সিফাতের মৃত্যুরহস্য উৎঘাটনে ব্যর্থ তদন্ত কর্মকর্তারা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাতের মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উৎঘাটনে চার তদন্ত কর্মকতা ব্যর্থ হয়েছনে বলে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন।
আজ সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৩-এর বিচারক সাঈদ আহমেদ রায় দেওয়ার সময় পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন।
বিচারক বলেন, ‘এ মামলা চারজন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। চারজন তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে তদন্ত করেন, আমার কাছে মনে হয় প্রকৃত রহস্য উৎঘাটনে ব্যর্থ হয়েছেন। আর অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণের মধ্যে দেখা গেছে কোনো দেখা সাক্ষী নেই, শুধু পারিপার্শ্বিক সাক্ষী আছে এবং এ সাক্ষীগুলাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তবে আদালতে সাক্ষীদের ১৬১ ধারার সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়েছে, যার আইনগতভাবে আমি রায়ের ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে পারব না। তবে অন্যান্য সাক্ষীর সঙ্গে এ সাক্ষী মিল করতে গিয়ে দেখলাম যে মামলার মোটিভ অন্যদিকে চলে যাওয়ার সম্ভানা তৈরি হয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া বিচারক তাঁর রায়ে বলেছেন, যৌতুক চেয়ে সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে তা প্রমাণিত হয়নি।
বিচারক সিফাতকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় (আত্মহত্যায় প্ররোচনা) স্বামী মোহাম্মদ আসিফ প্রিসলিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া বাকি তিন আসামিকে খালাস দিয়েছেন।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন—সিফাতের শ্বশুর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার নাজলী ও প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান।
এর মধ্যে নিহতের স্বামী আসিফ কারাগারে ও বাকিরা জামিনে আছেন। বিচারক রায়ে আসিফকে কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের অতিরিক্ত কারাদণ্ড দিয়েছেন।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন রমজানের বাড়িতে ওয়াহিদা সিফাতের মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। সিফাত আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রথমে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন দাবি করলেও আদালতের নির্দেশে রংপুর মেডিকেল কলেজের তিন সদস্যের বোর্ড দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আঘাতজনিত কারণে সিফাতের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে।
এ ঘটনায় মহানগরীর রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা এ মামলায় যৌতুকের দাবিতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। বাদীপক্ষের আবেদনে গত বছরের ১২ জুলাই মামলাটি রাজশাহী থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৩-এ স্থানান্তর করা হয়।
এর আগে গত বছরের ২৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আহমেদ আলী চারজনের বিরুদ্ধে রাজশাহী মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি মাহবুব আহমেদ জানান, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৩২ জনের মধ্যে ২২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।