তরুণী দিয়ে প্রেমের ফাঁদ!
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় তরুণী দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। বিত্তশালীকে টার্গেট করে তারা বসাত প্রেমের ফাঁদ। সেই ফাঁদে পড়লে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে চলত ব্লাক মেইল। আদায় করা হতো লাখ লাখ টাকা। এই ফাঁদ তৈরিতে পরিচয় দেওয়া হতো ডিবি ও সাংবাদিক পরিচয়। অবশেষে চক্রের মূলহোতাসহ সাতজনতে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
আজ শনিবার (৪ মে) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান। তিনি জানান, চক্রের সদস্য তরুণী তাসনুবার মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়। পরে তাসনুবা ও প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য মোজাম্মেল পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শারীরিক সম্পর্কের প্রলোভনে নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে গিয়ে অশ্লীল ভিডিওচিত্র ধারণ করে। পরে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।
পরে ডিবি পরিচয়ে প্রতারণা চক্রের অপর দুই সদস্য আয়াত উল্লাহ ও আব্দুর রহিম যোগ দেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ইমরান হোসেন ও কবীর হোসেন। ভিকটিমকে থানায় মামলা দেওয়ার ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। সাতটি খালি স্ট্যাম্পে নেওয়া হয় স্বাক্ষর।
এতেও চক্রটি ক্ষান্ত না হয়ে ভিকটিমকে মামলায় জড়ানো ও প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত সাতটি চেক ও নগদ দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। পরবর্তীতে আরও ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দেওয়ার শর্তে ভিকটিমকে ছেড়ে দেয়। এখানেই শেষ নয়। চক্রের আরেক সদস্য, মোজাম্মেল হক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শুরু করে ভিকটিমকে নতুন করে ব্ল্যাকমেইল। ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে ভিকটিমের অনৈতিক ভিডিও দিয়ে তৈরি করা হয় ‘কাল সময়’নামক একটি মিডিয়ার নাম বলে নিউজ।
নিউজটি ভিকটিমের ছেলের মোবাইলে প্রেরণ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। ভিকটিমের ছেলে বাবার সম্মানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিমানে প্রতারক চক্রকে নগদ টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে সর্বমোট ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করে। এই ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করে। পরে, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে শনিবার রাত দেড়টায় সৈয়দ আয়াত উল্লাহকে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় টাউন হলের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন—কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার সুবর্ণপুর এলাকার সৈয়দ আয়াত উল্লাহ (৩৭), বালুতুপা গ্রামের ইমরান হোসেন (৪০), একই এলাকার মো. কবির হোসেন (২৮), বরুড়া উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মো. মোজাম্মেল হক (৩৬), গালিমপুর গ্রামের মো. আব্দুর রহিম (৪২), চান্দিনা উপজেলার কেশরা গ্রামের তাসনুবা আক্তার (২৩) ও লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা গ্রামের মো. সাখাওয়াত হোসেন (২৮), ভুয়া সাংবাদিক মোজাম্মেল হক (৩৬)
এ সময় তাদের কাছ থেকে অলিখিত সাতটি স্ট্যাম্প, ভিকটিমের স্বাক্ষরিত সাতটি চেক, চাঁদাবাজির নগদ ২৪ হাজার টাকা ও অপরাধে ব্যবহৃত একটি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মংনেথোয়াই মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) নাজমুল হাসান রাফি, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ রাজেশ বড়ুয়া প্রমুখ।