ইলিশের অজুহাতে বেড়েছে দেশি মাছের দাম
ঈদের পর রাজধানীর কাঁচাবাজারে কিছুটা উত্তাপ ছড়ালেও চলতি সপ্তাহে সবজির বাজারের দামদর স্বাভাবিক। তবে মা ইলিশ রক্ষায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, পরিবহন ও বেচাকেনা নিষিদ্ধ করার অজুহাতে বেড়েছে দেশি মাছের দাম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, হাতিরপুল বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বাজারে কাঁচা তরকারি ও শাকসবজির সরবরাহ বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সবজির দর অনেকটা কমে এসেছে।
তবে চাষের মাছসহ দেশি প্রজাতির নদীর মাছের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। কারণ হিসেবে মাছ বিক্রেতারা ১৫ দিনের জন্য ইলিশ সরবরাহ বন্ধকেই তুলে ধরছেন ক্রেতার সামনে। বিক্রেতাদের দাবি, কদিন আগেও বাজারে ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের অনেক ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। এখন বাজারে কোনো ইলিশ মাছ নেই। তাই অন্য মাছের দাম বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সারা দেশে এখনো দেশি মাছ আহরণ পুরোদমে শুরু হয়নি। ফলে বাজারে রয়েছে সরবরাহের ঘাটতি। কিন্তু চাহিদা তো কমেনি। এ কারণে দেশি মাছের দাম বেড়েছে। ১০ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলে সব মাছের দামই অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ও জাতভেদে প্রতি কেজি চিংড়ি ৫০০-৭০০ টাকা, প্রতি কেজি রুই ২২০-২৬০, কাতলা ২৫০-৪০০, মলা ৩২০-৩০০, পাবদা ৫০০-৬০০ ও চাষের শিং ৪০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি মাগুর ৬৫০-৭০০ টাকা, শোল মাছ ৫০০-৫৫০ ও পাঙ্গাশ ১২০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহ থেকে সবজির বাজার অনেকটাই স্বাভাবিক। হাতিরপুল বাজারের কাঁচামাল বিক্রেতা কামরুল জানান, ঈদের পর বন্ধের কারণে সরবরাহ কম ছিল, ক্রেতাও কম ছিল। আবার কোনো কোনো বাজারে দোকানিরাও গ্রামে থাকায় বাজার বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল, যার কারণে পণ্যের দরও কিছুটা এলোমেলো ছিল। এখন আবার সবকিছু ঠিকমতো শুরু হয়েছে। সবজিসহ সব পণ্যের দামও স্বাভাবিক হয়েছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মোখলেছ জানান, গত সপ্তাহে কাঁচামালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাম বেড়েছিল কাঁচামরিচের। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছিল বাজার ও প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
কারণ হিসেবে ওই ব্যবসায়ী জানান, কোরবানির গরুবাহী ট্রাক রাজধানীতে আসায় ভারতীয় মরিচ আসতে পারেনি, তার আগে টানা বৃষ্টিতে ফসলের জমি তলিয়ে যাওয়া আর ঈদের পর বাজার বন্ধ থাকায় দাম বেড়েছিল। এখন পাইকারি বাজারে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) কাঁচামরিচ ৭০০-৭৫০ টাকা। আর খুচরা বাজারে ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হাতিরপুল বাজারের ক্রেতা মমিনুল ইসলাম জানান, কাঁচামালের দাম কিছুটা কমেছে। এটা গত সপ্তাহের তুলনায়, কিন্তু এ সময়ে কাঁচা তরিতরকারির দর আরো অনেক কমার কথা। এখন মাছের মৌসুম চললেও মাছের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় আরো অনেক বেড়েছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মুলা ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কালো লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০-৬৫, বরবটি ৬০ ও শিম ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর কচুরলতি ৩০ টাকা, পটোল ৫০, গাজর ৭০, চিচিঙ্গা ৬০-৬৫, ঝিঙে ৬০-৬৫, কাঁচা কলা প্রতি হালি ২০-২৫, কচুরমুখি ৪০-৫০, কাঁচা পেঁপে ২৫-৩০, কাঁকরোল ৫০, শসা ৩০-৪০, আলু ২৫-২৮, করলা ৬০-৭০ ও টমেটো ১১০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
নতুন বাজারে আসা সবজির মধ্যে সাইজভেদে প্রতিটি কচু ৪০-৫০ টাকা, লাউ ৭০-৮০, জালি কুমড়া ৫০-৬০, ফুলকপি (ছোট) ৪০ টাকা এবং সাইজ ও ধরনভেদে লেবু ২০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি আঁটি লাল শাক ও সবুজ শাক ২০-২৫ টাকা, পুঁই শাক ১৫-২০ ও ডাঁটা শাক ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সাইজ, বাজার ও পণ্যের মানভেদে এসবের দাম প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পার্থক্য লক্ষ করা গেছে।
এদিকে, সেপ্টেম্বরে বৃষ্টির কারণে রবিশস্যের উৎপাদন ব্যাহত ও শীতকালীন সবজি এখনো বাজারে না আসায় তরিতরকারির দাম বেশি রয়েছে বলে মনে করছেন কাঁচাবাজার-সংশ্লিষ্টরা। এ মাসের শেষের দিকে শীতের সবজি বাজারে আসা শুরু করলেই দাম কমে আসবে বলে ধারণা তাঁদের।
মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের ক্রেতা মীর কাইজম রেজা বলেন, ঈদ আর বৃষ্টির মতো কোনো ইস্যু তৈরি হলেই নানা অজুহাতে বাজারে সবজি আর তরকারির দাম বাড়ে। দাম বাড়ার পেছনে পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত রয়েছে কি-না, তা মনিটর করা দরকার। তবে সব ক্ষেত্রেই আমরা (ভোক্তারা) নিরুপায়।
এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে রসুনের দাম। আলু, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, আদাসহ কয়েকটি পণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে। আলুর কেজি ২৫-২৮ টাকা, পেঁয়াজ ৭৫, দেশি মসুর ডাল ১২০, খেসারি ডাল ৫০, মুগডাল ১১০ টাকা আর অ্যাঙ্কর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে।
গত সপ্তাহে মোটা চালের দাম কেজিতে এক টাকা বেড়েছিল। চলতি সপ্তাহে চিকন চালের দামও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৫২ টাকা, মিনিকেট ৪৮-৪৯, সাধারণ মিনিকেট ৪০, মোটা চাল ৩২ ও আতপ চাল ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩০ টাকা, লেয়ার মুরগি ১৬০, পাকিস্তানি মুরগি ৩০০, দেশি মুরগি প্রতিটি আকারভেদে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা আর কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।