের নির্দেশে রাউধার মৃত্যুর ঘটনার খোঁজখবর নিতে পুলিশের দুই কর্মকর্তা রাজশাহী এসেছেন।
নাম প্রকাশ না করার করার শর্তে রাজশাহী মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রাউধার অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি মানতে পারছে না তার পরিবার। তাঁরা মনে করছেন, রাউধাকে হত্যা করা হয়েছে। অথবা এখানে বড় ধরনের কিছু ঘটেছে, যাতে রাউধা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ কারণেই তাঁর বাবা মালদ্বীপ সরকারের কাছে ঘটনাটি তদন্তে সহযোগিতা চেয়েছেন। ফলে মালদ্বীপ সরকারের নির্দেশে রাউধার মৃত্যুর ঘটনাটির খোঁজখবর নিতে পুলিশের দুই কর্মকর্তা রাজশাহীতে এসেছেন।
এর আগে গত শুক্রবার রাউধার বাবা মোহাম্মদ আতিফ ও মা আমিনাথ মুহারমিমাথ দাবি করেছিলেন, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন না। রাউধা আত্মহত্যা করতে পারেন, এটি তাঁরা বিশ্বাসই করেন না। ফলে রাউধার মৃত্যুরহস্যের জট না খোলা পর্যন্ত তাঁর বাবা-মাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন। তাঁদের সঙ্গে আসা অন্য ছয় সদস্য মালদ্বীপ ফিরে গেছে। যদিও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে রাউধা আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রতিবেদন দিয়েছে।
রাউধা আন্তর্জাতিক মডেল ছিলেন। ‘ভোগ ইন্ডিয়া’ ২০১৬-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রচ্ছদে রাউধার ছবি প্রকাশ করে। পুলিশ রাউধার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে।
গত শনিবার দুপুরে রাউধার লাশ রাজশাহী মহানগরীর হেতেম খাঁ কবরস্থানে তাঁর বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে দাফন করা হয়।