মুসলমান পরিবারে ৩০০ বছরের পুরোনো মহাভারত
বইটিকে ‘পবিত্র ও সৌভাগ্য আনয়নকারী’ বলেই জানতেন ভারতের লক্ষ্ণৌর কারবালা কলোনির মঞ্জুল পরিবার। কিন্তু বইটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝতে পারেননি তাঁরা। সেটা যখন জানলেন, ততদিনে বইটি নিয়ে সাড়া পড়ে গেছে পুরো ভারতে।
পুরো ভারতজুড়ে যখন সাম্প্রদায়িক হানাহানি আর জাত-পাতের বর্ণ বিভেদ তাড়া করে বেড়াচ্ছে সেই সময় হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘মহাভারত’ খুব যত্নে রাখা ছিল লক্ষ্ণৌর এক মুসলিম পরিবারে। ৩০০ বছরের পুরোনো মহাভারতটি উর্দুতে লেখা ! ঐতিহাসিক এই অমূল্য সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর মহাভারতটিকে দেখতে গবেষক, ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন কারবালা কলোনির মঞ্জুল পরিবারে।
মঞ্জুল পরিবারের প্রবীণ সদস্যা শাহিন আখতার জানান, ‘বংশানুক্রমেই বইটি আমাদের বাড়িতে আছে। প্রথম কীভাবে এসেছে তা জানি না। তবে বইটিকে আমরা পয়মন্ত বলেই জানতাম। এই বই থেকে আমরা জানতে পেরেছি ক্রোধ মানুষের পতনের কারণ। যে শিক্ষা আমি আমার ছেলেদের দিয়েছি। তবে এর গুরুত্ব যে এতটা, তা আমরা জানতেই পারিনি।’
শাহিন আখতারের ছেলে ফরমান আলী জানান, ‘বাবার মৃত্যুর পর বইটি আমরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারপর পুরোনো নথি ঘাঁটতে গিয়ে অবশেষে আমরা বইটি খুঁজে পাই।’
সম্প্রতি বইটির কথা ফরমান আলী তাঁর বন্ধু-বান্ধব মহলে বলতেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। শাহিন আখতার জানান, এই বইয়ের মাধ্যমে উর্দুতে মহাভারত পড়েছি। তবে টিভিতে সিরিয়াল হিসেবে মহাভারত দেখার চেয়ে এই বইতে মহাভারতের কাহিনী পড়তে অনেক ভালো লাগে।’
জানা যায়, মঞ্জুল পরিবারের পূর্বপুরুষ মাওয়ালি হুসেন নাসিরাদির হাত ধরে উর্দু ভাষায় লেখা মহাভারত বইটি তাঁদের পরিবারে ঢোকে। মঞ্জুল পরিবারের এক পারিবারিক বন্ধু এবং জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় শিক্ষক ওয়াহিদ আব্বাস বলেন, উর্দু ভাষায় মহাভারতটি গল্পের ছলে এখানে লেখা হয়েছে। আর এই বইয়ের বিশেষত্ব হলো, মহাভারতের প্রতিটি পর্বের শুরুতে আরবি ভাষায় লেখা রয়েছে মুখবন্ধ। মহাভারতটি উর্দুতে অনুবাদ করেছিলেন হাজি তালিব হুসেন। এবং তাঁকে এই মহাভারত লিখতে সহায়তা করেছিলেন তাঁরই এক বন্ধু দুর্গা প্রসাদ।