ভারতের দর্শকদের এ কেমন আচরণ!
১৯৯৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতীয় দর্শকদের ন্যক্কারজনক আচরণ এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে ক্রিকেট-বিশ্বে। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দর্শকের উচ্ছৃঙ্খলতায় পণ্ড হতে বসেছিল ম্যাচটি। আরেকটি লজ্জাজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল কটকের বারাবাতি স্টেডিয়ামে। সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রিয় দলের ব্যাটিং বিপর্যয় মেনে নিতে না পেরে মাঠের মধ্যে ইচ্ছামতো বোতল ছুড়ে মেরেছেন ভারতের সমর্থকরা। এ জন্য দুই দফায় খেলা বন্ধ ছিল প্রায় এক ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত ছয় উইকেটের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে স্বাগতিক ভারতকে। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয়ও নিশ্চিত হয়ে গেছে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে অ্যালবি মরকেল (৩/১২), ক্রিস মরিস (২/১৬) ও ইমরান তাহিরের (২/২৪) দারুণ বোলিংয়ে ১৭.২ ওভারে মাত্র ৯২ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। রোহিত শর্মা ও সুরেশ রায়না (দুজনেরই অবদান ২২ রান) কিছুটা চেষ্টা করলেও ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে ‘টিম ইন্ডিয়া’কে সর্বনিম্ন রানের লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারেননি।
ভারতের ইনিংস শেষে এক দফা বোতল ছোড়াছুড়ি করেন দর্শক। দ্বিতীয় দফা দর্শকের উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের মাঝপথে। তখন ১১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৪ রান সংগ্রহ করে ফেলেছিল প্রোটিয়ারা। হার প্রায় নিশ্চিত বুঝতে পেরেই হয়তো আবার বোতল-বর্ষণ শুরু করেন ভারতের সমর্থকরা। সে সময় খেলা বন্ধ থাকে ২৭ মিনিট। আবার খেলা শুরু হলেও থামেনি দর্শকের অবাঞ্ছিত আচরণ। দুই ওভার পর আবার বিপুল বিক্রমে শুরু হয় বোতল ছোড়া। এ সময় খেলোয়াড়দের মাঠের বাইরে নিয়ে যান নিরাপত্তাকর্মীরা। খেলা বন্ধ থাকে ২৪ মিনিট। দর্শকদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে হয় পুলিশকে। আবার খেলা শুরু হওয়ার পর জেপি ডুমিনির অপরাজিত ৩০ রানের সুবাদে ১৭ বল হাতে রেখে সহজ জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দর্শকের এই আচরণ নিয়ে কোনো কথা ওঠেনি। তবে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। ভারতের অধিনায়ক অবশ্য দর্শকের এই আচরণকে খুব বেশি পাত্তা দিতে চাননি। এটা এমন কোনো বড় ব্যাপার নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি, ‘নিরাপত্তার দিক দিয়ে চিন্তা করলে আমার মনে হয় না এটা খুব বড় কোনো হুমকি। গ্যালারিতে বসে খুব কম মানুষই মাঠের মধ্যে বোতল ছুড়েছে। আম্পায়াররা মনে করেছিলেন, কিছুক্ষণের জন্য মাঠের বাইরে যাওয়াটাই ভালো। আমরা ভালো খেলতে পারিনি। এ কারণেই এ রকম প্রতিক্রিয়া এসেছে। একটি বোতল ছোড়ার পর অনেকে শুধু মজা করার জন্য আরো বোতল ছুড়তে শুরু করেছিল।’
তবে ধোনি বিষয়টি হালকাভাবে দেখতে চাইলেও ক্রিকেট-বিশ্বে ঠিকই উদ্বেগ ছড়িয়েছে এমন আচরণ। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) নতুন সভাপতি শশাঙ্ক মনোহরকে হয়তো প্রথম কাজ হিসেবে এ দিকটাতেই নজর দিতে হবে। দর্শক কীভাবে স্টেডিয়ামের মধ্যে প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে ঢুকতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বারাবাতি স্টেডিয়ামে নিরাপত্তারক্ষীরা দর্শকের উচ্ছৃঙ্খলতার দিকে নজর রাখার চেয়ে খেলা দেখার দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।