প্রকৃতি
জ্যৈষ্ঠের মধুফল

যদি বলা হয়, কোনটি বাঙালির ফলের মাস? চোখ বুঁজে উত্তর দেয় বাঙালি-রসের মাস, জ্যৈষ্ঠ মাস। সময়টাতে এতটাই গনগনে গরম থাকে যে ঘরের বাইরে থাকা অসম্ভবপ্রায়। বাঙালির আনন্দ গরমে নেই, রয়েছে ফলে। গাছেরও আনন্দ ফলে। বংশবৃদ্ধির টানেই তো ফলের দিকে তার যাওয়া। ফলের দিকে গতিপ্রাপ্ত হওয়াটাই তার নেশা। আর এই নেশা পূর্ণ হয় জ্যৈষ্ঠের সুতীব্র উষ্ণ সময়টাতে। এ সময়ে বাংলাদেশ ভরে ওঠে মধুফলে। বিচিত্র ফলগুলোর রং, বিচিত্র তাদের স্বাদ। কোনোটি দারুণ সুমিষ্ট, কোনোটি পানসে কিন্তু সুস্বাদু, আবার কোনোটি প্রচণ্ড টক। রসালো ফলের সংখ্যাই অবশ্য বেশি। তাই তো সবাই বলে ফলের মাস জ্যৈষ্ঠ, রসের মাস জ্যৈষ্ঠ।
এশিয়ার উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকা ফলফলাদি ফলানোর এক উর্বর ভূমি। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় চারশো ধরনের ভোজ্য ফলের দেখা মেলে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ফলের জন্মস্থান আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার ভূখণ্ডটিতে। প্রায় ৫০ রকমের জনপ্রিয় ফল এখানে উৎপাদিত হয়। আর নিয়মিত চাষ করা হয় কম করে হলেও ২০ রকমের ফল। এগুলো আমাদের অনেকের কাছে সুপরিচিত ফল। কারণ এদেরকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। এগুলো যার যার দেশের অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। আম, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, রাম্বুটান, আনারস, ডুরিয়ান প্রভৃতি দেশগুলোর প্রধানতম বাণিজ্যিক ফল। দক্ষিণ এশিয়ার বাড়িঘরের উঠোনে কিংবা তার আশপাশের ভূমিতে ফলে অধিকাংশ ফল। তবে এর বাইরেও রয়ে গেছে বিচিত্র রকমের ফল। এই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে উৎপাদিত শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ ফলই বনে-বাঁদাড়ে জন্মে। এবং এদের চাষ তেমন একটা হয় না বললেই চলে। জনপ্রিয় ফলগুলোর ভোক্তারা এদের খোঁজ-খবর রাখে না। কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীরা, বিশেষ করে ছোট ছেলেমেয়েরা ওগুলো দিয়ে তাদের পেট পুরে। মাঝেমধ্যে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা এ ফলগুলো বাজারে কিংবা মেলায় উপস্থাপিত হলে সবাই বিস্ময় নিয়ে তাকায়। ভাবে এ রকম ফলও হতে পারে আমাদের দেশে। স্বাদে-বৈচিত্র্যে অনন্য এই ফলগুলোর বাজারজাতকরণ ও এর পরিচিতিকরণে রাষ্ট্রীয় কিংবা সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ মাঝেমধ্যে দেশগুলোতে পরিলক্ষিত হয়।
এই যে বাংলাদেশের পলিবাহিত উর্বর মাটিতে জন্মে এত শত চমৎকার ফলবান গাছ, এদের এমন অনেক ফুল রয়েছে যেগুলো বাঙালির মন জয় করতে পারেনি। অথচ তারা আমাদের কাছে সেরার সেরা উপাধি পাচ্ছে ফলের দিক দিয়ে। ফুলের বাহার নেই বলেই হয়তো ফল দিয়ে নিজের ঐশ্বর্য দেখাতে চায় এরা। যেমন আম, লিচু, কাঁঠালসহ আরো অনেক অনেক মধুময় ফল। আবার ব্যতিক্রমও রয়েছে। শ্বেত-সফেদ শুভ্র করমচা আর জামরুলের ফুলের সৌন্দর্যে কে না মুগ্ধ হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। কয়েকটি ফল রয়েছে যেগুলো বাইরে থেকে এসে দীর্ঘদিন ধরে রসালো মাটির সাহচর্যে বেশ ভালো ফলন দিচ্ছে, যেমন- অ্যাভোকেডো, কফি, কোকো, ব্রেড ফ্রুট, শানতোল, রাম্বুটান, স্ট্রবেরি, প্যাশন বা ট্যাং ফল, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি। আবার কামিনী, অঞ্জনের মতো বাহারি ফুলের গাছেও দেখা মেলে ছোট ছোট বেরি আকারের গোলগাল রসালো ফলের।
