রাবিতে ৩৮ দিন ধরে উপাচার্য নেই, আটকে আছে পরীক্ষার ফল!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের ছাত্রী সামিরা জান্নাত সেতু স্কলারশিপের জন্য আবেদন করবেন। আগামী ৩০ এপ্রিল আবেদনের শেষ দিন। কিন্তু তাঁর তৃতীয় বর্ষের মানোন্নয়নের ফল অনার্সের সনদপত্রে যুক্ত না হওয়ায় আবেদন করতে পারছেন না।
শুধু সেতু নয়, ৩৮ দিন ধরে রাবির উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য না থাকায় এভাবে অনেক শিক্ষার্থীর ফল ও সনদপত্র তৈরিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। এ ছাড়া শিক্ষা, গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারছেন না শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তাঁরা ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) পাওয়ার জন্য আবেদন করলেও উপাচার্য না থাকায় সেটা মিলছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ রাবির উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহানের মেয়াদ শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদ দুটি ফাঁকা হওয়ায় রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে ২০ মার্চ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়। এ ছাড়া এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হলেও এখনো মন্ত্রণালয় থেকে উত্তর আসেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজ মিলে প্রায় ১০০ পরীক্ষার ফল এখন দপ্তরে আটকে আছে। ফল তৈরি থাকলেও এতে উপাচার্য অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, লোক প্রশাসন, সমাজকর্ম, সংগীত, ফার্সি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইংরেজি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফিশারিজ, এনিমেল হাজবেন্ড্রি অ্যান্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স, ফাইন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ফল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে জমা হয়ে আছে। এ ছাড়া আরো একাধিক বিভাগের ফল প্রস্তুত করা থাকলেও তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এক বিভাগের অন্তত তিনটি ফলও জমা দেওয়া রয়েছে দপ্তরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজেরও অনেক ফল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে রয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে খুলনা পর্যন্ত সব মেডিকেল কলেজের ফল উপাচার্য ছাড়া দেওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (রেজাল্ট) আবদুল গফুর বলেন, ‘আমরা ফল তৈরি করে বসে আছি। সেই ফল প্রকাশ করতে হলে উপাচার্যের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু উপাচার্য না থাকায় সেটা করা যাচ্ছে না। এতে অনেক শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়লেও আমরা কিছু করতে পারছি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সায়েন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদ দুটি খালি থাকায় সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা আমি দিতে পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অর্থের বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না।’
সায়েন উদ্দিন বলেন, ফিন্যান্স কমিটির, একাডেমিক কমিটির বৈঠকসহ অন্যান্য আর্থিক খাত, পরীক্ষার ফল প্রকাশ থেকে শুরু করে পরীক্ষা কমিটি গঠন, মূল সনদপত্র উত্তোলন, ভর্তি কার্যক্রম, বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজনের অনুমোদনের কাজ আটকে আছে। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন অচল হয়ে পড়েছে।’