গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস ও তার প্রতিকার
গর্ভাবস্থায় অনেকেরই ডায়াবেটিস হতে দেখা যায়। মায়ের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আজ ৩ এপ্রিল এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৯৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বারডেম হাসপাতালের প্রসূতি এবং ধাত্রী বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ সুলতানা।
প্রশ্ন : গর্ভকালীন অনেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ডায়াবেটিস বিষয়টি কী? এর সঙ্গে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের কী সম্পর্ক?
উত্তর : রক্তে যখন শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে। অনেকের সন্তানসম্ভবা হওয়ার আগে থেকেই ডায়াবেটিস থাকে। আবার অনেকে সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, একে আমরা জিডিএম বা জেসটেশনাল ডায়াবেটিস বলি।
প্রশ্ন : একজন মা গর্ভবতী হওয়ার সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন কেন বা এর ঝুঁকিটা কী?
উত্তর : জেসটেশনাল ডায়াবেটিস সবার যে হয় তা নয়, কারো কারো হয়। যাঁরা একটু মোটা, তাঁদের এই সমস্যা হয়। আবার যদি কারো পরিবারে এ সমস্যা থাকে, তাঁদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া গর্ভকালীন কিছু হরমোন বেড়ে যায়, যেগুলোকে আমরা ডায়াবেটোজেনিক বলি, সেগুলোও ডায়াবেটিস তৈরি করে। এসব কারণে এ সময় ডায়াবেটিস হয়।
প্রশ্ন : যদি প্রথমবারের মতো কোনো মা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, পরবর্তী সময়ে গর্ভকালীন অবস্থায় কি এর ঝুঁকি থেকে যায়?
উত্তর : যাঁদের খুব অল্প মাত্রায় ডায়াবেটিস থাকে, তাঁরা ডায়েট করেই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তাঁদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস আর পরে থাকে না। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে থেকে যায়। যাঁদের ফাস্টিং লেভেল বেশি থাকে, ইনসুলিন বেশি দিতে হয়, তাঁদের ডায়াবেটিস থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : যাঁদের বেলায় সন্তান প্রসবের সময় এমনি এমনি ভালো হয়ে যায়, তাঁদের কি পরবর্তী বাচ্চা নেওয়ার সময় আবারো ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে?
উত্তর : ঝুঁকি থাকে। কিন্তু সব সময়েই যে হবে, তা নয়। প্রথম গর্ভাবস্থায় যে ঝুঁকির কারণ বা রিস্ক ফেক্টর ছিল, সেগুলো যদি চলে যায় তাহলে তাঁর ডায়াবেটিস না-ও হতে পারে। তবে যদি ঝুঁকির কারণ এড়িয়ে চলতে না পারে, তাহলে আবারো ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ে আমরা এত চিন্তিত হয়ে যাই কেন?
উত্তর : সাধারণ মায়ের বাচ্চাদের থেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের বাচ্চাদের শারীরিক জটিলতা বেশি হয়। একদম শুরু থেকে বললে এসব মায়ের গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি বা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তার প্রসব হতে পারে। প্রসব হওয়ার পর বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অন্য বাচ্চাদের যেসব সমস্যা হয়, এই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সেসব সমস্যা বেশি হয়। এ ছাড়া জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। সে জন্য গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসকে আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখি।
প্রশ্ন : এর চিকিৎসা কীভাবে করতে হয়?
উত্তর : যে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়টি আমরা চাই, সেটি হলো ডায়াবেটিস থাকবে ৫-এর মধ্যে এবং খাবার গ্রহণের পর তা ৬-এর মধ্যে হতে হবে। খুব শক্ত নিয়ন্ত্রণ চাই। কেননা, শক্ত নিয়ন্ত্রণ না হলে অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করে। সে জন্য আমরা প্রথমে একটা খাদ্যতালিকা দিই। যদি হাঁটতে কোনো নিষেধ না থাকে, তাহলে আমরা তাকে হাঁটতে বলি। অনেকে মনে করেন, গর্ভকালীন হাঁটাহাঁটি করা যায় না। কিন্তু যদি কোনো জটিলতা না থাকে, তবে সে আধা ঘণ্টা হাঁটতে পারবে। আর তাতেও যদি না হয়, তখন আমরা তাকে ইনসুলিন দিই। মুখে খাওয়ার কোনো ওষুধ দিই না। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়মিত একজন গাইনোকোলজিস্টের ফলোআপে থাকতে হবে। আর গাইনোকোলজিস্ট যদি একা না পারে, তবে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা ডায়বেটোলজিস্টের কাছে রোগীকে যেতে হবে।