মারমুখী চিলি, মেসি-ডি মারিয়াকে লাথি
ঘরের মাটিতে আয়োজিত কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতে আক্ষেপ ঘোচাতেই হবে—এই যেন ছিল চিলির সংকল্প। আর সে জন্য আক্ষরিক অর্থেই মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন চিলিয়ান ফুটবলার-সমর্থকরা। ফাইনালে গ্যালারিতে চিলির উগ্র সমর্থকদের হামলার মুখে পড়েছেন মেসি-আগুয়েরোর মতো তারকাদের পরিবার। মাঠের লড়াইয়েও কম যাননি স্বাগতিক ফুটবলাররা। রীতিমতো শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করেছেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ওপর।
কোপা আমেরিকার বিগত ২৪টি মুখোমুখি লড়াইয়ে একবারও আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারেনি চিলি। ২৫তম বারের চেষ্টায় তারা গড়েছে ইতিহাস। আর্জেন্টিনাকে প্রথমবারের মতো হারানোর পাশাপাশি প্রথমবারের মতো পরেছে লাতিন আমেরিকান ফুটবল-শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। কিন্তু মাঠে চিলিয়ান ফুটবলারদের মারমুখী ভঙ্গি চলে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রে।
প্রথমার্ধের ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত ছন্দময়-সুন্দর ফুটবল খেলেছিল চিলি। কিন্তু তার পরই যেন আর্জেন্টিনাকে শুধু ‘লাথি দাও’ কৌশল গ্রহণ করে স্বাগতিকরা। প্রথমার্ধ শেষে ইংল্যান্ডের দৈনিক ডেইলি মেইলের ধারাভাষ্যে বলা হয়েছে, ‘চিলিকে প্রথম ২০ মিনিট খুব ভালো মনে হয়েছে। কিন্তু তার পর তারা আক্রমণের বদলে যেন লাথি দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। বিশেষত, মেসি আর ডি মারিয়াকে।’
ইনজুরির কারণে অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া খেলতে পারেননি গত বছরের বিশ্বকাপ ফাইনালে। জার্মানির কাছে হেরে শেষ হয়েছিল আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন। কোপা আমেরিকায় মাঠে নামলেও ২৬ মিনিট পরেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের অন্যতম প্রধান এই খেলোয়াড়কে। ছিটকে গেছেন হ্যামস্ট্রিংয়ে আঘাত পেয়ে।
৩৪ মিনিটের মাথায় কঠিন ট্যাকলের মুখে পড়েছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে মেসির পেটে সজোরে লাথি মেরেছিলেন ‘পিটবুল’ নামে কুখ্যাত চিলির ডিফেন্ডার গ্যারি মেডাল। রেফারি তাঁকে সতর্ক করেন হলুদ কার্ড দেখিয়ে। ডেইলি মেইলের ধারাভাষ্যে লেখা হয়েছে, ‘চিলির দ্বিতীয় ডিফেন্ডার হিসেবে হলুদ কার্ড দেখলেন মেডাল। মেসিকে তিনি এমন জায়গায় লাথি মেরেছেন, যেটা উচিত ছিল না। খুবই ব্যথা লাগার কথা।’ ২৪ মিনিটের মাথায় দি মারিয়াকে বাজেভাবে ট্যাকল করার দায়ে চিলির প্রথম হলুদ কার্ডটি দেখেছিলেন ফার্নান্দো সিলভা। প্রথমার্ধের মধ্যেই হলুদ কার্ড দেখেন চিলির তিনজন খেলোয়াড়।
শারীরিক শক্তির প্রদর্শনী অব্যাহত থাকে দ্বিতীয়ার্ধেও। ৬০ মিনিটে আর্জেন্টিনার একটি কর্নার কিকের আগমুহূর্তের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে ডেইলি মেইলের ধারাভাষ্যে বলা হয়েছে, ‘সব ধরনের ধাক্কাধাক্কি আর ঠেলাঠেলি হচ্ছে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে। আর এর মধ্যে সিলভা তার বুট হারিয়ে ফেলেছে।’ রেফারি কেন এগুলো ঠেকাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি, সে প্রশ্নও উঠেছে ফুটবল অঙ্গনে। ৮৯ মিনিটে আর্জেন্টিনা বঞ্চিত হয়েছে নিশ্চিত একটি পেনাল্টি থেকেও। চিলির পেনাল্টি বক্সের মধ্যে রোহোকে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দিয়েছিলেন সিলভা। কিন্তু পেনাল্টির আবেদন করে ফল পাননি আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা।
কোয়ার্টার ও সেমিফাইনালেও চিলি পেয়েছিল প্রতিপক্ষের এক বা দুজন খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখার সুবিধা। কোয়ার্টার ফাইনালে চিলির প্রতিপক্ষ উরুগুয়ের দুজন খেলোয়াড় দেখেছিলেন লাল কার্ড। ৬৩ মিনিটে মাঠ ছেড়েছিলেন এডিনসন কাভানি। ৮৮ মিনিটে হোর্হে ফুসিলে। এই ম্যাচে চিলি পেয়েছিল ১-০ গোলের জয়।
সেমিফাইনালের বেশির ভাগ সময়ই চিলি খেলেছে ১০ জনের দলের বিপক্ষে। ২১ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন পেরুর ডিফেন্ডার কার্লোস জামব্রানো। এই ম্যাচে চিলি জিতেছিল ২-১ গোলে।