রোহিঙ্গা সংকট
ভারতের ভূমিকা ও বৈশ্বিক পুঁজিবাদ
১.
কথা বলব আজকের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মহাসংকট নিয়ে। আর কথা বলব রোহিঙ্গা সংকটে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রহস্যজনক ভূমিকা এবং বৈশ্বিক পুঁজিবাদের লীলাখেলা নিয়ে।
বর্তমান সময়ে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর, বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নৃশংস গণহত্যা এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ‘হিটলারী’ অভিযান শুরু হওয়ার পর, অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দুটি প্রকাশ্য তৎপরতা (গোপন তৎপরতা সম্পর্কে সম্ভবত দেবতারাও অবহিত নন) দেশ-বিদেশে সব মহলের খুবই সতর্ক দৃষ্টিআকর্ষণ করেছে।
এই দুইটি তৎপরতার মধ্যে একটি হলো— মিয়ানমার সরকার ঠিক যে মুহূর্তে আরাকানে গণহত্যা ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঠেলে দিচ্ছে, সেই মুহূর্তে পৃথিবীর একজন রাষ্ট্রপ্রধানই তড়িঘড়ি করে মিয়ানমার সফর করেন, আর তিনি হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আশা করা হয়েছিল, ভারত যেহেতু বাংলাদেশের পরম ‘বন্ধুরাষ্ট্র’, তাই রোহিঙ্গা সংকটের কারণে সৃষ্ট বাংলাদেশের এই মহাসংকটকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানো ও তাদেরকে লাখে লাখে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ফ্যাসিবাদীকর্ম অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি যদি নাও করতে পারেন, অন্তত আহ্বান জানাবেন, এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে আর কিছু না হোক, অন্তত দেশে ফিরে গিয়েও একটি বিবৃতি দেবেন। কিন্তু না, মোদিজী সেদিকে পা বাড়াননি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সরকারের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও তাদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ তো দূরের কথা, এমনকি এ বিষয়ে একটি টু-শব্দ পর্যন্ত করেননি তিনি। বরং বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করে এবং বাংলাদেশের মানুষদের, এমনকি পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের অনেক রাজ্যের মানুষদের হতভম্ব করে দিয়ে এই নৃশংস গণহত্যাকে নরেন্দ্র মোদি পরোক্ষভাবে সমর্থন করে তাকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ন্যায়যুদ্ধ’ আখ্যায়িত করে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে দেশে ফিরলেন।
এদিকে মিয়ানমারের অন্য দুই বন্ধুরাষ্ট্র চীন ও রাশিয়াও মিয়ানমার সরকারের পক্ষাবলম্বন করছে। কিন্তু এই দুই দেশের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মতো তড়িঘড়ি করে সশরীরে মিয়ানমার উপস্থিত হয়ে এই রকম উলঙ্গভাবে মিয়ানমার সরকারের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেননি। এখানে কে বেশি ফ্যাসিবাদী- ভারত সরকার, না রুশ-চীন সরকার এ নিয়ে কোনো তুলনামূলক বিচার-বিতর্ক অবান্তর। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়- ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই ন্যক্কারজনক ভূমিকা বিশ্ববাসীর মনে গুরুতরভাবে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
২.
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিতীয় তৎপরতাটি আরো বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করার মতো ব্যাপার। সেটি হলো, মিয়ানমার সরকার যে মুহূর্তে রোহিঙ্গা মুসলমানদের কচুকাটা করছে, লাখে লাখে দেশ থেকে বিতাড়িত করছে সেই মুহূর্তে- বিগত প্রায় এক দশক আগে থেকে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের সামরিকজান্তার দ্বারা বিতাড়িত যে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল এবং যাদের নিয়ে ভারতে এত দিন কোনো হৈচৈ হয়নি, ভারত সরকার এখন তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠাতে বদ্ধপরিকর হয়ে উঠেছে। ভারতের প্রতিবেশী ক্ষুদ্ররাষ্ট্র বাংলাদেশ যেখানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর অসহনীয় বোঝা মাথায় নিয়ে মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে, সেখানে বিশাল রাষ্ট্র ভারত মাত্র ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে এই মুহূর্তে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠাতে ‘বদ্ধপরিকর’ হওয়াকে এক রহস্যজনক রাজনীতি বলে অনেকে মনে করছেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অনেক আগে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে এখন মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠানোর অর্থ হলো তাদের মৃত্যুর মুখে অথবা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঠেলে দেওয়া। কারণ তারা মিয়ানমারে ফেরৎ গেলে গণহত্যার মুখে পতিত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশেই আশ্রয়গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। দিল্লির সরকারও এটা ভালো করে বুঝে এবং জানেও। এ জন্যই দিল্লির সরকারের এই তৎপরতা রহস্যজনক।
এদিকে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে রোহিঙ্গাদের এ দেশে থাকতে দেওয়া হবে না।’ একই সঙ্গে এক অত্যাশ্চর্য তথ্য পরিবেশন করে রাজনাথ সিং আরো বলেছেন, ‘মিয়ানমার সরকার যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আগ্রহী তখন সামান্য কিছু মানুষ কেন বিরোধিতা করছেন?’