আমাদের দেশে রয়েছে ভূবনবিখ্যাত সব ফল। এগুলোর বেশির ভাগই আমাদের নিজস্ব ভূমিজাত ফল। সুপ্রাচীন কাল থেকে আমাদের দেশের জল-হাওয়ায় ফলন দিচ্ছে বেশ করে। আমাদের দেশে কত রকমের ফল হয়, তার হিসাব অনেকেই আমরা রাখি না। আমাদের অজান্তেই বাড়ির আশপাশে, রাস্তার ধারে, ক্ষেত-খামারে কিংবা বনজঙ্গলের গভীরে বাংলার জলবায়ুতে, উর্বর মাটিতে লালিত পালিত হচ্ছে রসালো সব ফল। আঙুল গুনে কয়েকটি মাত্র ফলের উল্লেখ করতে পারি কেবল। কত ফলের নাম বলা যায়, বাংলার ভাণ্ডারে রয়েছে বৈঁচি, লুকলুকি, ডেফল, উরি আম বা মাইল্লা আম, খেজুর, জংলি বাদাম, কাঠবাদাম, তুঁত, তিনকরা, সাতকরা, আদা জামির, মনফল, অরবরই, আঁশফল, তারকা ফল, শরিফা, বেতফল, সজিনা, দাঁতরাঙা বা ফুটকি, কাউ, চিনার, কাঁকুড়, হেঁতাল, নারিকেল, আমড়া, বিলাতি আমড়া, আমলকী, লটকন, কামরাঙ্গা, বহেড়া, হরীতকী, কারিপাতা, বাতাবিলেবু বা জাম্বুরা, বিভিন্ন রকমের লেবু, কুল বা বরই ও এর বিভিন্ন জাত, বেল, কদবেল, সফেদা, মহুয়া, বকুল, রক্তগোলা, জাপটিকাবা, চামফল বা চাপালিস, কাকডুমুর, যজ্ঞডুমুর, কাকজাম, পানিজাম, খুদিজাম, তৈকর, বাওয়ালি পল, ডালিম, চালতা, ডুমুর, টক আতা, পানিফল, শিঙ্গাড়া ফল, জিলাপি ফল, পদ্মফল, মাখনা, রুটিফল, বকুল, ফলসা, চুকোর, চিকান, পানকি চুনকি, টুকটুকি বা টাকিটাকি, বিলম্বি, হামজাম, মুড়মুড়ি, চিরঞ্জী, শেওড়া, আমরুল, ননিফলসহ আরো অনেক ফল। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে, বন-জঙ্গলে রয়েছে এ রকম প্রায় ১২০ ধরনের ভোজ্য ফলের কথা আমরা জানতে পেরেছি বিশেষজ্ঞদের মাঠ গবেষণার বদৌলতে।
একটা কথা বলে রাখা ভালো, জ্যৈষ্ঠের প্রচলিত সব ফল যে শুধু এ মাসের তারিখ-রেখা মেনে উৎপাদিত হবে, তাও নয়। কোনো কোনোবার খুব তাড়াতাড়ি জ্যৈষ্ঠের আগেই বাজারে ফলগুলো চলে আসতে পারে। আবার কোনোটি আসতে পারে একটু দেরি করে, বর্ষার শুরুর দিকটাতে। এ ছাড়া গরমের প্রথম দিকে ফলে এমন বেশ কয়েক ধরনের ফল জ্যৈষ্ঠের মধু সময়টাতেও মাতিয়ে রাখে ফল-রসিকদের। তাই আলাদা করে জ্যৈষ্ঠের ফল হিসেবে খুব কম ফলকেই আমরা চিহ্নিত করতে পারি। জ্যৈষ্ঠের কথা এলেই আমরা বলি, আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল। তালিকাটা আরেকটু বড় হয় আতা, করমচা, জামরুল কিংবা ডেউয়ার মতো ফল দিয়ে। এরপর অনেক ভেবেচিন্তে মনে করে বড়জোর বলতে পারি তরমুজ, বাঙ্গি বা ফুটি, আনারস, গোলাপজাম, খেজুর, গাব, বিলাতি গাব ইত্যাদি। কিন্তু তাতেই বঙ্গ ভাণ্ডারের বিবিধ রতনের একাংশ জ্যৈষ্ঠ মাসের বিচিত্র ফল-সম্ভারের তালিকা শেষ হয় না। বেশ কিছু ফলের নাম ওপরে এরই মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব ফলের অধিকাংশই কিন্তু ফলে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে। এর মধ্যে আবার বাংলার ফলভাণ্ডারের শতকরা প্রায় ৫৪ ভাগ ফলই ধরে গ্রীষ্মকালে। গ্রীষ্মে প্রচলিত ফল তরমুজ, বাঙ্গি দিয়ে শুরু হয় যার ফলোৎসব, শেষ হয় আম-জাম-কাঁঠাল আর লিচুর মতো সুস্বাদু ফল দিয়ে। এসব ফলের একেকটির আবার ভিন্ন ভিন্ন জাত রয়েছে। আমের কথাই ধরা যাক। রাজশাহী আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানগুলোতে কম করে হলেও খুঁজে পাওয়া যাবে পাঁচশো জাতের আম। ফজলি, ল্যাংড়া, হিমসাগরের বাইরে আরো যে কতশত নাম রয়েছে আমের, তার খোঁজখবর খুব একটা রাখা হয় না আমাদের। অথচ এগুলো খেয়ে তৃপ্তির ভীষণ ঢেঁকুর তুলি আমরা। মধুফল আমের বর্ণনায় এর চমৎকার সুন্দর নামগুলোর উল্লেখ রয়েছে।
এতক্ষণ যেসব ফলের কথা উল্লেখ করা হলো তার সবই মানুষের খাওয়ার উপযোগী ফল। এর বাইরেও যেসব ফল রয়েছে, তার নাম ধরতে গেলে লেখাটি গোটা একটা মহাকাব্যের আকার ধারণ করতে পারে। মনুষ্য অনুপযোগী ফলগুলোর অধিকাংশের ভোক্তা বা রসিক হচ্ছে পাখপাখালি, বিড়ালসহ বন্য জীবজন্তু। মানুষে খায় এমন অনেক ফলেও এরা কামড় বসায়। এই ফলগুলো আনন্দের সাথে খায় আমাদের গ্রামদেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। যে কেউ ইচ্ছে করলে বনে-বাঁদাড়ে ঘুরে ঘুরে, বিশেষ করে জ্যৈষ্ঠের এ সময়টাতে এসব ফল আহরণ করতে পারে। আমাদের দেশে ইদানীং বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব। তারাও উদ্যোগ নিতে পারে ভ্রমণের পাশাপাশি বন-জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে এসব বুনোফল সংগ্রহ করা কিংবা দলের সবাইকে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। সরকারি-বেসরকারি চেষ্টা তো রয়েছেই, তাদের সূত্রেও নগরবাসী জানতে পারবে কী সব বিচিত্র রসালো ফলে ঠাসা রয়েছে বাংলাদেশের অলিগলি।
আম
আম ফলের রাজা। সারা পৃথিবীতে রয়েছে এর প্রায় ৫০০ প্রজাতি। সব প্রজাতির আমই যে ভক্ষণযোগ্য, তা নয়। অনেক ফলই খাবারের অযোগ্য। এই ৫০০ প্রজাতির আমের রয়েছে প্রায় এক হাজার ৫০০ জাতের আম, কারো কারো ধারণা তালিকার বাইরে রয়ে গেছে আরো আট থেকে নয় হাজার জাতের আম। কোনো কোনো বিশেষ প্রজাতির আম থেকে একাধিক জাতের আমের উদ্ভাবন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ইদানীংকালে।
প্রাচীনকালে আমের গুরুত্ব বুঝতে পেরে সংস্কৃত ভাষায় এর এ নামটি রাখা হয়। আম শব্দের অর্থ মজুদ খাদ্য বা রসদ। ভারতীয় উপমহাদেশের ললিতকলা ও ভাস্কর্যে আম ও আমগাছের ব্যবহার রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দ পুরনো সাঁচী স্তূপের স্থাপত্যকর্মে আমগাছ ও আমকে দারুণভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের পৌরাণিক আখ্যান ‘জাতকে’ও মধুফলটির উল্লেখ রয়েছে। কিংবদন্তি রয়েছে, গৌতম বুদ্ধের বিশ্রামার্থে গোটা একটি আমের বাগান উপহার দেওয়া হয়েছিল। সম্রাট আকবরের জীবনকথা নিয়ে রচিত গ্রন্থ ‘আইন-ই-আকবরী’তে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রজাতির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আমের উল্লেখ রয়েছে। মোগলরা ছিল আমের ভীষণ ভক্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন প্রজাতি ও জাতের আমগাছ এনে তারা বাগানে তা রোপণ করত। তাদের সেই আমপ্রীতির