লন্ডনে এসিড হামলার শিকার মুসলিম তরুণের কথা
লন্ডনের লুটনে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য যাচ্ছিলেন এক মুসলিম তরুণ। ধরে নিই তাঁর নাম খান। এ সময় পাশ থেকে অপরিচিত একজন জানতে চাইলেন, ‘আপনি কি দোকানটি খুলতে যাচ্ছেন? জবাবে খান জানালেন, ‘হ্যাঁ, কেন?’
এর পরই ওই অচেনা ব্যক্তি তাঁর কাছে থাকা বোতল থেকে শীতল তরল ঢেলে দিলেন খান সাহেবের মুখে। আর ওই তরলটি আসলে ছিল এসিড। যা নিমেষেই পুড়িয়ে দেয় তার মুখ।
ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না খান। একটু পর যখন মুখে জ্বলুনি অনুভব করলেন তখন হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বাঁচতে চাইছিলেন তিনি।
এভাবেই নিজের এসিড আক্রান্ত হওয়ার কথা ব্রিটিম গণমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্টকে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি। সে কারণেই ধরে নেওয়া হয়েছে তাঁর নাম খান।
একজন অচেনা ব্যক্তির করা প্রশ্ন শুনে সন্দেহ হয়েছিল কি না জানতে চাইলে খান বলেন, ওই ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি কিছুটা সংশয়ে ছিলেন। সে কারণেই ওই ব্যক্তিকে দোকানের ভেতরে ঢুকতে দেননি তিনি।
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে খান আরো বলেন, ‘ঘটনাস্থলের পাশেই একজন রসায়নবিদ থাকতেন। তিনি দৌড়ে সেই বাসায় যান এবং এক গ্লাস পানি চেয়ে নেন। এরপর সেই পানি ছুঁড়ে দিই নিজের মুখে। মনে হচ্ছিল কোনো ধরনের আঠা আমার মুখে লেগে আছে। আমি কলের পানির নিচে মুখ দেই এবং যখন সেখান থেকে মুখ তুলে আয়নায় দেখি বুঝতে পারি আমার পুরো মুখ পুড়ে গেছে।’
হামলাকারী দেখতে কেমন ছিল জানতে চাইলে খান বলেন, সাদা চামড়ার লোকটির মাথায় চুল ছিল না। পরনে ছিল হালকা রঙের হুডি ও গাঢ় রঙের জিনসের প্যান্ট। খানের ওপর এসিড ছুড়েই একটি হালকা নীল রঙের ফোর্ড ফিয়েস্তা গাড়িতে চেপে সঙ্গীসহ পালিয়ে যান তিনি।
এরপর খানকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। শুধু শারীরিক কষ্টই নয়, তিনি মানসিকভাবেও মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন। বলেন, ‘আমার মুখের অর্ধেক পুড়ে গিয়েছিল। তবে যেহেতু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মুখে পানি দিয়েছিলাম তাই স্কিন গ্রাফটিং করতে হয়নি আমাকে। এরপর থেকে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলেই ভয় পাই আমি, প্রতিবার বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় উদ্বিগ্ন হই।’
২০১৬ সালের ১৯ মে লুটনের লিগ্রেভ রোডে ঘটা এই ঘটনার পর এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি দেশটির পুলিশ। এখনো চলছে তদন্ত।
ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও খান জানেন না, কারা তাঁকে কেন এসিড ছুঁড়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি একজন তরুণ ব্যবসায়ী, লুটনে থাকি। কখনো কোনো অন্যায় বা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। কারো কোনো ক্ষতিও করিনি। আমি মনে করি- এটা একটা টার্গেট অ্যাটাক ছিল। কিন্তু আমি সত্যিই জানি না কেন।’
আর তাই কারা খানের এই ক্ষতি করেছে তা জানতে তিনি ১০ হাজার পাউন্ড ঘোষণা করেছেন। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারলে তাঁকে এই অর্থ দেবেন তিনি।
এই ঘটনার পর গত এপ্রিল মাসে পূর্ব লন্ডনের বিভিন্ন ক্লাবে সাধারণ মানুষের ওপর এসিড হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। নতুন এই হামলার ধরনে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষও।