নড়বড়ে নব্বইয়ের শিকার লিটন

‘রানের বন্যা’ বলতে যা বোঝায়, লিটন দাস ব্যাট দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই তা বইয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একেবারেই বিপরীত চিত্র। হাতের ব্যাটটা তাঁর হয়ে কথাই বলতে চাইছিল না। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ এক ইনিংস খেলে অবশেষে প্রত্যাশা পূরণের পথে হাঁটাটা শুরু করলেন বটে। তবে দিনশেষে শতক না পাওয়ার আক্ষেপটাও সঙ্গী হয়ে থাকল।
অবশ্য সে আক্ষেপটা খুব একটা মনে রাখতে চাইবেন না লিটন দাস। দলের প্রয়োজনে লিটন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। তিন উইকেট হারিয়ে ৮১ রান নিয়ে বাংলাদেশ দলের পাল্লা যখন দুলছে পরাজয়ের দিকে ঠিক তখনই মুমিনুল হকের সঙ্গে উইকেটে গড়লেন প্রতিরোধ। বাংলাদেশও ফিরে ম্যাচে।
একপাশে মুমিনুল যখন গড়লেন ইতিহাস লিটন আরেকপাশে তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট অর্ধশতক। সাকিব আল হাসান আর নাইম ইসলাম এত দিন ছিলেন চতুর্থ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের মালিক। ১৮০ রানের জুটি গড়ে লিটন-মুমিনুল নিজেদের রাখলেন সবার উপরে। দুই ইনিংসে দুই শতকের রেকর্ড গড়ে বাঁহাতি মুমিনুল যখন ফিরছেন সাজঘরে লিটনকে তখন হাতছানি দিচ্ছে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতক।
ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান শতকটা বোধহয় পেতে চেয়েছিলেন একদম রাজকীয় ঢঙেই। আর নাইলে কেউ ৯৪ রানে দাঁড়িয়ে থেকে এভাবে হাঁকাতে যায়! দিলরুয়ান পেরেরা ক্যাচটা নিলেন লিটনের ইনিংসটার মতো করেই, এক কথায় দুর্দান্ত। ৯৪ রানে ফেরার সময় লিটনের কানে বাজছিল বোধহয় একটাই কথা। ‘এত কাছে তবু এত দূরে?’
ক্যারিয়ারের শুরুতেই লিটন পেয়েছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার স্তুতিবাক্য। মাশরাফির ভাষ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেটে লিটনের মতো প্রতিভা অনেক কমই আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ধারাবাহিকতাই মাশরাফিকে অমনটা বলতে বাধ্য করেছিল।
শতকের আক্ষেপটা আপাতত ভুলে লিটনের চোখটা থাকুক ভবিষ্যতে। আপাতত আত্মবিশ্বাসটা তো ফিরে পাওয়া গেছে। শেষ তিন টেস্টেই বল ছেড়ে আউট হয়ে জন্ম দিয়েছিলেন তীব্র সমালোচনার। চলতি টেস্টের প্রথম ইনিংসেই তো পেয়েছিলেন গোল্ডেন ডাকের স্বাদ। দলের সতীর্থ তামিম ইকবাল অবশ্য বলেছিলেন ‘ এ ভুল থেকে শিখবে লিটন।’ ঠিকই শিখেছেন লিটন। পরাজয়ের শঙ্কায় দুলতে থাকা বাংলাদেশের তরীকে নিয়েছেন ড্রয়ের বন্দরে।