কল্যাণেই ভারতীয় উপমহাদেশেই রয়েছে প্রায় এক হাজার ৫০০ জাতের আম। আমাদের দেশেও দীর্ঘকাল ধরে আমের ফলন চলে আসছে। রাজশাহী, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা ও যশোরের কিছু বাণিজ্যিক বাগানে আমের বেশ ফলন হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী অঞ্চলের আমের বাগানগুলো দেশজুড়ে আমের খোরাক জোগায়। এর মধ্যে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি জাতের উন্নত আমের দেখা মেলে। ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর, খিরসাপাত, আম্রপালি, বউ ভুলানি, মেসো পছন্দ, ক্ষীরমন, গোপালভোগসহ বেশ কিছু জাতের আমের জন্য এসব এলাকা সুবিখ্যাত। এ ছাড়া দেশের আমবাগানগুলো কিংবা বসতবাড়ির আনাচে কানাচে যেসব আমের চাষ হয় সেগুলোর একেকটির নাম ভোলার নয় মোটেও। অনুপম সুন্দর একেকটি আমের নাম। সিন্দুরী, কালোমেঘ, বনখসা, দেশি গুটি, চম্পা, অরুণা, সূর্যপুরী, জিলাপি কাড়া, কাঁচামিঠা, লতা, বারোমাসি, কলামোচা, মল্লিকা, মিশ্রীকান্ত, শীতলপাটি, নাম ডক মাই, জামাই পছন্দ, লক্ষ্মণভোগ, গোলাপবাস, বিশ্বনাথ চ্যাটার্জী, বাগানবিলাস, ভারতী, নাক ফজলি, চিনি মিশ্রি, জগৎমোহিনী, রাখালভোগ, গোবিন্দভোগ, ম্যাট্রাস তোতাপুরী, জালিবান্দা, মিক্সড স্পেশাল, মৌচাক, চৌরসা, রাঙাগুড়ি, ভূতো বোম্বাই, আলমশাহী, বাতাসা, রানীভোগ, পাহাড়িয়া, গোলাপখাস, কাকাতুয়া, থলথলে, দাদাভোগ, গোলাপ সুন্দরী, কিষানভোগ, নীলাম্বরী, বউ ফুসলানি, আনোয়ার, পারিজা, ভটভমি, রানী পছন্দ, রং ভিলা, সিন্ধু, নোড়হা, দিলশাদ, দুধশর, মধু চুসকী, পূজারিভোগ, বেগম বাহার, তারামীরা, দুধকুমারী, রাজলক্ষ্মী, পলকপুরী, আচার রাজ, কিষান, আরাজান, বান্দিগুড়ি, বাড়ি আম, বউ ভুলানি, গৃঠদাগী, জাওনা, কুয়াপাহাড়ি, ফালুয়া, মহানন্দা, শ্রীধন, দুধিয়া, বৃন্দাবনী, আশ্বিনা, কোহিতুর, বেনিশান, সফেদা, রাতুল, জরদালু, পেয়ারাফুলী, পোল্লাদাগি, রাজা ভুলানি, রাংগোয়াই, শোভান পছন্দ, ভাদুরী, বারি আম-১, বারি আম-২, বীড়া, বগলা গুটি, চালিতা গুটি, চেপ্টি গুটি, আম্রপালি, রত্না, পুনিত, সিন্ধু, গোলাপখাস, টমি অ্যাটকিনসন, সিনফোলিন, মিয়াচাও, অলফ্যানসো-এ রকম আরো কম করে হলেু ৪০০ আমের নাম বলা যাবে। এগুলোর অধিকাংশই জ্যৈষ্ঠের আম। তবে কয়েকটি বারোমাসি ফলও রয়েছে তালিকায়। সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশ তো বটে, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে আম এখন সারা পৃথিবীর জনপ্রিয়তম ফলের মধ্যে একটিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
ফল হিসেবে আমের গুণাগুণের শেষ নেই। একে তো ফলের রাজা তার ওপর কাঁচা ও পাকা ফলের শরবত, ভর্তা, আচার, জ্যাম-জেলি, চাটনি, আমসত্ত, মোরব্বা হিসেবে দারুণ খ্যাতি রয়েছে আমের। রসরাজ তরকারিতেও দারুণ স্বস্তির স্বাদ এনে দেয়। দুধভাতের সাথে আম মিশিয়েও খাবার চলে। কাঁচা ও পাকা উভয় ধরনের আমে রয়েছে বেশ কিছু পুষ্ট উপাদান। চার চার রকমের ভিটামিন রয়েছে এতে। ভেষজ চিকিৎসকদের অন্যতম প্রিয় ঔষধি এর ফল ও গাছ।
কাঁঠাল
আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। জ্যৈষ্ঠের প্রধানতম মধু ফলের একটি। বিরাটকায় ফলটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভোজ্য ফল। বহু ফলের সমষ্টি একেকটি কাঁঠাল ওজনে হতে পারে ২৫ কেজি পর্যন্ত। কণ্টকফল থেকে কাঁঠাল শব্দটির উৎপত্তি। বাঙালি মাত্রই সরস এ ফলের ভক্ত না হয়ে যায় না। ভারতীয় উপমহাদেশের একান্ত নিজস্ব ফল এটি। তবে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইদানীং কাঁঠাল চাষে মন দিয়েছে। আমাদের দেশে খাগড়াছড়ির রামগড়, শ্রীপুর, মধুপুর ও ময়মনসিংহের ভালুকায় রয়েছে কাঁঠালের বড়সড় বাগান। আর নরসিংদী ও গাজীপুরের কাঁঠালের খ্যাতি রয়েছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে। দেশের বসতবাড়িতে সবচেয়ে বেশি রোপিত ফলগাছের মধ্যে এটি অন্যতম।
কাঁঠালের বেশ কিছু জাতের কথা শোনা যায়। তবে এ দেশে চাষ হয় এমন কাঁঠালগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি গালা বা গলা, অপরটি খাজা। প্রথমটির কোষগুলো একটু সুস্বাদু, নরম ও ছোট আকারের হয় পরেরটির চাইতে। এ দুটি জাতের মাঝামাঝি আরেকটি জাতের কথা বলা যায়, সেটি রসখাজা। এ ছাড়া রয়েছে রুদ্রাক্ষি, সিঙ্গাপুর, সিলোন, বারোমাসি, গোলাপগন্ধা, চম্পাগন্ধা, পদ্মরাজ, হাজারি প্রভৃতি।
আমাদের দেশে কলার পরই ফল হিসেবে কাঁঠালের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়। শর্করা, আমিষ, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ ও সি-সহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদানের ভাণ্ডার একেকটি কাঁঠাল। দেহের ক্লান্তি দূর, শক্তি বৃদ্ধি ও চর্মরোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে কাঁঠাল। কচি কাঁঠাল বা এঁচোড়ের ভর্তা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে খুবই প্রিয় খাবার। এ ছাড়া সবজি হিসেবে এর বীজের বেশ কদর রয়েছে গৃহিণীদের কাছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের ধ্রুপদী মহাকাব্য রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ডে কাঁঠালের কথা রয়েছে। সংস্কৃতে এর নাম পনস। বাংলার প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধা ও লোকসংগীতে কাঁঠালের উল্লেখ রয়েছে ভূরি ভূরি।
লিচু
লিচুর মতো সুস্বাদু সুমিষ্ট ফল পৃথিবীতে কমই রয়েছে। সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে এটি সত্যিকার অর্থেই রোমান্টিক এক ফল। সবাই জানি, এর আদি নিবাস সুদূর চীন। চীনের দক্ষিণ দিককার বাসিন্দাটি তার সুমিষ্ট শাঁসের রস দিয়ে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়ে পড়ে। কথিত আছে, লাই চি নামের এক বিজ্ঞানী আঁশফল বা কাঠলিচু থেকে দুটি উন্নত মানের ফল সৃষ্টি করেন। একটি লিচু, অন্যটি রাম্বুটান। এই লাই চি-এর নামেই লিচুর নামকরণ করা হয়। ১০৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের প্রথম ফল চাষ নিয়ে লেখা বইটিতে মধুময় ফলটির কথা রয়েছে। আমাদের দেশে রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর বেশ ভালো ফলন হয়।
