সিসি ক্যামেরার কল্যাণে মায়ের কোলে ফিরল শিশু সুমাইয়া
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে অপহরণের ২৫ দিন পর পাঁচ বছরের শিশু সুমাইয়াকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় অপহরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর কদমতলী থানার জুরাইনের রহমতবাগ এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সুমাইয়ার বাবা জাকির হোসেন এনটিভি অনলাইনের কাছে মেয়েকে ফিরে পাওয়ার ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। হাসিমুখে এনটিভি অনলাইনকে তিনি জানান, কামরাঙ্গীরচর এলাকার একটি স্টিল কারখানায় খুব অল্প বেতনে চাকরি করেন তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলায়। চাকরির কারণেই স্ত্রী মুন্নি বেগম ও পাঁচ বছর দুই মাস বয়সী মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকার ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে কুঁড়ারঘাট নামক এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুব ভালো সংসার চলছিল তাঁর। কিন্তু গত ২ এপ্রিল তিনি কর্মস্থলে ছিলেন। সে সময় সুমাইয়া তার মায়ের সঙ্গে বাসাতেই ছিল। বিকেলে সুমাইয়ার মা ঘরে সংসারের নানা রকম কাজ করছিলেন। আর এ সময় সুমাইয়া বাইরে খেলা করছিল। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় শিশুটি। এরপর স্ত্রী মুন্নি বেগম তাঁকে (জাকির হোসেন) সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার পর ফোন করে বিষয়টি জানান।
জাকির জানান, মেয়ে নিখোঁজের খবর পেয়ে দ্রুত কারখানা থেকে বাসায় চলে আসেন। বাসায় ফিরে এসে তাঁর আশপাশের প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে পুরো চর এলাকা চষে বেড়ান। কিন্তু কোথাও মেয়েকে না পেয়ে কামরাঙ্গীরচর এলাকার সব মসজিদের মাইক থেকে বারবার তাঁর মেয়ের হারানোর বিষয়ে মাইকিং করা হয়। কিন্তু তাতেও মেলেনি হদিস। অবশেষে সেই রাতেই কামরাঙ্গীরচর থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরের দিন সকালে কামরাঙ্গীরচর থানায় মেয়ে হারানোর বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। ঘটনার পর থেকে কামরাঙ্গীরচর থানার পুলিশ, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা সুমাইয়াকে খুঁজতে শুরু করেন।
সুমাইয়ার বাবা জানান, শিশু নিখোঁজের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ তাঁর বাড়ির রাস্তার পাশের বাড়িতে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসি) ক্যামেরা লাগানো দেখতে পায়। এরপর সেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে দেখা যায়, এক নারী সুমাইয়াকে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর সেই নারীর পরিচয় জানা যায়। তাঁর নাম সাবিনা আক্তার বৃষ্টি।
জাকির হোসেন আরো বলেন, সাবিনা আক্তার বৃষ্টি নামের যে নারীকে সুমাইয়াকে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল, তিনি প্রায় মাস ছয়েক আগে তাঁদের বাসার পাশের একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন।
জাকির বলেন, মেয়ের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় এতদিন প্রায় পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী মুন্নি। আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত ৫টার দিকে পুলিশ তাঁকে ফোন করে জানায় যে তাঁর মেয়েকে পাওয়া গেছে। আর অপহরণকারীসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এরপর আজ সকালে পুলিশ সুমাইয়াকে তাঁদের কোলে তুলে দেয়। ২৫ দিন পর হারানো মেয়েকে খুঁজে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা তিনি।
সুমাইয়ার মা মুন্নি বেগম এনটিভি অনলাইনকে জানান, সুমাইয়াকে হারিয়ে তাঁর দিন-রাত কখন, কীভাবে কেটে গেছে, কিছুই বুঝতে পারেননি। সব সময় শুধু আল্লাহর কাছে বলেছেন, আল্লাহ যেন তাঁর সুমাইয়াকে আবার ফিরিয়ে দেন। আল্লাহ তাঁর কথা শুনেছেন, মেয়েকে বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য পুলিশ, সাংবাদিকসহ সবাইকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
এ বিষয়ে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের (ডিসি) উপকমিশনার মো. ইব্রাহিম খান জানান, বুধবার রাত ২টার দিকে কদমতলী থানা এলাকার রহমতবাগ দক্ষিণ দনিয়া কামালের বাড়ি থেকে সুমাইয়াকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সাবিনা আক্তার বৃষ্টি ও সিরাজ মিয়া ওরফে বাবুল নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।