মডেল রাউধার লাশ তুলে আবার ময়নাতদন্তের নির্দেশ
রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ও মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফের লাশ কবর থেকে তুলে আবারও ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে রাজশাহী মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত ১-এর বিচারক মাহবুবুর রহমান এই নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পরিদর্শক আবুল হাশেম এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, রাউধার লাশের আরেকবার ময়নাতদন্ত করতে চায় সিআইডি। এ জন্য লাশ কবর থেকে তুলতে সিআইডির পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। মঙ্গলবার আবেদনের শুনানি শেষে আদালত আবার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন।
আবুল হাশেম জানান, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ তোলার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কোন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন বা কবে লাশ তোলা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) এগুলো ঠিক করে দেবেন। পরে তা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানানো হবে।
জানতে চাইলে রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক বলেন, ‘রাউধার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে যেহেতু দুই রকম মামলা হয়েছে, তাই আমরা মনে করি লাশের আবারও ময়নাতদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এ জন্যই আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। রাউধা হত্যাকাণ্ডের শিকার কি না, তা আরেকবার ময়নাতদন্ত করে আমরা নিশ্চিত হতে চাই।’
গত ২৯ মার্চ রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়ায় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেল থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাউধা এই কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। নীল নয়না রাউধা ছিলেন মালদ্বীপের একজন উঠতি মডেল। মাত্র একুশ বছরের রাউধার ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তিনি হয়েছিলেন ভোগ সাময়িকীর প্রচ্ছদকন্যাদের একজন।
রাউধার লাশ উদ্ধারের দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছিল, তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ওই দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে নগরীর শাহমখদুম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। এরপর রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যর একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিল।
তিন সদস্যের বোর্ড ময়নাতদন্ত করে পুলিশকে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে রাউধা আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাউধাকে রাজশাহী নগরীর হেতেমখাঁ কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর পর মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহীতে এসে ঘটনা তদন্ত করেন। দেশে ফিরে গিয়ে তারা জানান, রাউধাকে হত্যার কোনো প্রমাণ তাঁরা পাননি।
রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে কমিটিও তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন।
তবে গত ১০ এপ্রিল রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। এর পর থেকে তিনি রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন।
হত্যা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাউধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এ মামলায় রাউধার সহপাঠী ও ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। সিরাতের বাড়ি ভারতের কাশ্মীরে। সিরাতের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
সিআইডি বলছে, কেবল হত্যার প্রমাণ মিললেই সিরাত পারভীনকে গ্রেপ্তার করা হবে। তবে তাঁকে নজরদারির ভেতর রাখা হয়েছে।
রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলাটির প্রথম তদন্ত করছিলেন নগরীর শাহ মখদুম থানার পরিদর্শক আনোয়ার আলী তুহীন। আর অপমৃত্যুর মামলাটি তদন্ত করছিলেন মহানগর ডিবির পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম।
রাউধার মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে তাঁর কক্ষ থেকে জব্দ করা ল্যাপটপ ও মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সেগুলো সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছেন রাশিদুল ইসলাম। সে প্রতিবেদন এখনো ঢাকা থেকে আসেনি। এরই মধ্যে গত ১৩ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলা দুটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। এর পরই রাউধার লাশের পুনরায় ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেয় সিআইডি। রাউধার লাশ কবর থেকে তুলতে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা আসমাউল হক গত রোববার আদালতে আবেদন করেছিলেন।