গল্প
পর জনমে
মোড়ের মাথার বড় দোতলা বাড়িটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয় রুকসানা। এখন তো কোনো পূজা-পার্বণ-মোচ্ছব কিচ্ছু নেই! তবুও বাড়িটাতে এত লাইট লাগিয়েছে কেন? সন্ধ্যার অন্ধকারে সবুজ, নীল ও সাদা আলোতে ঝলমল করছে বাড়িটা। কোনো অনুষ্ঠান আছে মনে হয়। কিসের অনুষ্ঠান? উত্তমের বিয়ে নয় তো? ভেবেই চমকে উঠল রুকসানা। হতেই পারে। হ্যাঁ, তাই-ই হবে। উত্তমেরই বিয়ে। বয়স তো কম হলো না। নয় নয় করে ত্রিশের কোঠা ছুঁয়েছে। ওর পরের ভাইবোনদের সব বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেছে। উত্তমই শুধু বিয়েটা করছিল না। বিদেশে চাকরি নিয়েছিল। আফগানিস্তানে। যুদ্ধের এলাকায় গোরা সাহেবদের জন্য রান্নার কাজ করত। আম্মি বলে, নয় নয় করে মাসে ষাট-সত্তর হাজার টাকা বাড়িতে পাঠায়। গত ১০ বছর বাইরেই থাকে উত্তম। ওর টাকাতেই দেখতে দেখতে ওদের দরমার বেড়ার বাড়ির জায়গায় পাকা দোতলা বাড়ি সবার চোখ টাটানির কারণ হয়ে উঠল। ওর যে ভাইবোনগুলো এক জামা এক কাপড়ে বছর কাটিয়ে দিত, এখন এবেলা ওবেলা ড্রেস বদলায়। চেহারাতেও চেকনাই এসেছে। দেখে চেনাই দায়।
উত্তমকে গেলবার ঈদের সময় এসে এক ঝলক দেখেছিল রুকসানা। সাহেব সেজে থাকে। জিনসের প্যান্ট, জ্যাকেট, পায়ে দামি জুতো- রুকসানা ইচ্ছা করেই দেখা দেয়নি।নিজেকে বড্ড ছোট লেগেছিল।
-রুকসানা, আমি তোকে বিয়ে করব।
ক্লাস ফাইভে বলেছিল উত্তম। ওরা দুজনে এক স্কুলে পড়ত, একই ক্লাসে। ওদের মফঃস্বলের মুসলমানপাড়ার মোড়ের মাথায় উত্তমদের বাড়ি। ওদের বাড়ির পর থেকে টানা মুসলমানদের বাস। একঘর হিন্দুও নেই। পাড়ার মাঝে মসজিদ। মসজিদের গা ঘেঁষে স্কুল। মাদ্রাসা নয়, সরকারি বাংলা স্কুল। রুকসানা পড়াশুনায় মন্দ ছিল না। উত্তম পিছন দিকের ছাত্র ছিল।
-যা! তোকে আমি বিয়ে করব কী করে?
অবাক হয়েছিল রুকসানা। একে তো লাস্টবেঞ্চে বসে ছেলেটা, তার ওপর হিন্দু। হিন্দুদের সাথে আবার বিয়ে হয় নাকি?
-কেন? আমি খারাপ কিসে?
-তুই হিন্দু।
-তোকে বিয়ে করে মুসলমান হয়ে যাব না হয়। এই রুকসানা, বিয়ে করবি আমায়?
ছেলেটাকে ভালো করে দেখেছিল রুকসানা। ভারি মিষ্টি দেখতে। পরিষ্কার গায়ের রং, চোখা নাক চোখ- রুকসানা তো কালো! তাহলে ওকে উত্তমের মনে ধরল কী করে? ছেলেটার জামাকাপড় অবশ্য সুবিধার নয়। ময়লা। সাদা শার্টটা পুরোপুরি সাদা নয়। হলদেটে। তা যাই হোক, অত সুন্দর ছেলেটা পছন্দ তো করে ওকে। রুকসানার জানতে ইচ্ছে করেছিল
-বিয়ে করবি কেন?
