আব্বা একটা বড় চাকু আমার গলায় ধরে : সোয়াদ
“আব্বা বলেন, ‘তুই কি ঝগড়া লাগাইতে চাস? তোর আম্মার মতো হয়েছিস।’ আমি বলি, আমার আম্মার নামে এসব কথা বলবা না। খবরদার! আব্বা বলে ‘তোর মায়ের সাথে কথা বন্ধ কর, এই কথাগুলাও বন্ধ হয়ে যাবে।’ আমি বলি বন্ধ করব না! আব্বা তখনি রান্নাঘরে গিয়ে একটা বড় চাকু নিয়ে এসে আমার গলায় ধরে।”
এভাবেই গলায় ছুরি ধরার কথা ফেসবুকে প্রকাশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমদের ছেলে আয়মান সোয়াদ আহমদ (১৪)। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক স্ট্যাটাসে সোয়াদ এসব কথা বলে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আকতার জাহান জলি তার মা।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে নিজ কক্ষ থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলির (৪৫) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আকতার জাহানের সাবেক স্বামী তানভীর আহমদ। তাদের একমাত্র সন্তান আয়মান সোয়াদ আহমদ।
মরদেহ উদ্ধারের দিন রাতে আকতার জাহানের কক্ষ থকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘যে বাবা তার সন্তানের গলায় ছুরি ধরতে পারে, সে যেকোনো সময় সন্তানকে মেরেও ফেলতে পারে বা মরতে বাধ্য করতে পারে।’
ছুরি ধরার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আয়মান সোয়াদ লিখেছে, “অনেকদিন ধরেই আমার কাছে ওই ‘গলায় ছুরি’ ধরার ঘটনাটা জানতে চাওয়া হচ্ছে। আজকেই বলেই দেই, কী ঘটেছিল ওই দিন। আম্মা আর আমি বাইরে যেতে চাইছিলাম আমার এক বান্ধবীর বাসায় (বান্ধবীর নাম মেনশন করলাম না)। সারাদিন প্ল্যানিং করার পর আমি আব্বার কাছে অনুমতি চাইতে গেছিলাম। অনুমতি চাওয়ার সময় আব্বা বলে ‘তোমার আম্মাকে বলো ওর মতো চলে যেতে। আমি তোমাকে দিয়ে আসব।’ আমি বললাম, আজব তো। আমি আর মা এই জিনিস প্ল্যান করছি। তুমি কেন interfere করতেছ? আব্বা বলল ‘বাপ হিসেবে আমার এই অধিকার আছে।’ আমি বললাম, কিন্তু আম্মার সাথে প্ল্যান নষ্ট করার অধিকারও তোমার নাই। আব্বা বলে ‘main thing is....তোমাকে ওই মহিলার সাথে যেতে দেব না। গেলে আমার সাথে যাবা, নাহলে নাই।’ আমি বলি, কী এমন করছে যে এত ক্ষতিকর মনে করো আম্মাকে? হ্যাঁ?”
সোয়াদ লিখেছে, “আব্বা কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে যায়। পরে বাধ্য হয়ে আম্মাকে ফোন দিয়ে বলি যে আমি যেতে পারব না আজকে। মা বলে, ‘আমি বুঝছি কী হয়েছে। চিন্তা করিস না বাবা। আর কয়েকটা দিন।’ পরে সন্ধ্যা বেলায় আব্বাকে বলি ‘প্ল্যানটা নষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ’ তখনি আব্বা বলে উঠে ‘তুই কী ঝগড়া লাগাইতে চাস? তোর আম্মার মতো হয়েছিস।’ আমি বলি, আমার আম্মার নামে এসব কথা বলবা না। খবরদার!’ আব্বা বলে ‘তোর মায়ের সাথে কথা বন্ধ কর, এই কথাগুলাও বন্ধ হয়ে যাবে।’ আমি বলি, বন্ধ করব না! আব্বা তখনি রান্নাঘরে গিয়ে একটা বড় চাকু নিয়ে এসে আমার গলায় ধরে বলে ‘কি বললি? শুনতে পাইনি’ বললাম অল্প স্বরে ‘বন্ধ করব না। মেরে ফেলতে চাইলে মারো। আম্মাকে তো আমার সামনে মারার চেষ্টা করেছ। শিউরলি এটাও পারবে। আব্বা চাকুটা ছুড়ে মাটিতে ফেলে দিল। কিছু না বলে চলে যায় ঘরে…।”
আকতার জাহানের মৃত্যুর ঘটনায় গত ১০ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাতপরিচয় আসামির কথা উল্লেখ করে মতিহার থানায় একটি মামলা করেন আকতার জাহানের ছোট ভাই কামরুল হাসান রতন। এতে কামরুল হাসান উল্লেখ করেন, ‘সুইসাইড নোট থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তিনি (আকতার জাহান) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী/প্ররোচনাকারীদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে মর্জি হয়।’