আমাদের দেশে লিচুর কয়েকটি জাত পাওয়া যায়। লিচুর প্রধান দুটি জাতের মধ্যে নাবী ও জলদি অন্যতম। নাবী জাতের মধ্যে চায়না আর এলাচি খুব বিখ্যাত। জলদি জাতের মধ্যে মাদ্রাজি, বোম্বাই, মোজাফফরপুরী ও পূরবী অন্যতম। চায়না-৩ আমাদের দেশে উৎপাদিত লিচুর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট। গাছের আকার মাঝারি গড়নের। প্রতিবছর ভালো ফলন দেয় না। গোলাকার ফলগুলো হতে পারে ২৫ গ্রামের মতো ওজনের। বোম্বাই জাতের লিচু হয় আমাদের যশোর ও কুষ্টিয়ায়। টকটকে লাল খোসাধারী ফলগুলো হৃৎপিণ্ডাকার, মাঝারি আকারের ও টকযুক্ত মিষ্টি, খেতে সুস্বাদু। একেকটির ওজন হয় ১৫ থেকে ২০ গ্রামের মতো। এগুলো ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি লিচু-১, বারি লিচু-২ ও বারি লিচু-৩ লিচুর উৎকৃষ্ট জাতের কয়েকটি। দেশি লিচু বলতে যা বোঝায়, তার চাষও আমাদের এখানটাতে ভালোভাবে হয়। এ লিচুই সবার আগে, সাধারণত মে মাস থেকে বাজারে আসা শুরু করে। আকারে অন্য জাতের চেয়ে একটু ছোট, খেতে টক-মিষ্টি স্বাদের।
লিচুকে অনেকদিন সংরক্ষণ করা না গেলেও বাচ্চাদের লোভনীয় খাবার হিসেবে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো জ্যাম-জেলি তৈরি করে থাকে। এর শাঁস শুকিয়ে আমসির মতো খাবার, যাকে চীনারা বলে লিচি নাট, সে দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। লিচুর পুষ্টিগুণে অনন্য লিচুতে রয়েছে দৈহিক শক্তিবর্ধক বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এতে রয়েছে প্রধানত শর্করা (চিনি), প্রোটিন, ভিটামিন বি, সি ও এবং ক্যালসিয়াম ও লোহা।
লিচুর পাশাপাশি আঁশফল বা কাঠলিচুর কথা না বললেই নয়। ফলটি লিচুর জাতভাই। লিচুর চেয়ে বেশ ছোট, গোলগাল আকারের। শাঁসের তুলনায় বিচি বড়, খেতে সুস্বাদু, অনেকটা লিচুর মতোই, তবে একটু পানসে। জ্যৈষ্ঠের শেষদিকে লিচুর সাথে মাঝে মধ্যে ফলটিকে দেখতে পাওয়া যায়। বাচ্চারা পেলে ছাড়ে না।
আতা
আতার আরেক নাম নোনাফল। এর আরো কয়েকটি নাম রয়েছে। ভারতে এর নাম রামফল বা সীতাফল। গরমকাল এলেই এটি আমাদের দেশের হাট-বাজারে সুলভ হয়ে ওঠে। পুষ্ট ফল পেড়ে খড় দিয়ে ঢেকে রাখলে বা বস্তায় ভরে রাখলে দু-চারদিনের মধ্যে পেকে যায়। ফলটির চাষ কোথায় হয় তা জানা যায়নি, তবে বসতবাড়ির আশপাশে বা এখানে সেখানে বীজ পড়ে গাছটি জন্মায়। মিষ্টি, বেলে স্বাদের আতার পুষ্টিগুণ রয়েছে অনেক। প্রতি ১০০ গ্রাম আতায় রয়েছে শতকরা ৭৩.৩ ভাগ পানি। তাই গরমে এটি খাওয়া বেশ স্বস্তিদায়ক। এ ছাড়া এতে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, লোহা, ফসফরাস প্রভৃতি খাদ্য গুণাগুণ।
করমচা
জ্যৈষ্ঠ মাসে যে শুধু মিষ্টি ফলের ছড়াছড়ি হবে, তা নয়। টক স্বাদের ফলও বাজারে আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল করমচা। এটি আসে জ্যৈষ্ঠের একেবারে শেষের দিকে। পাকা করমচা দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। খেতে মারাত্মক টক। তার পরও এটি গ্রামবাংলার লোকের কাছে মধুঋতুর প্রিয় ফলের একটি। লেবুপাতা, লবণ, মরিচ আর চিনি দিয়ে মাখানো করমচার ভর্তা খেতে কার না ভালো লাগে। আমাদের দেশে গাছটিকে লাগানো হয় বাড়ির সীমানার দিকে। কারণ এর ডালপালা সূচালো কাঁটায় ভর্তি থাকে। ফলগাছটি কিছুটা অবহেলিত বলা যায়। তবে শখের বাগানির কাছে এটি প্রিয় ফলের একটি। মাত্র ১০০ গ্রাম করমচা পূরণ করতে পারে সাতজনের দৈনিক ভিটামিন সি-এর পুষ্টি। করমচা দিয়ে জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ ও সিরাপ বানানো হয় বাইরের দেশে।
