কুড়িগ্রামের রেলপথ, অবহেলার আরেক নাম!
কুড়িগ্রাম জেলায় যাত্রীদের চলাচলের জন্য ট্রেন আছে মাত্র একটি। ট্রেন চলাচলের জন্য রেলপথ থাকলেও অবহেলা ও বরাদ্দের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করতে হচ্ছে জেলার বাসিন্দাদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবহেলার কারণেই কুড়িগ্রাম রেলপথ ভালো হচ্ছে না। যুক্ত হচ্ছে না নতুন ট্রেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরের সীমান্ত-ঘেঁষা জেলাটির প্রায় ২০ লাখ মানুষের জন্য বরাদ্দ আছে মাত্র একটি লোকাল ট্রেন। তা চলে ২৫ কিলোমিটার বেগে। তাই অনেকেই ট্রেনটিতে যাতায়াত করেন না।
জেলার ভেতরে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার রেলপথের সাতটি স্টেশনের অবস্থাও একেবারে নাজুক। জোড়াতালি দিয়ে চলছে সেগুলো। বেশির ভাগ স্টেশনেই নেই টিকেট কাউন্টার। ট্রেনেও থাকে না চেকার। তাই টিকেট ছাড়াই ট্রেনে ওঠেন অনেকেই।
এদিকে, তিস্তা-কুড়িগ্রাম যে রেলপথ ও রেলসেতু রয়েছে সেগুলো নিয়েও বিস্তর অভিযোগ স্থানীয়দের। রেলপথ ও সেতুতে স্লিপার হিসেবে লোহার পাতের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের ফালি। জেলার টগরাইহাট রেলস্টেশনের কাছে জোতগোবর্ধন এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার রেলসেতুর স্লিপারে দেওয়া হয়েছে বাঁশ। এ ছাড়া বাঁশের ফালি লাগানো হয়েছে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎসংলগ্ন মুক্তারাম ত্রিমোহনী এলাকায় একটি বক্স কালভার্টের ওপরেও।
রেলপথ ও রেলসেতুতে বাঁশের ফালি দেওয়ার পাশাপাশি লাইনেও ঠেস দেওয়া হয়েছে গাছের ডাল। এ ঘটনা ঘটেছে তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলপথের দুদিকে। তাই ঝুঁকি থাকায় ওই রেলপথে ট্রেন নিয়ে যেতেও চান না চালকরা।
অবহেলিত অঞ্চলে ট্রেনের সমস্যা কাটিতে উঠতে কুড়িগ্রামের রমনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস নামে আন্তনগর ট্রেন দাবি অনেক দিনের। এ নিয়ে আন্দোলন করছে ‘রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি’ নামে একটি সংগঠন। তাদের দাবির পরেই তিস্তা থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা স্টেশন পর্যন্ত একটি ট্রেন দেওয়া হয়েছে। তবে অবহেলা কাটেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রেনের একজন চালক বলেন, ‘তিস্তা থেকে কুড়িগ্রাম হয়ে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৫৭ কিলোমিটার রেলপথ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। চলাচলের ঝুঁকি থাকলেও ওপরের নির্দেশে আমাদের ট্রেন চালাতে হচ্ছে।’
লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রেলপথে গাছের ডাল ও সেতুতে বাঁশ ব্যবহার করায় কোনো সমস্যা নেই। সাধারণত বড় সেতুতে কাঠের স্লিপার স্থানচ্যুত না হওয়ার জন্য লোহার পাত ব্যবহার করি। কিন্তু তিস্তা-কুড়িগ্রাম রেলসেতুগুলো ছোট হওয়ায় সেখানে বাঁশের ফালি দেওয়া হয়েছে।’ এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় স্থানীয়ভাবে এ কাজগুলো করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথের বিষয়টি স্বীকার করে প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম আরো বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে ওই পথে ২৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলছে। রেলপথ সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো বরাদ্দ আসেনি। তাই রেললাইন সোজা রাখতে গাছের ডাল দিয়ে ঠেস দেওয়া হয়েছে।’
কুড়িগ্রাম রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ নলেজ বলেন, ‘আমরা কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা রুটে ট্রেন চালু এবং চিলমারী থেকে সুন্দরগঞ্জে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় তিস্তা সেতুতে রেললাইন সংযোগের দাবি করে আসছি। দাবির মুখে রেলের মহাপরিদর্শক আকতারুজ্জামান গত মাসে রেলপথ পরিদর্শন করেন। তিনি রেলপথ সংস্কারসহ আন্তনগর ট্রেন চালুর বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’
নাহিদ নলেজ আরো বলেন, ‘খুব দ্রুত তিস্তা থেকে রমনা পর্যন্ত রেলপথ সংস্কারসহ আমাদের অন্য দাবিগুলো পূরণ করা হোক। তা না হলে এই জেলার মানুষের সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে না।’