ঘরে ঢুকল বাস, প্রাণ গেল স্বামী-স্ত্রীর
রাজশাহী নগরীর বহরমপুর রেলক্রসিং এলাকা। সেখানে রেলওয়ের জমিতে টিনের বেড়ার চালাঘরে দুই শিশুপুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন ভ্যানচালক বশির উদ্দিন (৪০)। যাত্রীবাহী চলন্ত বাস ঘরে ঢুকে গেলে ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী রেশমা বেগম (৩৫) নিহত হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকাগামী কেয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের ওই ঘর চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে থাকা ওই দম্পতির দুই শিশুপুত্র রাহাত (৫) ও আলীফ (৭)।
এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১৫ জন। এর মধ্যে রয়েছেন পাশের ঘরের চারজন ও নয়জন বাসযাত্রী।
আহত ব্যক্তিরা হলেন—রেলওয়ের গেটম্যান দিপু (৪০), তাঁর স্ত্রী চম্পা খাতুন (৩৪), ক্লাবঘরে শুয়ে থাকা মানিক (১৬) ও জাকির (১৯)। এ ছাড়া বাসযাত্রী মামুন (১৯), হৃদয় (২২), রজব (১৮), ফিরোজ (৪১), শরীফ (২৪), মামুন (৩০), মানিক (৩১), এমদাদুল (৩৪) ও উত্তম (৫২) আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। আহত ব্যক্তিদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত বাসযাত্রী মামুন ও রজব জানান, রাত ১২টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে কেয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৭২৮৪) একটি বাস। রাত ১০টার দিকে নাচোল থেকে বাসটি ছাড়ার কথা থাকলেও দুই ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। শুরু থেকেই বেপরোয়াভাবে বাসটি চালাতে থাকেন চালক। রাত দেড়টার দিকে বাসটি রাজশাহী শহরে পৌঁছে। তবু গতি না কমিয়ে একইভাবে বাসটি চালাতে থাকেন চালক। বহরমপুর রেলক্রসিং এলাকায় গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি রাস্তার ডান পাশে নেমে পড়ে। বাসটির গতি এত বেশি ছিল যে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। বাসটি পাশের উঁচু ফুটপাত পার হয়ে সিগন্যাল লাইট ভেঙে গিয়ে বাঁ পাশের কয়েকটি ঘর চাপা দেয়। এ সময় ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় বশির উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী রেশমা নিহত হন। তবে অল্পের জন্য বেঁচে গেছে ওই দম্পতির দুই শিশুপুত্র। এতে ওই ঘরের পাশের কক্ষের চারজন ও বাসযাত্রীদের মধ্যে নয়জন আহত হয়েছেন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, হতাহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে বশির ও রেশমার লাশ মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত রেশমার বোন শিল্পী বেগম বলেন, ‘বশির ও রেশমা মারা গেছে। শিশু দুটি এখন কোথায় যাবে? কী খেয়ে বাঁচবে? সর্বনাশা বাস ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে সব শেষ করে দিল।’
এ ঘটনায় আজ বুধবার সকাল ৭টার দিকে স্থানীয় লোকজন রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক কিছুক্ষণের জন্য অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, কেয়া পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস রাত দেড়টার দিকে রাজশাহী নগরীর বহরমপুর রেলক্রসিং এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ডান পাশের বাড়িঘর চাপা দেয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে। তাঁকে আটকের চেষ্টা চলছে।