-তোকে ভালোবাসি যে!
ভালোবাসি- শব্দটা রুকসানার ভারি ভালো লেগেছিল। ওর সবকটা দিদির বিয়ে হয়ে গেছে তখন। দিদিরা বাড়িতে এলে, নিজেদের মধ্যে গোলটেবিল বসায়। রুকসানাকে নেয় না সেখানে। নিজেদের মধ্যে কথা বলে, হাসে। রুকসানা কান পেতে শুনেছে ওদের কথা। মেজদি সেজদিকে বলছিল
-তোর বরটা বড় আঁচল ধরা! তোকে চোখে হারায় যেন।
-আর দুলাভাই? দুলাভাই তো তোমাকে এখানে আসতে দিচ্ছিল না।
-ও তো কে সংসার দেখবে তা ভেবে, আমাকে আসতে দেয় না।
-রাখো! দুলাভাই তোমায় খুব ভালোবাসে, সেটা সবাই জানে। একদিনও ফারজানা ছাড়া চলে না।
-থাম মুখপুড়ি!
ফয়জল দুলাভাইকে কেমন যেন গম্ভীর গম্ভীর মনে হতো রুকসানার। চুপচাপ থাকে, কোনো কথা বলে না। কোন হাসি, তামাশা, মজা- কিচ্ছু না। সেই ফয়জল মিয়াই মেজদিকে তলেতলে এত ভালোবাসে? তাহলে এই ছেলেটা রুকসানাকে ভালোবাসতেই পারে।
-রুকসানা, যাবি আমাদের বাড়ি?
ছেলেটার কথায় না করতে পারে না রুকসানা। ওদের পাড়ার মোড়েই তো উত্তমদের বাড়ি। গেলেই হয়।
-যাব।
বলে ওঠে রুকসানা।
***
আম্মির গলার আওয়াজে চমকে ওঠে রুকসানা। আব্বার জন্য ওষুধ কিনতে বেড়িয়েছিল ওরা দুজনে। সবে গতকাল শ্বশুরবাড়ি থেকে আম্মির কাছে এসেছে ও। আব্বার স্ট্রোক হয়ে গেছে মাসখানেক আগে। বিছানায় শয্যাশায়ী। বড়দি, মেজদি এত দিন ছিল। ওদেরও সংসার আছে। তাই এবার রুকসানার পালা। ভাই, ভাইয়ের বউ একদম জুতের না। আম্মি-আব্বার পয়সাতেই ওদের চলে। ভাইটা ঘরে বসা। কিচ্ছু কামাই করে না। আব্বার বড় কসাইখানা ছিল, মানে এখনো আছে। আব্বা যেতে পারে না বলে মইনুল ভাই চালায়। মইনুল ভাই রুকসানার সেজদির বর। সেজদিকে একই শহরে বিয়ে দিয়েছিল আব্বা। মইনুল ভাই রুকসানারই ফুফাতো দাদা। ওরাই আম্মি-আব্বাকে দেখভালো করে। ভাইটা জীবনে কখনো জাতব্যবসা করে দেখল না। লুঙ্গি পরে, খালি গায়ে মাংস বেচলে নাকি ইজ্জত চলে যাবে। পড়ালেখা করেছে অনেক। শুধু চাকরির পরীক্ষাই দিয়ে যায়। চাকরি তো জোটেই না উপরন্তু বিয়ে করে দুটো বাচ্চা পয়দা করে ফেলেছে। সবাই মিলে আম্মি-আব্বার বুকের ওপর বসে আছে।
আব্বার যদি আর কখনো সুস্থ না হয় তবে আম্মির কী হবে ভেবেই কুলকিনারা পায় না রুকসানা। ওর নিজেরও তো হাঁড়ির হাল। শোয়েবের আব্বাও বসা। বছর চারেক আগে একটা বাস দুর্ঘটনায় কোমরের হাড় ভেঙে অকেজো হয়ে গেছে। একদম পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল, বছর খানেক হলো- চলতে ফিরতে পারে। ওরও মাংসের ব্যবসা। হপ্তায় টেনেটুনে দুই দিন দোকান খুলতে পারে। চার বছর ধরে রুকসানা নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। ছেলেমেয়ে দুটোকে পড়াচ্ছে। শোয়েবের এবার ক্লাস এইট, রুকসারের সিক্স। ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল রুকসানার। তখন ওর ক্লাস নাইন। পড়ালেখায় ভালো ছিল। নিজে পড়তে চেয়েছিল, আরো অনেক পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু আব্বা সানাউল্লাহ শেখের মতো ভালো পাত্র হাতছাড়া করতে চায়নি। পাশের শহরেই থাকে, বড় ব্যবসা আছে, বড় ঘরের ছেলে, দেখতে মন্দ না, বয়সটাই যা একটু বেশি, বছর একত্রিশের মতো- কিন্তু তাতে কী? পুরুষ মানুষের আবার বয়স নিয়ে চিন্তা কিসের? রুকসানাকে এই বলেই বুঝিয়েছিল আম্মি। রুকসানা তখন বোঝেনি, এখন বোঝে- আব্বার কেন এত তাড়া ছিল। নিজের মাথা থেকে শেষ বোঝাটা ঝেড়ে নামিয়ে ফেলতে চেয়েছিল আব্বা। নামিয়েও ফেলেছিল। আর তার সাথেসাথেই রুকসানার স্বপ্নগুলোর ডানা মেলে ওড়াও চিরকালের মতো শেষ হয়ে গিয়েছিল যেন।
-মোড়ের মাথার বাড়িটা এত সাজিয়েছে, আম্মি?
বাড়ি ফিরে আম্মিকে সতর্ক প্রশ্ন করে রুকসানা। আব্বাকে ওষুধ খাইয়ে রান্নাঘরে ঢুকেছিল আম্মি। রাতের রান্না করতে হবে। রুকসানা কুটনো কুটছিল।
-উত্তমের বিয়ে, এই তো সামনেই।
রুকসানার হাত দুটো ওর নিজের অজান্তেই কুটনো কুটতে কুটতে স্থির হয়ে গিয়েছিল এক মুহূর্তের জন্য। সামলে নিয়ে আবার কুটনো কাটতে মন দিল।
-কাল এসেছিল আমাদের নেমতন্ন করতে। বাড়ির সবাইকে বলেছে। তোর খোঁজ করছিল।
-কে এসেছিল?
-কেন, উত্তম? মনে নেই? সেই যে ছেলেটা বিদেশে থাকে- তোর সাথেই ইস্কুলে পড়ত?
রুকসানা এই প্রশ্নের জবাব দিল না। উত্তমকে ও ভুলবে কী করে? ক্লাস ফাইভেই হোক, ছেলেমানুষি খেয়ালেই হোক- উত্তমই শুধু ওকে বলেছিল যে ভালোবাসে। শোয়েবের আব্বা জীবনে কখনো বলেনি। বলবেই বা কেন? একরত্তি একটা মেয়েকে ভালোবাসার কথা বলা যায়? মান থাকে তাতে? বিয়ের পর একবার সিনেমা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল।সিনেমা হলের বক্সে বসেছিল ওরা। ছোট অন্ধকার খুপরি-জোড়ায় জোড়ায় বসে সবাই। সিনেমা শুরু হতে না হতেই-মানে আলো নিভতে না নিভতেই চারিদিকে অন্য সিনেমা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ওদের পাশে বসা বউটা হঠাৎ ব্লাউজের সব হুক খুলে বুকে কেবল পাতলা আঁচল চাপা দিয়ে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ পর বউটার পাশে বসা কমবয়সী ছেলেটা বউটার মাথাটা হাত দিয়ে ঝুঁকিয়ে নিজের কোলের কাছে নিয়ে এসে ওঠানামা করানো শুরু করে দিল। এসব দেখে রুকসানার বরেরও সোহাগ করতে ইচ্ছে হয়েছিল। সে রুকসানাকে ছুঁতেই লাফিয়ে উঠেছিল রুকসানা।
-কী হলো?
-ছি! এখানে না।
- কেন?
