হোটেলে ভাড়া মিলছে কান্নার কক্ষ!
অনেক আগে থেকেই এটা জানা কথা, কাঁদলে মনের কষ্ট দূর হয়। সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণা জানাচ্ছে, কান্না নাকি আরো অনেকভাবে শরীর এবং মনের জন্য উপকারী। কিন্তু চাইলেই কি হুট করে কাঁদা যায়? দুঃখ আর দুর্ঘটনার উপলক্ষ ছাড়া কেই-বা কাঁদতে পারে সহজে। কাঁদতে হলে যথার্থ স্থান, কাল এবং উপলক্ষেরও দরকার হয় বৈকি।
কাঁদার জন্য সেই সব উপলক্ষ সৃষ্টি এবং আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে জাপানের টোকিও শহরের দ্য মিতসু গার্ডেন ইয়তসুয়া নামের একটি হোটেল। হোটেলটিতে অনায়াসে কান্নার সকল আয়োজনসহ কক্ষ ভাড়া করতে পারবেন আপনি। না ভুল শুনছেন না। মাত্র সাড়ে ছয় হাজার টাকায় (৮৩ ডলার) মন খুলে কাঁদতে চাইলে চলে যান টোকিওর হোটেলটিতে।
ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চালু হওয়া হোটেলের কক্ষগুলো তৈরি করা হয়েছে প্রধানত নারীদের কথা মাথায় রেখে। আর আগামী জুন থেকে আসছে পুরুষের কান্নার জন্য কক্ষ।
কান্নার আয়োজন করতে কী কী লাগে? এই প্রশ্নটি এবার আপনার মনে আসতেই পারে। হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে দিয়ে রেখেছে সেই সব প্রশ্নের উত্তরও। কান্নার জন্য এই হোটেল কক্ষে রাখা হয়েছে চোখে পানি নিয়ে আসার মতো করুণ সব চলচ্চিত্র, দুঃখের গান, কান্নার জন্য চোখের বিশেষ মাস্ক আর অশ্রুজল মুছতে বিলাসী টিস্যুপেপার ইত্যাদি। আরো রাখা হয়েছে মুখমণ্ডলের প্রসাধনী তোলার ব্যবস্থাও।
এমন ব্যতিক্রম আয়োজন সম্পর্কে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, চলমান জীবনে মানুষের নানামুখী সমস্যায় আক্রান্ত। এই মানসিক চাপ সামাল দিতে কান্নার ভূমিকা অপরিহার্য। চাপ কমাতে ও আবেগজনিত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এই বিশেষ কক্ষগুলো ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। যাতে সবাই এখানে নিজের মতো মন খুলে কাঁদতে পারে।
হোটেলের কান্নাকক্ষে এই বিশেষ সেবাগ্রহীতাদের চোখে পানি আনতে করুণ চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে হলিউডের ‘ফরেস্ট গাম্প’(ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়া এক মার্কিন তরুণের গল্প), দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্র ‘এ মোমেন্ট টু রিমেমবার’ (এই ছবিটি একটি তরুণ দম্পতিকে নিয়ে যাঁরা আলঝেইমার রোগে ভুগছেন), জাপানি চলচ্চিত্র ‘আ টেল অব মারি অ্যান্ড থ্রি পাপিস’ (২০০৪ সালে চুয়েতসু ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পাওয়া এক কুকুর ও ছানাদের নিয়ে)। এ ছাড়া অতিথিদের পছন্দ অনুযায়ী দুঃখ এবং বিরহের চলচ্চিত্রও সরবরাহ করে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
বই পড়ে যাঁরা আবেগাক্রান্ত হন, তাঁদের জন্য হোটেলের কক্ষটিতে আছে, জাপানি ভাষায় লেখা মানগা কমিকসের বই। আর চোখের জল মোছার জন্য রাখা হয়েছে কাশ্মীরি শালের মতো নরম টিস্যু।
হাফিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনের সূত্রে বলা হচ্ছে, হোটেলের কান্নার কক্ষের গুণগান গাইতে ছাপানো হয়েছে পুস্তিকাও। এতে শারীরবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণায় অশ্রু বের হয়ে যাওয়ার উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। পুস্তিকায় লেখা হয়, অশ্রুর প্রধান উপাদান হচ্ছে- লবণ, প্রোটিন এবং লাইসোজম নামের এনজাইম, যেটি একসাথে চোখের পুষ্টি প্রদান এবং চোখের প্রতিরক্ষার কাজ করে। চোখের ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি থেকে অশ্রু বেরিয়ে গেলে এটি চোখ এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার জন্য উপকারী। গবেষণার সূত্র ধরে জানানো হয়েছে অনেক মজার তথ্যও-আমাদের মস্তিষ্কের একই জায়গা থেকে কান্না ও হাসির অনুভূতি আসে। হাসি যেভাবে রক্তচাপ কমিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে, কান্নার কাজও তাই।
পুস্তিকায় কান্নার বিষয়ে জাপানসহ বিভিন্ন দেশের মনোবিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মানসিক চাপ কমাতে, কর্মদক্ষতা বাড়াতে ও শারীরিকভাবে সক্ষম থাকতে হাসির পাশাপাশি কান্নারও সমান ভূমিকা রয়েছে। মানসিক চাপ যে ভারসাম্য নষ্ট করে, কান্নার মধ্য দিয়ে সেই মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার হয়। এ ছাড়া কান্না মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বায়োকেমিস্ট ডা. উইলিয়াম ফ্রাইয়ের একটি কথাকে ওই পুস্তিকার ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘চলমান জীবনের দুঃখ, বেদনা, মানসিক আঘাত দেহে টক্সিন বা বিষাক্ত অণু সৃষ্টি করে আর কান্না এই বিষাক্ত অণুগুলোকে শরীর থেকে বের করে দেয় অথবা বের করে দিতে ভূমিকা রাখে। এ কারণেই দুঃখ ভারাক্রান্ত ব্যক্তি ভালোভাবে কাঁদতে পারলে নিজেকে অনেক হালকা মনে করে।’