কবর থেকে তুলে রাউধার লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত
রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ও মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে দ্বিতীয়বারের মতো লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।
পরে রাজশাহী মহানগরীর হেতেমখাঁ গোরস্থানে আগের কবরেই রাউধার লাশ আবার দাফন করা হয়। এ সময় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারাসহ রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ উপস্থিত ছিলেন। দাফনের পর তিনি মেয়ের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া করেন।
এর আগে সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রক্তিম চৌধুরীর উপস্থিতিতে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা রাউধার কবর থেকে লাশ তুলে রামেকের মর্গে নিয়ে যান। সেখানে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে।
ময়নাতদন্ত শেষে বোর্ডের প্রধান সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আমিরুল চৌধুরী বলেন, ‘কিছুটা ডিকম্পোজড (অর্ধগলিত) ও কিছুটা প্রিজার্ভড (সংরক্ষিত) অবস্থায় আমরা লাশটি পেয়েছিলাম, যা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে। তবে ঢাকা থেকে ভিসেরাসহ অন্য প্রতিবেদন না আসায় আমরা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে কোনো মন্তব্য লিখিনি।’ তিনি বলেন, ‘কিছুটা বোন, কিছু সফট টিস্যু আমরা প্রিজার্ভ করেছি। এই বিষয়টি খুবই চাঞ্চল্যকর, তাই আমরা কেমিকেল রিপোর্টসহ সবগুলোকে এক করে থানার মাধ্যমে ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেব।’
লাশের গলা কেমন পেয়েছেন, এমন প্রশ্নে ডা. আমিরুল চৌধুরী বলেন, যে জায়গাটি নিয়ে আগে রিসার্চ হয়েছে। তাই বডির ওই জায়গাটি বেশি গলিত। তবে প্রথম ময়নাতদন্তের সঙ্গে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের কোনো মিল আছে কি না, এমন প্রশ্নের ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।
ময়নাতদন্তকালে বোর্ডের অন্য দুই সদস্য নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহবুব হাফিজ ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৯ মার্চ রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়ায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধা আতিফের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাউধা এ কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। নীলনয়না রাউধা ছিলেন মালদ্বীপের একজন উঠতি মডেল। মাত্র ২১ বছরের রাউধার ছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
রাউধার লাশ উদ্ধারের দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছিল, তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় ওই দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে নগরীর শাহ মখদুম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। এরপর রামেকের মর্গেই রাউধার লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তে একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল। বোর্ডের তিন সদস্যের দুজনই ছিলেন ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। ময়নাতদন্তের পরদিনই তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। পরে মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে গত ১ এপ্রিল রাউধার লাশ দাফন করা হয়। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, রাউধাকে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় রাউধার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। সিরাতের বাড়ি ভারতের কাশ্মীরে। গত ১৩ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে দুই মামলা তদন্তের জন্য সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক মামলা দুটি তদন্তের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পেয়েই তিনি রাউধার লাশের পুনরায় ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেন। আদালতে সেই নির্দেশে দাফনের ২৩ দিন পর রাউধার লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হলো।