মুফতি হান্নানের দিন গণনা শুরু হয়েছে বুধবার
হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীকে মৃত্যুপরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে। এখন তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য সাত কর্মদিবস সময় পাবেন।
মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জানান, বুধবার থেকেই এই সাতদিন সময়ের গণনা শুরু হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি দুজন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চান তবে আদালতের আদেশ যথাসময়ে কার্যকরে কারা কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কাশিমপুর কারাগারে ৪৯তম কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষীদের মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী কুচকাওয়াজ ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে তিনি এসব বলেন।
এদিকে, সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি আবদুল হান্নান ও তাঁর সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের মৃত্যু পরোয়ানা গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছেছে। বিচারিক আদালতের ওই পরোয়ানা বুধবার দিবাগত রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। রাতেই তাদের তা পড়ে শোনানো হয়। রায় শোনার পর তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেন।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান জানান, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুল এ কারাগারে বন্দি আছেন। গতকাল রাতে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের মৃত্যু পরোয়ানা এ কারাগারে এসে পৌঁছায়। এর আগে মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলের রিভিউ আবেদন খারিজের রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি মঙ্গলবার মধ্যরাতে কাশিমপুর কারাগারে এসে পৌঁছানোর তা তাদের পড়ে শোনানো হয়। এ সময় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে মুফতি হান্নান ও অপর আসামি শরীফ শাহেদুল বিপুল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেন।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। এতে পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত এবং আনোয়ার চৌধুরীসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। মামলার রায়ে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত পাঁচ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুলকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন। পরে গত বছরের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেন। আপিলের শুনানি শেষে চূড়ান্ত রায়ে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তিন আসামির সর্বোচ্চ রায় বহাল রাখেন। গত ১৭ জানুয়ারি এ রায় প্রকাশের পর আসামিরা রিভিউ করেন। পরে ১৯ মার্চ দেওয়া রিভিউ খারিজের রায় গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন বিচারিক আদালত। ওই মামলায় তাঁর আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন। এই হুজি নেতার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। ২০০০ সালের ২০ জুলাই সেই কোটালীপাড়াতেই শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নান ওই মামলারও আসামি। গত ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।