ঈশ্বরের ডাবল সেঞ্চুরি
নিশ্চয় দারুণ আক্ষেপ হয়েছিল ভিভ রিচাডর্সের। ১১ রান করতে রিচি রিচার্ডসন ও গর্ডন গ্রিনিজ খেলেন ৭ ওভার। অষ্টম ওভারে ব্যাট হাতে মাঠে নামের রিচার্ডস। ১৮৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়াল সময় হয়তো মনে হয়েছিল, ইশ! আর মাত্র ১১টা রান হলেই তো..।
১২ বছর পর একই আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন গ্যারি কারস্টেন। দুর্বল আরব আমিরাতের বোলারদের শাসিয়ে করেন ১৮৮ রান। তবে সবচেয়ে বেশি হতাশ হন সাঈদ আনোয়ার। চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে যখন ১৯৪ রান করে আউট হন তখনো ম্যাচের ১৮ বল বাকি! সৌরভ গাঙ্গুলীর দারুণ ক্যাচে বিদায় নেওয়ার সময় নিজের রানটা দেখে নিশ্চয় কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন পাকিস্তানি এই ব্যাটসম্যান। চালর্স কভেন্টি অপরাজিত থাকেন ১৯৪ রানে। ডাবল সেঞ্চুরি কেউই করতে পারেননি। বিধাতাও হয়তো এটাই চেয়েছিলেন। নইলে এত কাছে গিয়েও কেন পারলেন বাকিরা।
কারণ একটাই। ক্রিকেটের রঙিন এই ফরম্যাটে শচীনের ধারেকাছেও তো কেউ নেই। ওয়ানডে ক্রিকেটের সমৃদ্ধি তো শচীনেরই হাতে গড়া। এ কারণে নিয়তিও হয়তো ক্রিকেটের এলিট এই গ্রুপের উদ্বোধনটা শচীনের হাত দিয়েই করাতে চাচ্ছিলেন। ৩৯ বছর আর ২৯৬১ ওয়ানডে পর প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। আর সেটি এলো ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে ভালো ছাত্রটির হাত ধরেই।
২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ শুরুর সময় কখনই মনে হয়নি এই ম্যাচটিই ক্রিকেটের বুকে সবচেয়ে বড় দাগ কেটে রাখবে। দলীয় ২৫ রানে শেবাগকে ফিরিয়ে দেন পারনেল। এরপর শচীন ও দীনেশ কার্তিক মিলে যোগ করেন ১৯৪ রান। এই জুটিতে শতকও পেয়ে যান ভারতের ক্রিকেট ইশ্বর। কাতির্ক আউট হওয়ার সময় ১২৪ রানে অপরাজিত শচীন। এরপর ইউসুফ পাঠান ও ধোনিকে নিয়ে আরো দারুণ দুটি জুটি গড়েন এই ব্যাটসম্যান। শচীনের রানটা ১৭০ রান পেরুতেই গর্জে ওঠে গোয়ালির। শচীনের প্রতি রানে হতে থাকে গগন বিদারী আওয়াজ। ক্ষণে ক্ষণে কাঁপতে থাকে ক্যাপ্টেন রুপ সিং স্টেডিয়াম। পারনেলের বলটা ঠেকিয়ে দিয়েই দুই রানের জন্য দৌড়ালেন। গোটা ভারত যেন তার জন্য প্রার্থনায় বসে গেল। দুই রান হতেই ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্কোরার হয়ে গেলেন শচীন টেন্ডুলকার।
অনেক্ষণ ব্যাটিং করার কারণে বেশ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন, রান নিতে সমস্যা হচ্ছিল তবে এক দুই রান এগোতে থাকেন। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে এক রান নিতেই তৈরি হয়ে গেল ক্রিকেট নতুন ইতিহাস। ৩৯ বছর পর পর ডাবল সেঞ্চুরিয়ান পেল ওয়ানডে ক্রিকেট।