কী আচানক কথা! জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রের সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নিতে অবিরাম চাপ সৃষ্টি করা সত্ত্বেও মিয়ানমার সরকার যেখানে শরণার্থীদের দেশে ফেরত নেওয়া তো দূরের কথা, বরং রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও দেশত্যাগে বাধ্য করা অব্যাহত রেখেছে- সেখানে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত নিতে ‘মিয়ানমার সরকার আগ্রহী’ এটা খুবই রহস্যজনক ব্যাপার বটে। এসব রহস্যময় ঘটনার মধ্যে- নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং সেই সঙ্গে স্বাধীনরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী এক গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য অনুযায়ী ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গারা যদি ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয় (রাজনাথ সিং অন্যত্র বলেছেন, এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নাকি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ আছে), তবে তো ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গারাও ‘সন্ত্রাসী’! তাহলে প্রশ্ন ওঠে- এই ৪০ হাজার ‘সন্ত্রাসী’কে হয়তো ভারতে বলি দেওয়া সম্ভব নয়, তাই তাদের মিয়ানমারের জল্লাদদের হাতে তুলে দেওয়ার মিশন নিয়েই কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবারের মিয়ানমার সফর? এর মধ্যে আরো খবর হলো, মিয়ানমারের জল্লাদদের হাতে এই মুহূর্তে ভারত নতুন করে অস্ত্রের চালান পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৪০ হাজার বলির পাঠা এবং খড়গ (অস্ত্র) একসঙ্গেই মিয়ানমারে পাঠাচ্ছে ভারত।
৩.
চলমান ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে, যে এক সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের কথা বলছি তার রাজনৈতিক ব্যাখ্যাও অনায়াশে করা যেতে পারে। উপমহাদেশের রাজনীতিতে এমনিতেই বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের নিতীনির্ধারকদের মনে সবসময়ই এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-সংশয় কাজ করে। বাংলাদেশ অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে থাকলে ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ দুর্বল থাকলে, চাপের মধ্যে থাকলে ভারত স্বস্তিবোধ করে। সাম্প্রতিক গ্লোবাল ও রিজিওন্যাল রাজনীতির সম্ভাব্য নতুন মেরুকরণের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান মুহূর্তে দিল্লির নিতীনির্ধারকদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে এই দ্বিধা-সংশয় আরো বৃদ্ধি পাওয়ারই কথা। তাই বর্তমানে রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে মহাসংকট তৈরি হয়েছে তার প্রেক্ষাপটে বলা যায়- দক্ষিণ-এশীয় অঞ্চলের পরাশক্তি ভারতের নিতীনির্ধারকরা সম্ভবত চান, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশটি ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী চাপের মধ্যে থাকুক। এর ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশ বিশৃঙ্খলায় পতিত হয়ে দুর্বল হবে, তাতে দেশটিকে দিল্লির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে। বাস্তব অভিজ্ঞতায় ৪৬ বছর ধরে এটাই হলো বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্ট্র্যাটেজি।
এদিকে আপাতদৃষ্টিতে মিয়ানমারের সবচেয়ে নিকট বন্ধু হলো চীন। ‘আপাতদৃষ্টিতে’ বললাম এ কারণে যে, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরো অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ, আর সে সম্পর্ক শুধু বাণিজ্যিক ও কৌশলগতই নয়, আদর্শগতও। অপরদিকে চীন-মিয়ানমার সম্পর্ক প্রধানত বাণিজ্যিক ও কৌশলগত। মিয়ানমারে চীনের রয়েছে বিশাল অঙ্কের (১৮-১৯ বিলিয়ন ডলারের) বিনিয়োগ। তা ছাড়া আরাকান উপকূলে রয়েছে মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের যৌথভাবে একটি সমুদ্রবন্দর, যা গভীর সমুদ্রবন্দরে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ রকম অবস্থায় চীন স্ট্র্যাটেজিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থে