-লোকজন রয়েছে…
সানাউল্লাহ শেখ জোর করেনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে গিয়েছিল। পরে ওকে নিজের বন্ধুদের সাথে গল্পেগল্পে বলতে শুনেছে রুকসানা,“ছুঁড়ি বিয়ে করেই বা কী হলো? এত শরম যে কী বলব?” ভিতর ঘর থেকে শুনেই মুখ চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল রুকসানার। এসব কথা সবার সাথে বলতে হয় নাকি? আর ওই সব জড়াজড়ি করা, চুম্মাচাটি, গায়ে হাত দেওয়া মানেই ভালোবাসা নাকি? ভালোবাসা মানে চোখে চোখ পড়া, একটু লজ্জা পাওয়া, একচিলতে হাসি হেসেই পালিয়ে যাওয়া। আঙুলে আঙুল ঠেকলে সারা গায়ে যে শিরশিরানি হয় সেটাই ভালোবাসা।
***
রুকসানার জায়ের মেয়ে রহিমা এবার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। প্রেম করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলে ছেলেটার সাথে। রুকসানা একদিন শুধিয়ে ফেলেছিল
-হ্যাঁ রে, কেমন করে প্রেম করে?
-তুমি জান না?
- না...
- এমা! চাচা তোমায় আই লাভ ইউ বলেনি চাচি?
-মরণ! বিয়ের পর আবার প্রেম হয় নাকি? বিয়ের পর প্রেম বাসি হয়ে যায়।
- তাই? আমার মনে হয় না। জুনায়েদ বলেছে বিয়ের পরও আমাকে এ রকম ভালোবাসবে।
- কখন বলল? ফোনে?
- হ্যাঁ, তা ছাড়া পড়া থেকে ফেরার পথে যখন আমরা বেড়াতে যাই তখনো বলে।
- কোথায় বেড়াতে যাস?
- নদীর ধারে। জানো চাচি জুনায়েদ আর আমি ঘাসের ওপর পাশাপাশি বসে গল্প করি। আমার মাথা ওর কাঁধে থাকে। ও না আমাকে...
রুকসানা রোমাঞ্চিত হয়। ওর চোখে একটা ছবি ভাসতে থাকে। একটা সুন্দর দেখতে ছেলের কাঁধে মাথা দিয়ে নদীর ধারে বসে আছে রুকসানা। শীতের নরম রোদ ওদের গায়ে পড়ছে। ছেলেটা ওর চুলের মধ্যে আঙুল চালাচ্ছে আস্তে আস্তে। হরেক রকমের গল্প বলছে। এক সাইকেলে চড়ে বাড়ি ফিরছে দুজনে। দিন নেই, রাত নেই-যখন তখন ফোনে কথা বলছে ওর সাথে।
- জুনায়েদ তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়?
- দেয় তো! একটা একটা করে বাদাম ছাড়িয়ে ও আমাকে খাওয়ায় আর আমি ওকে। চাচি, তুমি এসব শুধাচ্ছ কেন? তোমার এসবে মন যায়?
- মন যাবে কেন? দুই ছেলেমেয়ের মা হয়ে গেছি, আবার ওসবে মন?
- চাচাকে বোলো তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে। অবশ্য চাচা যাবে কী করে? নিজেই চলতে ফিরতে পারে না তেমন। চাচি, তোমার কিন্তু এখনো বয়স আছে। তুমি দেখতেও বেশ, আর গ্ল্যামার ... ...
রহিমার কথা শুনতে শুনতে হাতের আয়নাটা নিজের মুখের সামনে ধরে রুকসানা। ৩০ বছর, এমন কী বয়স? রুকসানাকে দেখে সেটাও বোঝা দায়। টিপটপ থাকে। সেজেগুজে রাস্তায় বের হয়। এখনো কত লোক তাকায়, দেখে। রহিমার কপালকে হিংসা হয় রুকসানার। কেমন সুন্দর প্রেম করতে পারছে! যদি রুকসানাও ওর মতো প্রেম করতে পারত...নাহ! এ জন্মে আর প্রেমটা হলো না। এখন সারাটা জীবন সংসারের জোয়াল টানতে টানতে কেটে যাবে। ছেলেমেয়ে দুটোকে মানুষ করতে চায় রুকসানা, মানুষের মতো মানুষ করতে চায়। সানাউল্লাহ শেখ সেটাও পারবে না।
***
-রুকসানা…
চেনা গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে তাকাল রুকসানা। বাজারে এসেছিল ও। হলুদ নেই ঘরে, কিনতে এসেছিল। চমকে তাকিয়ে দেখে- উত্তম।
-চিনতে পারলি আমায়?
