রাউধার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ পরিবারের
মালদ্বীপের ‘নীল নয়না’ খ্যাত মডেল কন্যা ও রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী রাউধা আতিফের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। সন্দেহের বিষয়টি তাঁরা মৌখিকভাবে পুলিশকে জানালেও কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি।
তবে বাবা-মায়ের পারিবারিক বিরোধের কারণে শেষ পর্যন্ত শনিবার দুপুরে রাউধার লাশ রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মডেল কন্যা রাউধার মৃত্যু ও তাঁর লাশের ময়নাতদন্তসহ সব প্রক্রিয়া নিয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের প্রতিনিধিদল এবং রাউধার বাবা-মায়ের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) আমির জাফর। তিনি বলেন, রাউধার চিকিৎসক বাবা মোহাম্মদ আতিফ মৌখিকভাবে অভিযোগ তুলেছেন, পুলিশ পৌঁছানোর আগে কেন লাশ নামানো হয়েছে। এ ছাড়া রাউধা আত্মহত্যা করতে পারেন, সেটিও তাঁর বাবা-মা বিশ্বাস করেন না। লাশ উদ্ধারের আগের রাত বাংলাদেশ সময় ১১টার দিকে সর্বশেষ রাউধার সঙ্গে তাঁর বাবা মোহাম্মদ আতিফের কথা হয়েছে বলে আলোচনার সময় তাঁরা জানিয়েছেন।
আমির জাফর বলেন, রাউধার মৃত্যু নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলে রাউধার বাবা-মাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা কোনো অভিযোগ দেননি। তবে তাঁরা অভিযোগ না দিলেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান আমির জাফর।
প্রাথমিক তদন্তের বরাদ দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আমির জাফর বলেন, রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রীনিবাসের দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশের ব্লকে রাউধাসহ ছয়জন বিদেশি ছাত্রী থাকতেন। যাঁদের মধ্যে রাউধা একাই থাকতেন ২০৯ নম্বর কক্ষে। অপর পাঁচ ছাত্রী থাকতেন তিনটি কক্ষে। গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাউধার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তাঁকে ডাকতে যান সহপাঠীরা। জানালা দিয়ে দেখতে পান রাউধা সিলিং ফ্যানে ঝুলছেন। তাঁরাই রাউধাকে নামিয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক ডেকে আনেন। চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণার পর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ যাওয়ার আগে কেন রাউধার লাশ নামানো হলো, তাতেই সন্দেহ তাঁর বাবা-মায়ের। পুলিশও গুরুত্ব দিয়ে সে বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে, গলার ফাঁসে রাউধার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে রাউধার লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে।
ময়নাতদন্ত বোর্ডের সদস্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এনামুল হক বলেন, রাউধার গলায় কাপড় পেঁচানোর দাগ ছাড়া শরীরের অন্য কোথাও কোনো দাগ পাওয়া যায়নি। গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে যাওয়ার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে বাবা-মায়ের বিরোধের কারণে রাউধা আতিফের লাশ রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের এক কর্তকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, রাউধার বাবা ও মায়ের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। যে বিরোধের জের ধরে তাঁরা আলাদা বসবাস করেন। বাবা চাইতেন রাউধা চিকিৎসক হোক, আর মা চাইতেন রাউধা খ্যাতনামা মডেল তারকা হোক। এ ছাড়া রাজশাহীতে আসার পর রাউধার লাশ বাবা, না মা নিয়ে যাবেন এবং খরচ কে বহন করবেন, এ নিয়েও তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। যার কারণে পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় লাশ রাজশাহীতে দাফনের।
শনিবার দুপুরে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রাউধা আতিফের লাশ রাজশাহী নগরীর হেতেম খাঁ গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও রাউধার পরিবারের ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। রাউধার বাবা চিকিৎসক মোহাম্মদ আতিফ নিজে মেয়ের মৃতদেহ কবরে নামান।
গত বুধবার দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেল থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মালদ্বীপের মালে এলাকার ‘নীল নয়না’ আন্তর্জাতিক মডেল তারকা রাউধা মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গত বছরের ২২ অক্টোবর ভারতের ভোগ সাময়িকীর প্রচ্ছদে মডেল তারকাদের সঙ্গে ছবি ছাপা হয় রাউধার।