জামরুল
জ্যৈষ্ঠের আরেকটি ব্যতিক্রমধর্মী ফল জামরুল। ফলটি আমাদের দেশে এসেছে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপ থেকে। তখন থেকে দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কম-বেশি দেখতে পাওয়া যায় ফলগাছটিকে। জ্যৈষ্ঠের শুরুর দিকটা থেকে জামরুলের আনাগোনা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। দেশি ছোট জাতের পানসে জামরুলের পাশাপাশি এখন বড় ও মিষ্টি জাতের জামরুলের চাষ হচ্ছে। জামরুলের জাতগুলোর মধ্যে থাই জামরুল, রোজ অ্যাপেল আর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি জামরুল উল্লেখযোগ্য। বারি জামরুল আকারে বড়, একেকটির ওজন হতে পারে ৩৫ গ্রামের মাতো। গোলাপি রঙের থাই জামরুল দেখতে খুবই আকর্ষণীয়, স্বাদ অনেকটাই আমাদের দেশি জামরুলেই মতো। পানসে স্বাদের ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। গরমের সময়টাতে তাই খুবই প্রয়োজনীয় ফলের একটি জামরুল
ফলসা
আমাদের স্থানীয় ফলের অন্যতম ফলসা। একেবারে বনে-বাঁদাড়ের ফল, অযত্নে বাড়ে। ফলটি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে। বাহারি গাছ হিসেবে শখের বাগান ও উদ্যানে একে রোপণ করা চলে। তেমন খোঁজ-খবর রাখে না কেউ। তবে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ফলের একটি। জ্যৈষ্ঠের শুরুর দিকটা থেকে ফল পাকতে শুরু করে। মটরডালের দানার মতো ফল গুচ্ছ গুচ্ছ গাছে শোভা পায়। কাঁচা ফল মটরদানার মতোই দেখতে, পাকলে এর রং হয় প্রথমে লাল, পরে কালচে। খেতে টক-মিষ্টি, তবে সুস্বাদু। রস খেতে অনেকটা আঙুরের রসের মতো। পাকা ফল থেকে ভালো শরবত ও স্কোয়াশ বানানো যায়। টাটকা ফল ফ্রুট ডেজার্ট তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। পাকা ফলে প্রায় ১০.২৭% চিনি রয়েছে। এক কেজি পাকা ফলসা খেলে ৭২৪ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
আকড়কণ্ট
আকড়কণ্ট আমাদের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় গাছ হলেও ঢাকা ও রাজশাহী শহরে ও এর আশপাশে এর দেখা মেলে। তবে কোথাও চাষ হয় না। গাছটি বেশ দৃষ্টিনন্দন এবং উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টের অধিকারী। শক্তপোক্ত গড়ন ও মাঝারি আকারের গাছটির ডালপালা জুড়ে বিরাটকায় লম্বা কাঁটার মতো অংশ থাকে। আর এর পাতাগুলোও দেখতে মনোরম সুন্দর। ফলে বেশ সহজেই একে শনাক্ত করা যায়। তবে কোথাও এর আবাদ করা হয় না। এর অন্য নাম আঁকুড়া, আঁকড়কাঁটা। জ্যৈষ্ঠের শুরুর দিক থেকে শেষ পর্যন্ত পাকতে থাকে এর ছোট ছোট লোভনীয় ফলগুলো। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে লালচে কালো রং ধারণ করে। ফলটির ভোক্তা বা রসিক মূলত ছোট ছেলেমেয়েরা। মুখ পুরে পানসে ও টক-মিষ্টি স্বাদের ফলটি খায় তারা। ফলটির নরম শাঁস আঠালো ধরনের। তাই রসটি চুষে বেশ কিছু অংশ ফেলে দিতে হয়। ইচ্ছে করলে মজার ফলটির পুরো শাঁসটিও খাওয়া যেতে পারে যদি কারোর ধৈর্য থাকে। ফলটিতে সামান্য কটু গন্ধ রয়েছে।
