রোহিঙ্গা ইস্যু ও কিছু ক্ষুদ্রতা
বিশ্বের একটি আলোচিত দেশের নাম এই মুহূর্তে বাংলাদেশ। যে দেশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের সঙ্গে মানবিক পরিচয় দিচ্ছে। যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। নিজেদের ভূখণ্ডে অন্য দেশের বিতাড়িত মানুষদের আশ্রয় দেওয়া আর যাই হোক চাট্টিখানি কথা না।
সরকারসহ সাধারণ মানুষ তাদের জন্য সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকা, পাড়া, মহল্লায় তরুণরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছে। রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের জন্য কিছু করতে ত্রাণ নিয়ে ছুটছে টেকনাফ-কক্সবাজারের দিকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা আমাদের ব্যথিত করে। কেন বিএনপির ত্রাণ নিয়ে যাওয়া দলকে পুলিশ বাধা দিবে? বোধগম্য না বিষয়টি। এই ক্ষুদ্রতা বর্জনীয়।
বাংলাদেশটা তো আমাদের সবার। বিশ্বব্যাপী সুনাম হচ্ছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে যে মহানুভবতা দেখাচ্ছে, তা বিশাল ব্যাপার। এই ধরনের হীনম্মন্যতা বর্জন জরুরি। বিরোধী দল ত্রাণ দিল না অন্য কেউ দিল তা কিন্তু বিশ্ববাসী জানবে না। জানবে বাংলাদেশের মানুষ ত্রাণ দিয়েছে। সেখানে এককভাবে বিএনপির ক্রেডিট পাওয়া না পাওয়ার কিছু নেই। এই ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টিতে কারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করা দরকার। এতে দেশের সুনাম বৃদ্ধি হয় না। সরকারের ক্ষুদ্রতাই প্রকাশ পায়।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উখিয়া ঘুরে এসেছেন। নির্যাতিত পরিবারগুলোর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন, সেখানে গিয়ে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছেন। সেই ছবি দেশবাসী দেখেছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সাহায্য সহায়তা দেওয়া হবে। তাঁর এই বক্তব্য মহানুভবতারই পরিচয় বহন করে। কিন্তু তাঁর এই সফর নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো পাঁচ হাজার লোকের হাতে খাওয়া তুলে দিলেও পারতেন। আসলে এই যাওয়া লোক দেখানো।’ আমরা এই ধরনের বক্তব্য কামনা করি না। এটাও বিএনপির ক্ষুদ্রতাই প্রকাশ করে।
সবচেয়ে অবাক এবং হাস্যকর বিষয় মনে হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন তা নিয়ে চাটুকাররা নোবেল পুরস্কারকে টেনে এনেছেন। কেন এই সময়, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হোক, তিনি অনেক মানবিক, তাঁর মতো নেত্রী হয় না. এগুলো বলে চাটুকারিতা করতে হবে?
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যাও এই ধরনের হাস্যকর প্রস্তাবের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে হেসেছেন। কারণ তিনি নোবেলের জন্য রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াননি। তাদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছেন প্রশাসনকে। পাশাপাশি তাদের যাতে ফিরিয়ে নেওয়ার হয় সেই কথাও বিশ্বকর্তাদের জানিয়েছেন। তিনি শুধু আশ্রয় দিয়েই ক্ষান্ত হননি। রোহিঙ্গারা যাতে নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে সে ব্যাপারেও চিন্তিত।
আমরা এই মুহূর্তে একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই কাল আমরা দলমত নির্বিশেষে মোকাবিলা কীভাবে করতে পারি সে জন্য চেষ্টা চালানো দরকার। এখানে কে আগে ত্রাণ নিয়ে গেল, কে পরে গেল, এই ধরনের ছেলেমানুষি বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এই ক্রান্তিকালে অনেক দেশের সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা আমাদের দেশে আসবেন। তাঁরা যখন দেখবেন আমাদের রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুাড়ি তখন তাঁরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কী ধারণা নিয়ে যাবেন? সেটা একটু ভেবে দেখবেন আশা করি নেতানেত্রীরা।
আরেকটি বিষয় খুব দক্ষভাবে খেয়াল রাখতে হবে, রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণের কথা বলে কোনো গোষ্ঠী যেন নিজেদের আখের গোছাতে না পারে। কারণ এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে, কোথাও কোথাও ত্রাণের কথা বলে চাঁদা তোলা হচ্ছে। কিন্তু সেই অর্থ কোথায় যাচ্ছে কেউ জানে না। আমরা প্রশাসনসহ সমাজের সচেতন ও দায়িত্বশীল মানুষের কাছে আশা রাখি কোথাও এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, একটু খেয়াল রাখবেন। কারণ আমরা নিপীড়িত মানুষের জন্য সাহায্য তুলছি। আর সেই অর্থ যদি কেউ লোপাট করে এবং দেশের বাইরের কোনো সংবাদ সংস্থা জেনে যায় তাহলে দেশেরই বদনাম হবে। সম্মান ক্ষুণ্ণ হবে লাখো শহীদের রক্তে পাওয়া লাল সবুজের বাংলাদেশের।
লেখক : ছড়াকার ও লেখক।