বর্তমান রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারের পক্ষাবলম্বন করছে (অবশ্য রোহিঙ্গা সংকট জটিল না হলে চীনের অবস্থান পূর্ববৎ স্বাভাবিকই থাকত)। আজকের বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতি ও কূটনীতির সম্ভাব্য নতুন মেরুকরণের প্রেক্ষাপটে চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে আগ্রহ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বর্তমান মুহূর্তে- বাংলাদেশকে টার্গেট করে গুরুতর রোহিঙ্গা সংকট তৈরির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য যদি মনে করা হয় একদিকে বাংলাদেশকে নতুন সংকটের মধ্যে ফেলা, অন্যদিকে চীনকে টানাপড়েনের মধ্যে ফেলার জন্য, তাহলে সেটি মোটেও অযৌক্তিক হবে না।
অতপর দিল্লির আকাঙ্ক্ষা মতে এর ফলে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ তার অর্থনীতির বিকাশ ও নিরাপত্তার স্বার্থে ইতিমধ্যে চীনের সঙ্গে পুরোনো বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ঠ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে (যা ভারতের জন্য চক্ষুশূল), বর্তমান জটিল মুহূর্তে নিরুপায় হয়ে সেই উদ্যোগ থেকে বাংলাদেশ সরে এসে পুরোপুরি ভারতের ‘কল্পতরুর’ নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে। এর পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য দেশের অভ্যন্তরে ইতিমধ্যে একশ্রেণির অন্ধ-ভারতপ্রেমীদের জোরেসোরে প্রপাগাণ্ডাও শুরু হয়ে গেছে। এমনকি প্রগতিবাদী দাবিদার বড় বড় বুদ্ধিজীবী লেখকরাও ইতিমধ্যে কলাম লেখা শুরু করেছেন, যার মর্মার্থ হলো- চীন কখনোই আমাদের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হতে পারে না। ভারতই আমাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও নির্ভরযোগ্য বন্ধু। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এবং আমাদের অনন্তকালের শত্রু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত যেমন আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু, তেমনি প্রয়োজনে মিয়ানমার ও চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য লড়াইয়েও ভারতই হবে আমাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর এদিকে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এইরূপ একটি ‘মনোগঠন’ তৈরি করার লক্ষ্যেই যে রোহিঙ্গা সংকটকে পুঁজি করে এ ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে তাতে সন্দেহ কি? আর এই তৎপরতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে কোনো নেপথ্য শক্তি তাতেই বা সন্দেহ কি? তাহলে গুরুতর রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপটে ছোট্ট করে এইরূপ একটি প্রশ্ন তোলা যায়, সেটি হলো- আজকের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর পরিচালিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঠেলে দেওয়ার খলনায়ক শুধু কি অং সান সু চি ও তাঁর সামরিক জান্তাই, নাকি দিল্লির নীতিনির্ধারকরাও?
অন্যদিকে আবার দেখুন, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগসাজশকারী এই ভারত সরকারই আবার রোহিঙ্গা-দরদি সেজে গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার মতো বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সান্ত্বনার রিলিফসামগ্রী পাঠাচ্ছে - উদ্দেশ্য, রোহিঙ্গাদের বাঁচানো নয়, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের মন জয় করা এবং বিশ্ববাসীকে দেখানো যে, দিল্লির সরকার কত ‘মহানুভব’। একেই বুঝি বলে ‘চাণক্য কৌশল’।
তবে চাণৈক্য কৌশল হোক আর যাই হোক, চূড়ান্ত বিশ্লেষণে এই সবই হচ্ছে পুঁজির খেলা। সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি, সম্প্রসারণবাদী পুঁজি, ইহুদিবাদী পুঁজি তথা নয়াঔপনিবেশিক পুঁজির খেলা। এই খেলা চলছে আজ বিশ্বব্যাপী। এ খেলার ‘বিলবোর্ডে’ সাঁটানো রয়েছে গণতন্ত্রের স্লোগান, মানবতার স্লোগান; ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও প্রগতির স্লোগান। আর প্রতিপক্ষ করা হয়েছে গোটাবিশ্বের নিপীড়িত সর্বহারা শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে।
লেখক : রাজনৈতিক কর্মী