নিহত আরেক ‘জঙ্গি’র নাম আশরাফুল, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেণীপুর গ্রামের ‘জঙ্গি আস্তানা’য় অভিযানে নিহত আরেকজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আজ শুক্রবার পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নিশারুল আরিফ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, ‘এ অভিযানে নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজন একই পরিবারের সদস্য। বাকি একজনকেও প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
‘এই জঙ্গির নাম আশরাফুল ইসলাম। তিনি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তিনি বড় মাপের জঙ্গি। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার দেবীগঞ্জ গ্রামে।’
তবে আশরাফুল কোন জঙ্গি দলের সদস্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি।
কিছুদিন আগে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিময় হওয়া জঙ্গি তালিকার মধ্যে আশরাফুল ইসলাম নামে একজনের নাম রয়েছে। এই আশরাফুল সেই আশরাফুল কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘এখনই এ ব্যাপারে বলা যাচ্ছে না। পরে সব তদন্ত করে বলা যাবে।’
এ সময় পুলিশের এই কর্মকর্তা ‘অপারেশন সান ডেভিল’ সমাপ্তির কথা জানান। এ সময় সেখানে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভুঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ‘অপারেশন সান ডেভিল’ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার আগে মাইকিং করে সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি ১৪৪ ধারা এখনো বহাল আছে। ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে বোমা, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। পরে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়।
অভিযানের মধ্যে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী এসে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই আস্তানায় আর কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে সেখান থেকে ১১টি বোমা, একটি পিস্তল, দুটি গুলি ও একটি ম্যাগাজিন, দুটি সুইসাইডাল ভেস্ট, কিছু গান পাউডার, সার্কিটসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও জিহাদি বই, পুলিশের পোশাকের মতো কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে।’
এরই মধ্যে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল সেগুলো নিষ্ক্রিয় করেছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেণীপুর গ্রামের ‘জঙ্গি’ সাজ্জাদ আলীর বাড়িটিতে তিনটি কক্ষ রয়েছে।
গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে উপজেলার বেণীপুর গ্রামের সাজ্জাদ আলীর বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সকাল ৮টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের শুরুতেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দেয়াল ধসিয়ে দিতে মাটির তৈরি ওই বাড়িতে পানি দিতে শুরু করেন। এ সময় জঙ্গিরা বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে নারীসহ একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন। এ সময় ওই পরিবারের দুই শিশুকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অভিযানে নিহত হয়েছেন সাজ্জাদ আলী মিষ্টু (৫০), তাঁর স্ত্রী বেলী বেগম (৪৫), ছেলে আল-আমিন (২০) ও মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭)। কিন্তু তাঁদের কারোরই লাশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন নিহত সাজ্জাদের মা মারজাহান বিবি (৮০)।
চারজনের পরিচয় নিশ্চিত হলেও পুলিশ আরেকজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারছিলো না। আজ তাঁর পরিচয়ও জানালো পুলিশ।
আজ সকালে বাড়ির সামনে পড়ে থাকা পাঁচটি লাশের সুরতহাল তৈরি করেছে সিআইডি। সেখান থেকে লাশগুলো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় পরিবহন দুটি ভটভটি করে লাশগুলো পাঠানো হয়।
‘অপারেশন সান ডেভিল’-এ অংশ নিতে ঢাকা থেকে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এখানে এসে পৌঁছে। কিন্তু আলো-স্বল্পতার কারণে অভিযান শুরু করতে পারেনি।
এদিকে সাজ্জাদ আলী মিষ্টুর মা মারজাহান বিবি জানিয়েছেন, তিনি পরিবারের সদস্যদের লাশ গ্রহণ করবেন না।
মারজাহান বিবি বলেন, মানুষ হিসেবে সবার জন্যই মন কাঁদছে। কিন্তু কোনো দেশবিরোধী সন্তানের লাশ গ্রহণ করবেন না তিনি। মারজাহান বিবি মনে করেন, কেউ খারাপ কাজ করলে তাঁর শাস্তি হয়, তাঁর ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা তেমন শাস্তিই পেয়েছে।
মারজাহান বিবি জানান, তিনি লাশ নেবেন কি-না, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁর কাছে এখনো কিছু জানতে চায়নি। তবে জানতে চাইলে তিনি সাফ জানিয়ে দেবেন, কারো লাশ তিনি নেবেন না।