দ্রুত অগ্রগতি না হলে ইউক্রেন শান্তি আলোচনা থেকে সরে যাবে যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের শান্তি আলোচনায় দ্রুত অগ্রগতি না হলে কয়েকদিনের মধ্যেই এই প্রচেষ্টা থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আজ শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস এভাবে চলতে পারি না।” তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের “অন্যান্য অগ্রাধিকারের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন”। খবর বিবিসির।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে এবং শান্তিচুক্তির জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত দেয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শুরুতে দ্রুত সমঝোতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি। ওয়াশিংটন এই ব্যর্থতার জন্য উভয় পক্ষকেই দায়ী করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) প্যারিসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর রুবিও বলেন, “আমাদের এখন খুব দ্রুত, কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে হবে এটা আদৌ সম্ভব কি না। যদি না হয়, তাহলে আমরা এই আলোচনা থেকে সরে যাব”।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বলেছিলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ থামাবো।”
রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “রাশিয়া শান্তি চায় এবং নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষা করেই আলোচনায় বসতে চায়।”

এদিকে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত থাকায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার জানান, রাশিয়ার মিসাইল হামলায় দুইজন নিহত হয়েছেন।
রোমে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, “আমরা আশাবাদী এই ভয়াবহ যুদ্ধের একটি অবসান ঘটবে।”
শান্তি আলোচনার পাশাপাশি ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র একটি খনিজসম্পদ ভিত্তিক বিনিয়োগ চুক্তি নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। যদিও ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প-জেলেনস্কির মধ্যে প্রকাশ্যে বিতণ্ডার কারণে পূর্বের বৈঠক ভেস্তে গিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার দুই দেশ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, ইউক্রেন পুনর্গঠনে একটি যৌথ বিনিয়োগ তহবিল গঠনের ইচ্ছা রয়েছে।
চুক্তির বিস্তারিত এখনও পরিষ্কার নয়, তবে ফাঁস হওয়া তথ্য বলছে খনিজসম্পদের পাশাপাশি জ্বালানি অবকাঠামো ও গ্যাস-তেল খাতও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
জেলেনস্কি এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেতে চেয়েছিলেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনও তাতে রাজি হয়নি।
ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেঙ্কো এক্সে জানান, “এখনও অনেক কাজ বাকি, তবে বর্তমান অগ্রগতি আমাদের আশাবাদী করছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, “আমরা মূলত আগেই যা নিয়ে একমত হয়েছিলাম, এখন তা বাস্তবায়নের পথে।”
ট্রাম্প ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন, “আমাদের একটি খনিজ চুক্তি হয়েছে, যা আগামী বৃহস্পতিবার সই হবে বলে আশা করি।”
ইউক্রেনীয় সংসদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইন্টিগ্রেশন কমিটির চেয়ার ইভান্না ক্লিমপুশ-টসিন্সাদজে বলেন, “চুক্তি অনুমোদনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইউক্রেনের সংসদ।”
এর মধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ঘোষিত ৩০ দিনের ইউক্রেন জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
তবে পেসকভ জানিয়েছেন, পুতিন এখনও নতুন কোনো আদেশ দেননি।
গত বৃহস্পতিবার প্যারিসে রুবিও ও ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা বলেন, “একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, বহুজাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী এবং ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”