নিহত মাহফুজের বিরুদ্ধে বলাৎকারের মামলা, চাঁদাবাজির অভিযোগ
নরসিংদীতে নিহত কলেজছাত্র মাহফুজ সরকার ও তাঁর বন্ধু শাহীনের বিরুদ্ধে বলাৎকারের মামলা করেছেন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া রাবেয়া ইসলাম রাবু। গত সোমবার নরসিংদী সদর মডেল থানায় এই মামলা করা হলেও পুলিশ তা গোপন রাখে।
রাবুর অভিযোগ, দুই আসামি আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁর ১২ বছরের ছেলেকে বলাৎকার করেন।
এদিকে মাহফুজকে হত্যার পর তাঁর দেহ ছয় টুকরো করে নদীতে ফেলে দেওয়ার ১০ দিনেও পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। নিহত মাহফুজ সরকার নরসিংদী শহরের বৌয়াকুর এলাকার আবদুল মান্নান সরকারের ছেলে। তিনি নরসিংদী সরকারি কলেজের বিএ (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র ছিলেন। গত ২৬ মে শুক্রবার বিকেলে মাহফুজ প্রতিদিনের মতো বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর মাহফুজ আর বাড়ি ফেরেননি।
মাহফুজ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রাবেয়া ইসলাম রাবু গত মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। রাবুর তথ্য মোতাবেক, নরসিংদী থানার পুলিশ মাহফুজকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও তাঁর ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় উদ্ধার করেছে। রাবু প্রবাসী আল-মামুনের স্ত্রী। দুই সন্তান নিয়ে রাবু নরসিংদী শহরের রাঙামাটিয়া মহল্লার শাহ আলম মোল্লার মালিকানাধীন বাড়ির পঞ্চম তলায় ভাড়া থাকতেন। নরসিংদী শহরের ইনডেক্স প্লাজায় এমডি গার্মেন্টস নামে রাবুর একটি দোকান রয়েছে।
মাহফুজের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিলেন রাবু!
পুলিশ ও ইনডেক্স প্লাজার একাধিক দোকান মালিক ও কর্মচারী জানিয়েছেন, মাহফুজ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছিলেন। তাঁর নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি ও তাঁর বন্ধুরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রায়ই মার্কেটে এসে চাঁদাবাজি ও লুটতরাজ করতেন। মাহফুজ রাবুর দোকান থেকে জোর করে কাপড়চোপড় নিয়ে যেতেন। একপর্যায়ে মাহফুজ বন্ধুবান্ধব নিয়ে রাবুর ভাড়া বাসায় গিয়ে উত্ত্যক্ত ও শারীরিকভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করতেন। কিছুদিন আগে মাহফুজ ও তাঁর বন্ধু শাহীন রাবুর ১২ বছর বয়সী ছেলেকে বাড়িতে একা পেয়ে বলাৎকার করেন। এর পর থেকে সন্তানের ওপর নির্যাতনের বিচার ও প্রতিশোধ নিতে ২৬ মে শুক্রবার রাতে মাহফুজকে বাসায় ডেকে আনেন রাবু।
ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে পূর্বপরিকল্পিতভাবে রাবু মাহফুজকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় রাবুর ভাগ্নে ও দোকানের কর্মচারী শাহাদাৎ হোসেন রাজু পেছন দিক থেকে মাহফুজকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। মাহফুজের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ও রাজু মিলে মৃতদেহ ছয় টুকরো করে ঘরে থাকা ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখেন। পরের দিন শনিবার ফ্রিজ থেকে খণ্ড-বিখণ্ড দেহ একটি ট্রলিব্যাগে ঢোকান। এরপর নৌকা ঘাটে গিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ট্রলি ব্যাগভর্তি লাশটি নিয়ে পাশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দী এলাকায় মেঘনা নদীর গভীর পানিতে ফেলে দেন।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আলম জানান, মাহফুজ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছিলেন। তাঁর নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ইনডেক্স প্লাজার অনেক ব্যবসায়ী ও কর্মচারীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মাহফুজ হত্যাকাণ্ডে রাবেয়া ইসলাম রাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। লাশ উদ্ধারের জন্য আজ ঘটনাস্থল শনাক্ত করার পর ডুবুরিদল নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু লাশের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তবে পাশের থানাগুলোতে বেতার বার্তা পাঠানো হয়েছে।