গ্রেনেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় বেঁচে যান ব্রিটিশ হাইকমিশনার
তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যা করার উদ্দেশেই গ্রেনেড হামলা করা হয়। কিন্তু আসামিদের নিক্ষেপ করা গ্রেনেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
গতকাল বুধবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ স্বাক্ষরিত মোট ৬৫ পৃষ্ঠার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
পূর্ণ রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে, যা আসামি রিপন ও বিপুল তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন।
রায়ে বলা হয়, বোমা হামলার পর অনেক মানুষের ভিড়ে আসামিরা আনোয়ার চৌধুরীর অবস্থান পুরোপুরিভাবে শনাক্ত করতে পারেনি। প্রথমবার বোমা হামলার পর চতুর্দিক থেকে আনোয়ার চৌধুরীকে রক্ষা করার জন্য মানুষ ঘিরে রাখে। কিন্তু আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যা করার জন্য পুনরায় গ্রেনেড হামলা করলেও তাঁর শরীরে পড়েনি। তবে গ্রেনেডের স্প্লিনটার গিয়ে আনোয়ার চৌধুরীর শরীরে আঘাত হানে। এ কারণে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী আসামিদের অভিযুক্ত করা হলো।
রায়ে আরো বলা হয়, আসামিদের মধ্যে প্রধান আসামি মুফতি হান্নান গ্রেনেড সরবরাহ করেন। বিপুলের নির্দেশে আসামি রিপন গ্রেনেড হামলা চালান। তাই আসামি মুফতি হান্নান, রিপন ও বিপুলকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার আলোকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।
আদালত বলেন, ‘আসামিদের শাস্তি কমানোর জন্য ভালো কোনো যুক্তি আমরা খুঁজে পাইনি। এ কারণে আসামিদের আপিল বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হলো।’
গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে আজ।
প্রধান বিচারপতির নেত্বেত্ব চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। তবে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন আসামিদের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী।
মুফতি হান্নান ছাড়া আসামিরা হলেন শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন।
গত ৭ ডিসেম্বর আসামিদের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।
মুফতি হান্নানের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
মুরাদ রেজা জানিয়েছেন, আপিলের এ রায়ের ফলে এই তিন আসামির দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকল না। তবে আইনজীবী মোহাম্মদ আলী বলেছেন, আসামিরা চাইলে এক মাসের মধ্যে রিভিউ করতে পারবেন।
গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে দণ্ড ঘোষণা করেন। রায়ে মুফতি আবদুল হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসির দণ্ডাদেশ ও দুজনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন।
ঘটনার দিন অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই মুফতি হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মঈনউদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়।
বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এ ছাড়া মামলার অন্য দুই আসামি মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ও মুফতি মঈনউদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হলে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। প্রায় সাত বছর পর গত ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।