এরদোয়ানের জয়ে ট্রাম্পের অভিনন্দন
সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাবিত গণভোটে জয়ী তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ফোন করে তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানান ট্রাম্প। ওই ফোনকলে সিরিয়া সরকার নিয়ন্ত্রিত বিমানঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সমর্থন জানানোর জন্য এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প।
এরদোয়ানের জয়ের পর নির্বাচন বৈধ হয়নি বলে অভিযোগ তোলা হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতাদের পক্ষ থেকে। তবে সংবিধান সংশোধনের ওই ভোট স্বচ্ছ হয়েছে বলে ফোনকলে নিজের মত দিয়েছেন ট্রাম্প।
রোববারের গণভোটে জয় পান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। এই জয়ের ফলে দেশটির সংবিধান সংস্কারে একচ্ছত্র ক্ষমতা পেলেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা হবে আধুনিক তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংস্কার। ভোটে সংবিধান সংস্কারের পক্ষে ‘হ্যাঁ ভোট’ পড়ে ৫১ শতাংশের কিছু বেশি। খুব অল্প ব্যবধানে জেতার পরও সংবিধান সংস্কারের পথে এরদোয়ানের আর কোনো বাধা থাকল না।
ফলাফল আসার আগেই নিজেকে বিজয়ী দাবি করেছিলেন এরদোয়ান। সে সময় পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছিল। আর তাতে ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে ছিল ৫১ দশমিক ৩৫ ভাগ আর ‘না’ ভোটের পক্ষে পড়েছে ৪৮ দশমিক ৬৫ ভাগ ভোট।
এদিকে এরদোয়ানের জয়লাভের পর ফলাফল চ্যালেঞ্জ করবে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)। ফলাফলের কম ব্যবধানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা। এ ছাড়া নির্বাচনী পদ্ধতিতেও অনিয়মের অভিযোগ করেছে সিএইচপি। তারা অন্তত ৬০ শতাংশ ভোট পুনর্গণনার দাবি জানিয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটিতে বিভক্তি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে ভোটের ফল সবাইকে মেনে নিতে বলেছেন এরদোয়ান।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু-একটি জায়গায় সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে এবং দিয়ারবাকির এলাকায় ভোটকেন্দ্রের কাছে গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন।
সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন। এ ছাড়া দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারবেন প্রেসিডেন্ট। এতে ২০২৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন এরদোয়ান। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রীসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সরাসরি নিয়োগ দিতে ও এক বা একাধিক ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনীত করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট। সংবিধান সংশোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বিলুপ্ত করা হবে। বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকবে প্রেসিডেন্টের। এ ছাড়া জরুরি অবস্থা জারি করা হবে কি না, সিদ্ধান্তও নিতে পারবেন প্রেসিডেন্ট।
এ ছাড়া আরো কিছু পরিবর্তন আসতে পারে তুরস্কে। এর মধ্যে দেশটিতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আবার চালু হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন এরদোয়ান। এর ফলে তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চলমান আলোচনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পর দেশটির মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর বেশ উন্নতি হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির সামগ্রিক পরিকাঠামোও উন্নত হয়েছে। একই সঙ্গে ধর্মীয় নেতারা দেশটির বিভিন্ন ক্ষমতায় বসেছেন। অন্যদিকে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে ইইউর সঙ্গে।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান হয়। ১২ ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি। এরপর তুরস্কের অন্তত এক লাখ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন। কারাগারে নেওয়া হয় কয়েক হাজার মানুষকে।