উত্তমের প্রশ্নে রুকসানা চোখ নামিয়ে নিল
-হ্যাঁ। চিনেছি।
-তোদের বাড়ি গিয়েছিলাম।
-জানি। নেমন্তন্ন করতে। তোর বিয়ে।
রুকসানা উত্তমের দিকে তাকাতে পারে না। অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলে। নিজের দুচোখে কি কিছু লুকাতে চায় ও? রাগ, অভিমান, প্রত্যাশা-কোনটা?
-জানিস তাহলে! তুই আমার ওপর রাগ করেছিস?
রুকসানা আকাশ থেকে পড়ে। উত্তম এ কথা বলল কেন হঠাৎ? কোন অধিকারে ও উত্তমের ওপর রাগ করবে?
-কেন? আমি রাগ করব কেন?
-আমি বিয়ে করতে চাইনি।কিছুতেই করতে চাইনি। মা, বাবা এমন করে বলল ...
উত্তমের গলার আওয়াজে অসহায়ত্ব ঝরে পড়ে। রুকসানার মনে পড়ে ক্লাস ফাইভে একদিন ওকে উত্তমদের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল উত্তম। মাটির ঘর, দরমার বেড়া, টালির চাল, মাটি ফুঁড়ে উঠোনে কেন্নো উঠছে... সব দেখে খুব ঘেন্না করেছিল রুকসানার। গা গুলিয়ে উঠেছিল। রুকসানাদের যে পাকা বাড়ি। বলেই ফেলেছিল
-মা গো! এত গরিব তোরা!
উত্তমের মুখ চুন হয়ে গিয়েছিল। রুকসানা হাত পা নাড়িয়ে বলেছিল।
-আর কোনোদিন বলতে আসবি না, আমায় ভালোবাসিস।
আর কোনোদিন বলতে আসেনি উত্তম। কথাও বলত না আর। দূর থেকে দেখত। রুকসানার স্পষ্ট মনে আছে বিয়ে করে যেদিন ও পাড়া থেকে চলে যাচ্ছিল পাড়ার মোড়ে একজোড়া শূন্য চোখ ওকে দেখছিল। ভিড়ের মাঝে চিনতে পারেনি সেদিন। আজ চিনল।
-বিয়ে তো করতেই হয়।
উত্তমকে সান্ত্বনা দিতে বলল রুকসানা। উত্তম ঘাড় নাড়ল
-তাই তো করছি। না হলে তোকে ছাড়া অন্য কাউকে ...
রুকসানা এদিক-ওদিক তাকায়। কেউ নেই আশপাশে দেখে বলে
-এখন তো তুই মস্ত বড়লোক। আর আমার কপাল দেখ।
-তা বলে আমি তোকে ঘেন্না করি না।
-আমি করেছিলাম, ওই পাপেই তো!
উত্তম হাসে
-না রে, পাপ-টাপ নয়। তোর-আমার এজন্মে হওয়ার ছিল না। কিন্তু দেখি, পরের জন্মে হবে। নির্ঘাত হবে। এত ভালোবাসা বিফলে যায় না।
রুকসানাকে কিছু বলতে না দিয়ে উত্তম চলে যায়। ওকে থামাতে চেয়েও থামাতে পারে না রুকসানা। চোখের কোণ দুটো ভিজে ওঠে। কী যেন বলার ছিল উত্তমকে, কী একটা যেন বলতে চায় ও ... কিছুতেই মনে পড়ে না রুকসানার। কিন্তু ওর চোখের জল বলে দেয় এ জন্মে রুকসানা প্রেম করেনি এই কথাটা আর যাই হোক-সত্যি নয়।