অ্যাডিনয়েড শিশুদের কেন বেশি হয়?
অ্যাডিনয়েড নাকের পেছনে অবস্থিত এক ধরনের লিম্ফয়েড টিস্যু। এটি শিশুদের বেশি হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬৩৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ফুয়াদ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন। বর্তমানে তিনি হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেলের নাক কান গলা বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : অ্যাডিনয়েড কাদের বেশি হয়? কেন?
উত্তর : অ্যাডিনয়েডের একটি জীবনচক্র আছে। সাধারণত তিন বছর বয়স থেকে এর বৃদ্ধি শুরু হয়। সাত আট বছরে এটা চরম পর্যায়ে যায়। এরপর এর বৃদ্ধি কমে গিয়ে ১১-১২ বছরে একদমই কমে যায়।
তাহলে সমস্যা হয় কখন? যদি দেখা যায় এর বৃদ্ধি খুব অস্বাভাবাবিক। কতটা অস্বাভাবিক? দেখা যায় যে বাচ্চারা যে শ্বাস নিচ্ছে, সেই শ্বাস নেওয়ার রাস্তা কিন্তু ওই ন্যাজোফেরিংস দিয়ে যাচ্ছে। নাকে পেছন দিয়ে বাতাস গিয়ে এরপর সেটা ফুসফুসে চলে যাচ্ছে। এখন এটা করে কী, নদী দখলের মতো ন্যাজোফ্যারিংসের বাতাস যাওয়ার যে রাস্তা, সেটিকে সে বন্ধ করে ফেলে। বন্ধ করার পর বাচ্চারা যে স্বাভাবিক শ্বাস নেওয়াটা সেটা তার হয় না। বিশেষ করে নাক দিয়ে যে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার বিষয় সেটি বন্ধ থাকে। তখন দেখা যায় বাচ্চারা মুখ হা করে থাকে। অনেকে বলে আপনার বাচ্চাটি হা করে আছে কেন? বাচ্চা হয়তো টিভি দেখছে বা কারো কথা শুনছে বোকার মতো হা করে আছে। অনেকে মনে করছে এটি হয়তো তার একটি অভ্যাস। আসলে সেটি নয়, সে কিন্তু মুখ দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে, কারণ সে একটি বিকল্প পথ তৈরি করার চেষ্টা করছে।
এমনকি ঘুমের মধ্যেও হা করে থাকছে। এ ধরনের শিশুরা দেখা যায় ঘুমের মধ্যে হা করে শ্বাস নেয়, অনেক সময় দেখা যায় বুক ধরফর করে ওঠে পড়ে ঘুম থেকে। একে আমরা স্লিপ এপনিয়া বলে থাকি। অনেক সময় দেখা যায় ঘুমের মধ্যে সে প্রস্রাবও করে দেয়। তাকে হয়তো টয়লেট ট্রেনিং ঠিকমতো দেওয়া হয়েছে। তবে একটি নির্দিষ্ট সময় যখন মস্তিষ্কে আর বাতাস ঠিক মতো না পৌঁছতে পারে, দেখা যায় সে ওই সময় বিছানায় প্রস্রাবও করে দেয়। এ ধরনের বাচ্চাদের কিন্তু চেনার একটি উপায় আছে। বাবা মায়েরা অনেক সময় ভাবেন আমি বুঝব কী করে? এ ধরনের বাচ্চারা মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। আরেকটি হলো এই ধরনের বাচ্চাদের প্রতি মাসে ঠান্ডা লাগে।
আর আপনি জিজ্ঞেস করছিলেন কেন হয় এই বয়সে এটি? আসলে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে যেটি দেখছি, আমরাতো খুব ঘন বসতি পূর্ণ এলাকায় থাকি, সেটা আপনি গরীবই বলেন আর বড়লোকই বলেন। বড়লোকে বাড়িগুলোও এখন একটা বস্তিতে পরিণত হয়েছে। আর ক্রস ভ্যান্টিলেশন বা বায়ু চলচলের জায়গা খুব কম। বাসা খোলামেলা নয়, আলোবাতাস পাওয়া যায় না। বাসা খুব স্যাঁতস্যাঁতে। বাচ্চা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার বা টেবিলে বসে খেলছে, মোবাইল ব্যবহার করছে বা গ্যাজেট নির্ভর জীবন যাপন। এতে হয় কী, এদের মধ্যে অ্যালার্জির একটি বড় বিষয় থাকে। এখন এ ধরনের জিনিসগুলোর যে সমস্যা হয়, এরা কিন্তু একটু শ্রুতি বধিরতাতেও ভোগে। এদের যখন অ্যাডিনয়েডের বৃদ্ধি হয়, নাকের সঙ্গে কানের একটি টিউব থাকে, ইউসটেসিয়ান টিউব বলে, ফলে দেখা যায় ইউসটেসিয়ান টিউব যখন কাজ করতে না পারে, এই বাচ্চারা কানে কম শোনে, স্কুলে তাদের পারফরমেন্স প্রথম দিকে খুব ভালো থাকে, এরপর দেখা যায় ধীরে ধীরে খারাপ করে। এরা যখন টিভি দেখে, টিভির ভলিউ্যুম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সে আসলে শুনছে না বলেই ভলিউম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আরেকটি হলো এরা হলো প্রায়ই কান ব্যথার কথা বলে। কারণ ইউসটেশিয়ান টিউব ব্লক হয়ে দেখা যায় কানের পর্দার মধ্যে প্রদাহ হয়। তখন কিন্তু তার কান ব্যথার কথাও বলে।
এই যে একটি বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধির যে সময়, তার এই মস্তিষ্ক কিন্তু বিকাশমান মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের জন্য খাবার কিন্তু অক্সিজেন। একটি বড় খাবার কিন্তু অক্সিজেন। সেটা সে পাচ্ছে না। এতে একটি স্বাভাবিক শিশু যার অ্যাডিনয়েডের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নেই, তার তুলনায় যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হচ্ছে, সেই শিশুটিরও কিন্তু মস্তিষ্কের বৃদ্ধি কম হচ্ছে। তার চেহারা একটু বোকা বোকা হচ্ছে।