সিরাজগঞ্জে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি, একজনের মৃত্যু
সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনদিনে ৫০ হাজার পরিবারের আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। আজ মঙ্গলবার জেলার চৌহালীতে সাপের কামড়ে কদভানু (৫২) নামে এক নারী মারা গেছেন।
পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আড়াই হাজার হেক্টর ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
বানভাসিরা জানান, বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। ঘরের মধ্যে গলাপানি। তাঁরা বাড়ির কোনো জিনিসপত্র বের করতে পারেননি। শুধু ঘরের টিন খুলে এনে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। যাওয়ার মতো জায়গা নেই। তাই বাঁধে পলিথিন টানিয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করছেন। সময়মতো রান্না করতে না পারায় অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, এরই মধ্যে পাঁচ উপজেলায় ১৭০ টন চাল ও সাড়ে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজকের মধ্যেই বিতরণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, নদীর পানি বেড়েই চলেছে। পানিবন্দি মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসন থেকে ১৭০ টন চাল ও নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, কোনো অবস্থাতেই যেন বাঁধ এলাকায় কোনো ধস বা ভাঙন সৃষ্টি না হয় সে জন্য পাউবোকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। সর্বোপরি বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য শুকনো খাবার, মোমবাতি, দেয়াশলাই প্যাকেট এরই মধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে বন্যার পানিতে ভেসে আসা এক সাপের কামড়ে কদভানু (৫২) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল ঘোড়জান ইউনিয়নের কান্দা ঘোড়জান গ্রামে কদভানুর মৃত্যু ঘটে। কদভানু ওই গ্রামের আবদুর রশিদ ফকিরের স্ত্রী।
ঘোড়জান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমজান আলী জানান, বন্যাকবলিত কদভানু তাঁর পরিবারসহ সোমবার রাতে নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। রাতের কোনো একসময় বন্যার পানিতে ভেসে আসা বিষধর সাপ তাঁকে ছোবল দেয়। চারদিকে বন্যার পানি হওয়ায় রাতে তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।