বৈচি
বৈচি ফলের কথা আমরা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকলেও অনেকে একে চোখে দেখিনি। গ্রামের ঝোপঝাড়ে অযত্নে বাড়ে ফলগাছটি। মধুঋতু জ্যৈষ্ঠের অন্যতম প্রিয় ফল এটি। প্রিয় ফল বাচ্চা-কাচ্চাদের কাছে। তারা বেশ মজা করে খায় ফলগুলো। ছোট ছোট ফলগুলো মালায় গেঁথে একটার পর একটা দল বেঁধে সাবাড় করে ওরা। এখনো খুলনার হাট-বাজারে মালা আকারে ফলটি বিক্রি হতে দেখা যায়। খুলনা ছাড়াও নড়াইল, যশোর, বরিশাল, বাকেরগঞ্জসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বৈচির দেখা মিলবে। ঝোপালো গাছটির ডাল সূচালো কাঁটায় ভরা। ফল মটর ডালের আকারের এবং দেখতে গোলগাল। কাঁচা ফলও বাচ্চারা খায়। তবে পাকা ফল দারুণ স্বাদের। পাকলে বৈচির রং হয় বেগুনি লাল। পাকা ফল যথেষ্ট পুষ্টিসমৃদ্ধ। এতে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম থাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। দাঁতের বিভিন্ন অসুখ ও জন্ডিস সারাতে বৈচি ফলের জুড়ি নেই।
জ্যৈষ্ঠের মধু সময়টাতে আরো মেলে তরমুজ, বাঙ্গি, ফুটি, শসা, সফেদা, কামিনী ফল, গোলাপজাম, অড়বরই, বিলম্বি, পুলক জুঁই, তুঁত ফল, অঞ্জনসহ আরো বিচিত্র সব ফল। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ লেবুর বিভিন্ন জাতের প্রাচুর্য মেলে জ্যৈষ্ঠের মধু সময়ে। শতকরা প্রায় ৫৪ ভাগ ফল যে ঋতুতে পাওয়া যায়, তার সবগুলোর কথা বলতে পারাটা চাট্টিখানি কথা নয়। উল্লিখিত ফলগুলো ছাড়াও আরো অনেক ফল হয় জ্যৈষ্ঠে, সেগুলো আগেই বলা হয়েছে। জামের কথা এক ফাঁকে উল্লেখ করতেই হয়। জামের আরেক নাম কালোজাম, সবাই জানি। এটি মধুঋতুর অত্যাবশ্যকীয় ভোজ্য ফলের একটি। এটি ছাড়া জ্যৈষ্ঠের কথা চিন্তাই করা যায় না। জ্যৈষ্ঠের একেবারে শেষাশেষি এটি সুলভ হয়। রসালো, মাংসল ফলটি বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জন্মে। জামের পুষ্টিগুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমাশয়, ডায়াবেটিস, দাঁতের বিভিন্ন অসুখে জাম কার্যকর ভূমিকা রাখে।
প্রতিদিন আমাদের ফল খাওয়া প্রয়োজন মাত্র ৮৫ গ্রামের মতো। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৩৫ গ্রাম ফল আমাদের আহারে যোগ হয়। অথচ প্রচলিত ও স্বল্প পরিচিত এসব ফল খেয়ে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান আমরা পেতে পারি খুব সহজেই। আর জ্যৈষ্ঠে যেহেতু ফলটি পাওয়া যায় বেশি পরিমাণে, তাই সময়টাতে পরিমাণমতো ফল খাওয়া থেকে আমরা বিরত হই কেন। শুধু মিষ্টি স্বাদের কেন, টক ও পানসে স্বাদের ফলও আমাদের খেতে ভালো করে।
মধু ফলে ভরা মধুঋতু জ্যৈষ্ঠের ফলভরা সময়ে একটি কথা আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, ফলগুলো যাতে আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে না যায়, তার যথার্থ ব্যবস্থা নেওয়া। সে ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগও কম জরুরি নয়। এ বছর ঝড়ঝঞ্ঝা কম হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুঁড়ি ঝরে যাওয়ায় আম ও লিচুর উৎপাদন এবার কিছুটা হলেও কম হতে পারে। কিন্তু তাতে কি, জ্যৈষ্ঠ মধু হয়েই থাক আমাদের মনে।