নোট দেওয়ার কথা বলে ছাত্রীকে আটকে ধর্ষণ!
রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকার একটি স্কুলে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্কুলের অফিসকক্ষের ভেতরে ওই ছাত্রীকে শিক্ষক ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষকের নাম সুজন মিয়া। তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সুজন পল্লবীর ওই স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।
ওই ছাত্রী স্কুলে কোচিং ক্লাস করতে বুধবার সন্ধ্যায় স্কুলে গিয়েছিল। কোচিং ক্লাস রাত ৮টায় শেষ হয়ে যায়। এরপর ওই ছাত্রী বাসায় ফিরতে চাইলে শিক্ষক সুজন মিয়া তাকে কোচিংয়ের নোট দেওয়ার কথা বলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর সব ছাত্রছাত্রী চলে যাওয়ার পর ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে বুধবার রাতেই পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ওই ছাত্রীর বাবার পেশায় একজন গাড়িচালক। তাঁরা পল্লবী এলাকায় বসবাস করেন। ওই এলাকার একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে ওই ছাত্রী পড়াশোনা করে। স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. সুজন মিয়া (২৪) বেশ কয়েক দিন ধরে ওই ছাত্রীকে স্কুলে কোচিং করার সময় বিভিন্ন খারাপ প্রস্তাব দিয়ে উক্ত্যক্ত করতেন।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টার সময় ওই ছাত্রী স্কুলে কোচিং করার জন্য যায়। কোচিং শেষে রাত ৮টার দিকে অন্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ওই ছাত্রী বাসায় যাওয়ার সময় শিক্ষক সুজন কোচিংয়ের নোট দেওয়ার কথা বলে তাকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্কুলের অফিস রুমের দরজা আটকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন।
এ সময় ওই ছাত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে সুজনকে আটক করে এবং পল্লবী থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুজনকে গ্রেপ্তার করে।
এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার ওই ছাত্রীর বড় ভাই এনটিভি অনলাইনকে বলেন, তাঁর ছোট বোন মাত্র নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সে অনেক মেধাবী ছাত্রী। কিন্তু গতকালের ঘটনার পর এখন তাঁদের পরিবারের ওপর দিয়ে অনেক বড় ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ঘটনার পর তাঁর বোনের সঙ্গে এখন পর্যন্ত তাঁর কথা বলার সুযোগ হয়নি। আজ তাঁর বোন এবং ওই শিক্ষককে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আদালত থেকে ফিরে আসার পর বোনের কাছে থেকে ঘটনা শুনে তারপর বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান তিনি।
ওই ছাত্রীর পরিবার পল্লবীর যে বাসায় ভাড়া থাকে, ওই বাসার মালিক শ্যামল কান্তি দাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ওই ছাত্রীর বাবা পেশায় একজন গাড়িচালক। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে অনার্স শেষ করেছে। ছোট মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। একমাত্র ছেলে সেও কলেজে পড়াশোনা করে। তাঁর স্ত্রী গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এই বাসায় তাঁরা প্রায় ২৫ বছর ধরে ভাড়া থাকেন।
শ্যামল কান্তি দাস আরো বলেন, ওই ছাত্রীর বাবা-মা অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে তিন সন্তানকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। কিন্তু এই ঘটনার কারণে তাঁদের পরিবারে এখন নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর বড় বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। এই ঘটনার কারণে বিয়েটা ভেঙে যাওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই এই ঘটনার সঠিক বিচারের দাবি জানান তিনি।
ঘটনা সম্পর্কে জানাতে আজ মিরপুর পল্লবী এলাকার ওই স্কুলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
মো. তিসটি মিয়া নামের ওই এলাকার স্থানীয় এক ব্যক্তি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্কুলের ভেতর থেকে একটি মেয়ের চিৎকারের শব্দ পাওয়া যায় এবং স্কুলের সব কক্ষের লাইট বন্ধ দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। এরপর স্থানীয়রা জোর করে স্কুলের ভেতর ঢুকে ওই ছাত্রী ও শিক্ষককে আপত্তিকর অবস্থায় পায়। এ সময় ওই ছাত্রী উপস্থিত সবার কাছে অভিযোগ করে যে তাকে ধর্ষণ করেছেন ওই শিক্ষক। তখন স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে শিক্ষক এবং ওই ছাত্রীকে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মামলার পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় রাতেই শিক্ষক সুজন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে নেওয়া হয়। আদালতে ওই ছাত্রী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দি দিয়েছে। আর ওই শিক্ষককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।