স্তন ক্যানসারে প্রতি বছর ১৭ হাজার নারীর মৃত্যু
দেশে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর ১৭ হাজার নারী মৃত্যুবরণ করেন। তবে কেবল নারী নয়, পুরুষরাও আক্রান্ত হচ্ছে এ রোগে। দেশে প্রতি ১০০ জন নারী রোগীর বিপরীতে তিনজন পুরুষ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
আজ মঙ্গলবার স্তন ক্যানসার মাস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সাতক্ষীরা ক্যানসার কেয়ার অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার এ কর্মসূচির আয়োজন করে। আলোচনা সভার আগে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব চত্বর থেকে এক শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। পরে সদর উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এক আলোচনা সভা। এতে যোগ দেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারী-পুরুষ।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন চিকিৎসক ও ক্যানসার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
বক্তারা বলেন, ‘এখন থেকে সচেতন না হলে এই রোগ বিস্তার রোধ কঠিন হয়ে পড়বে। এখনকার দিনে ক্যানসারের সফল চিকিৎসা আছে। বাংলাদেশও এ ব্যাপারে বহুদূর এগিয়ে গেছে। আমাদের সমাজের নারীরা লোকলজ্জার কারণে অনেক সময় এই রোগ সম্পর্কে তাঁর পরিবারকে জানান না। ফলে রোগটি চরম অবস্থায় চলে যায়। এমন একসময় আসে, যখন তাঁর জীবন রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ে। এখন কেবল নারীদের নয়, পুরুষদেরও স্তন ক্যানসার দেখা দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা। এ জন্য প্রত্যেককে সতর্ক হতে হবে।
বক্তারা বলেন, ‘এখন ২০ বছর থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যেও মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ এমন একটি সময় ছিল, যখন বলা হতো ক্যানসার আক্রান্ত হন ৬০ অথবা তারও বেশি বয়সের মানুষ।’
আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আরো বলেন, ‘এখন সমাজের দরিদ্র শ্রেণির পরিবারেও ক্যানসার বাসা বেঁধেছে।’ বাংলাদেশে নারী ক্যানসার রোগীদের মধ্যে ২৫ ভাগেরও বেশি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত বলেও জানানো হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ক্যানসার ব্যাধি নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না। বরং সাহসের সঙ্গে তা মোকাবিলা করতে হবে।’
সাতক্ষীরায় ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরো বলেন ‘সরকারের খাসজমি দেওয়ার চেষ্টা করব। সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ হয়েছে, সম্প্রতি কালেকটরেট স্কুল হয়েছে, একটি ক্যানসার হাসপাতালও প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।’
আলোচনা সভার সভাপতি ইএইচআরডি ক্যানসার সাপোর্ট সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক অধ্যক্ষ রোকেয়া রুমী বলেন, ‘আমি ক্যানসার রোগীদের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। সাতক্ষীরার কমপক্ষে ৩০ জন ক্যানসার রোগীকে সাপোর্ট দিচ্ছি। এতে আমি গর্বিত। সাতক্ষীরায় একটি ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলে এখানকার মানুষ আলোর দিশা খুঁজে পাবেন।’
সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ক্যানসারকে ভয় পাওয়া নয়, এখন দরকার সচেতনতা ও নিয়মিত পরীক্ষা।’
ক্যানসার কেয়ার ওয়েলফেয়ারের মহাসচিব ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে একটি ক্যানসার হাসপাতাল গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।’ তিনি রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. তাওহিদুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বাচিপ সভাপতি ডা. মোকলেছুর রহমান, সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ সহিদুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম, ফিফা রেফারি তৈয়ব হাসান বাবু, মহিলা পরিষদের সম্পাদক জোসনা দত্ত, শাহানা মহিদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য সচিব মুশফিকুর রহমান মিল্টন প্রমুখ।